সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া অঞ্চলে এবার হলুদের আবাদ ভাল। মাঠ থেকে হলুদ ঘরে তোলা হয়েছে। তবে দেশের করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে হলুদ সেদ্ধ করে শুকানো এবং মেশিনে গুঁড়া করে বাজারজাতে ভাটা পড়েছে। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি হলুদ উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলার গ্রামে। যা বছরে অন্তত ১০ লাখ টন। এই উৎপাদন জেলার মোট উৎপাদনের ৯০ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায় চলতি বছর শিবগঞ্জে ৬২০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে।
শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের গনেশপুর, উথুলি, রথবাড়ি, গরিবপুর, পাইকারপাড়া, শাহপাড়া, ধোন্দাকোলা, নাপাসপুর গ্রামের হলুদের চাষীরা গতবারের চেয়ে এবার বেশি জমিতে হলুদের আবাদ করেছিলেন। কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, হলুদ চাষে সময় বেশি লাগে ৯ থেকে ১০ মাস। এরপর জমি থেকে কাঁচা হলুদ তুলতে হয়। বাছাই ও পরিষ্কার করে চড়া রোদে শুকাতে হয় অন্তত তিন দিন। তারপর মাড়াইকলে নিয়ে গিয়ে গুঁড়া করে আনতে হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কয়েকদিন। হলুদ আবাদ থেকে ঘরে তোলা ও বিপণন পর্যন্ত যে সময় লাগে একই সময়ে সবজির দুটি আবাদ ঘরে তোলা যায়। যে কারণে হলুদ চাষে কৃষকের আগ্রহ কম। বংশপরম্পরায় কিছু কৃষক এই চাষ ধরে রেখেছে।
হলুদ ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন জানান, দেশে ছুটির আগের সময়টায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৮০০ টাকা মণ দরে ৭শ’ মণ কাঁচা হলুদ কিনেছিলেন। নিজ উদ্যোগে সেদ্ধ ও রোদে শুকিয়ে নেন। হলুদ সেদ্ধ ও শুকানোর পর ওজন কিছুটা কমে যায়। তারপর গুঁড়া করে মসলা প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন ৪ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার ৮শ’ টাকা দরে। মশলা কোম্পানির কোন প্রতিনিধি না আসায় এবং হাট বাজার প্রায় বন্ধ থাকায় হলুদ বেচাকেনা করতে পারছেন না। তবে কেউ খুচরায় হলুদ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গরিবপুর গ্রামের শফিকুল জানালেন, মহাস্থানহাট মোকামতলা ও বগুড়া সদরের কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী মিল মালিক এবং মশলা প্রস্তুতকারী কোম্পানির কারণে হলুদ চাষ ধরে রেখেছেন। অনেক কৃষককে তারা আগাম অর্থ দিয়ে হলুদ চাষ করিয়ে নেয়। গ্রামেই শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভ্রাম্যমাণ মেশিন এনে হলুদ গুঁড়া করে নিয়ে যায়। উথুলি গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বললেন, এক হাজার মণ কাঁচা হলুদ কিনেছিলেন। শুধু সেদ্ধ শুকান করে ঘরে রেখেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারজাত করতে পারছেন না। দিনা কয়েক আগে ভটভটিতে (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান) করে কিছু হলুদ মহাস্থান হাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। সামান্য বিক্রি করতে পেরেছেন। বাকিটা ধরে রেখেছেন। বিক্রির জন্য সময়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।