ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধরত দেশগুলোর প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব

যুদ্ধ থামিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ুন

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৫ এপ্রিল ২০২০

যুদ্ধ থামিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ুন

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার বিশ্ববাসীর প্রতি এক আহ্বানে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর অস্ত্র নামিয়ে রেখে মহামারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়া উচিত। গুতেরেস বলেন, সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। এ সময় সিরিয়া, লিবিরা ও ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। গুতেরেস আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস এসব দেশের সামনে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর যুদ্ধ বন্ধ করে এখনই করোনা বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কারণ এই মরণ ভাইরাস যুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর। খবর এএফপির। জাতিসংঘ মহাসচিব এ সময় ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কলম্বিয়া, লিবিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন ও ইয়েমেনে চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান। তিনি বলেন, এসব দেশের সব পক্ষের উচিত সমঝোতায় আসা এবং যুদ্ধ ছেড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা। আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এখন কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন একে-অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা দরকার। কারণ সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। এর আগে বিশ্বের অন্তত ৭০টি প্রথমসারির এনজিও ও খ্রীস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস এই মুহূর্তে সবার মধ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানায়। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যুদ্ধরত দেশগুলোর যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা জরুরী। আমাদের এখন শান্তি স্থাপনে পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসংঘ মহাসচিবের এ আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। সংগঠনটির পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, বিশ্বে যারা এখন যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের এখন অস্ত্র ছেড়ে শান্তির পক্ষে কাজ করা উচিত। আর এ জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও সমাধান দরকার বলে জোসেপ বোরেল মনে করেন। এদিকে যুদ্ধকবলিত ইয়েমেনের ওপর বিমান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত মাস্ক ফেলছে সৌদি আরব। ইয়েমেনের তথ্যমন্ত্রী সাইফুল্লাহ আল সামি এ অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, সৌদি আরব যুদ্ধবিমান থেকে রাজধানী সানায় এবং আরও কয়েকটি শহরের ওপরে প্রচুর পরিমাণে মাস্ক ফেলছে যা ভাইরাস আক্রান্ত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের জনগণের ভেতরে সচেতনতা তৈরি করার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ইয়েমেনের তথ্যমন্ত্রী বলেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট তাদের দেশকে কয়েক বছরের সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক সঙ্কটাপন্ন দেশে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, আরব জোটের যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের জনগণের জন্য মাস্ক বিতরণ করবে- এটি একটি বড় ধরনের আশ্চর্যজনক ঘটনা। যে সৌদি আরব ইয়েমেনের জনগণকে হত্যার জন্য পাঁচ বছর ধরে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে সেই সৌদি আরব জনগণের জন্য মাস্ক সরবরাহ করতে পারে না। ইয়েমেনের জনগণ যাতে এ সমস্ত মাস্ক ব্যবহার না করে সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করার জন্য এবং সম্ভাব্য বিপদ থেকে দূরে রাখার জন্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। সামি বলেন, ইয়েমেনে যদি কোনভাবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে সৌদি আরবকে। স্পেনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে কোপ পড়ার এটি আরেকটি লক্ষণ। মার্চ মাসেই স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশিতে দাঁড়িয়েছে। ইউরোজোনেও স্পেনে কর্মহীনের সংখ্যা এখন সর্বোচ্চে। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্পেনে লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। তারপরও দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকার পাশাপাশি অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্পেনে লকডাউনের শুরু থেকে ৮,৯৮,৮২২ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রায় ৫,৫০,০০০ অস্থায়ী কর্মী। সরকারী হিসাবে স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ। অর্থাৎ এক মাসেই বেকরত্বের হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ।
×