ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সচেতনতা সৃষ্টিতে

করোনা মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ৫ এপ্রিল ২০২০

করোনা মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ

করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে নিরলসভাবে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা, তবুও আসছে না সাফল্য। তাই আপদকালে এই ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতনতার বিকল্প নেই। একা সরকারের পক্ষে সীমিত জনবল নিয়ে বিপুল সংখ্যক অসচেতন জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সহায়তায় কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থানে জেলা সমিতির ব্যানারে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের করোনার লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় এবং সংক্রমণ হলে করণীয় সর্ম্পকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইম এ্যাকশনের কর্মীরা মুকাভিনয়ের মাধ্যমে করোনা সচেতনতা চালাচ্ছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা লেখা ও আঁকার মাধ্যমে করোনা সচেতনতা চালিয়েছেন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা করোনা সচেতনতার লিফলেট বিতরণ করছেন। করোনা সচেতনতায় রংপুরের পীরগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও নিয়েছেন উদ্যোগ। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিতরণ করছেন মাস্ক ও স্যানিটেশন সামগ্রী। এই স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন আদিব বলেন, গ্রামের মানুষগুলো সচেতন কম কিন্তু করোনা নিয়ে অনেক আতঙ্ক। আমরা চাই তারা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন। তাই এই উদ্যোগ নিয়েছি। স্যানিটাইজার উৎপাদন ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ প্রতিষেধকহীন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিকল্প নেই। কিন্তু সীমিত উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর ব্যাপক চাহিদা সামাল দেয়া কঠিন। তাই নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাবে বসে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করছেন স্যানিটাইজার। রাজশাহী, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, ব্র্যাকসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বল্পমূল্যের স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক প্রস্তুত করছেন। এসব স্যানিটাইজার হাসপাতাল ও দরিদ্র মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছেন তারা। ঢাবির ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ জানান, তাদের গবেষণাগারে উৎপাদিত প্রায় আট শ’ স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয় ক্যাম্পাসের আশপাশের হকার ও রিক্সাচালকদের। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বসুরীরা দেশের সকল সংকটে এগিয়ে এসেছিলেন, আমরাও তেমনিভাবে দেশের প্রয়োজনে অবদান রাখতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোটাই সার্থকতা। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থসংস্থার নির্দেশিকা মেনে স্যানিটাইজার প্রস্তুত করছেন অনেক শিক্ষার্থী। পঞ্চগড় মকবুলার রহমান (এমআর) সরকারি কলেজের গবেষণাগারে শিক্ষার্থীদের একটি দল স্যানিটাইজার উৎপাদন করে সদর হাসপাতাল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ প্রায় ৭৫০ জন রিক্সা ও ভ্যানচালককে বিতরণ করেছেন। এই দলের সদস্য মারুফ হাসান আবির বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পরে বাজারে গিয়ে দেখি স্যানিটাইজার সঙ্কট। তখনই স্যানিটাইজার বানানোর চিন্তাটা মাথায় আসে। পরীক্ষাগারে জীবাণুনাশক উৎপাদন করে চিকিৎসকদের সরবরাহ তো করছেনই, পাশাপাশি পিপিই, মাস্ক প্রভৃতিও যোগাড় করতে সহায়তা করছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিপিই বানানোর জন্য অর্থও সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা। অসহায় ও দুস্থদের পাশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সারাদেশে লকডাউনের পর থেকে অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। শিক্ষার্থীরা তাদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। যাদের কেনার ক্ষমতা নেই, লকডাউনে নেই উপার্জন, তাদের খাদ্য সামগ্রী ও জরুরী ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিজ জেলার অসহায় ও দুস্থদের খাদ্য সহযোগিতা দিয়েছে ভৈরবের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ। পঞ্চগড় শহরের শিক্ষার্থীদের সংগঠন নগরফুল অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে। কুমিল্লায় ২৭টি গ্রামে প্রায় ৯০০ পরিবারের কাছে খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে মোকামনগর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’ এ্যাসোসিয়েশন। দলটির সমন্বয়ক শাইদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের এই সীমিত উদ্যোগ। চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষদের সহায়তা করতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মানবতার সেবায় ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর এগিয়ে আসার ইতিহাস অনেক পুরনো। ব্যতিক্রম হয়নি করোনা সঙ্কটেও। সর্বপ্রথম সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এরপর এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তারাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে করে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন জায়গায় অসহায় নিম্ম আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে। অভুক্ত ও অসহায় প্রাণীদের পাশেও করোনা সংক্রমণরোধে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এই বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভরশীল খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীরা। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের দেয়া খাবারেই এরা বেঁচে থাকে। শিক্ষার্থীবিহীন ফাঁকা ক্যাম্পাসে অসহায় হয়ে পড়েছে এই প্রাণীরা। তাদের নিয়ে ভিন্নধর্মী এক উদ্যোগ নিয়েছে রাবি শিক্ষার্থীর দুই শিক্ষার্থী- প্রসেনজিৎ কুমার ও মাহমুদ সাকি। নিজস্ব অর্থায়নে ক্যাম্পাসের কুকুর ও বিড়ালদের দুই বেলা খাওয়াচ্ছেন তারা। এই ব্যাপারে প্রসেনজিৎ কুমার বলেন, এই দুর্যোগে মানুষের পাশাপাশি মানুষের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীরাও অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। প্রতিদিন আমরা প্রায় অর্ধশত কুকুর ও বিড়ালকে খাবার দিচ্ছি। ক্যাম্পাস না খোলা পর্যন্ত এটি চলতে থাকবে। তবে তাদের নিজেদের পক্ষে প্রতিদিনের খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই তাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
×