ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে প্রাণ গেল ৫৮ হাজার ১১০ জনের;###;আক্রান্ত দশ লক্ষাধিক;###;ফ্রান্সে একদিনে মারা গেলেন ১৩৫৫ জন

করোনায় মৃত্যুর মিছিল

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০২০

  করোনায় মৃত্যুর মিছিল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নোভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে ফ্রান্সে মারা গেছেন ১৩৫৫ জন। যা একদিনে বিশ্বে মৃত্যুর দিক থেকে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড এক হাজার ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘরের বাইরে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বেকার হয়েছে ৬৬ লাখ মানুষ। বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না লাখ লাখ মার্কিনী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীতে এখনও আক্রান্ত হয়েছেন দশ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৮ জন। মারা গেছেন ৫৮ হাজার ১১০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই লাখ ২৭ হাজার ৬৬৮ জন। ভাইরাসটি বিশ্বের ২০৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা মোকাবেলায় সিঙ্গাপুর এক মাসের লকডাউন ঘোষণা করেছে। স্পেনে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৯৩২ জনের। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি আগে থেকেই সবার ওপরে ছিল। বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৪৪২ ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের ছোবল থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ নানান বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের বেশি এখন ‘ঘরবন্দী’ নির্দেশনার আওতায় রয়েছে। দেশটিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কেবল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যেই মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় পরের অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান ও লুইজিয়ানা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসন নাগরিকদের ঘরের বাইরে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডেবোরাহ বার্ক্স বলেছেন, শীঘ্রই সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) তাদের সুরক্ষা নির্দেশনায় সবাইকে মাস্ক পরতে বলবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নাগরিকদের মাস্ক পরার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, চাইলে, তারা পরতে পারেন, কোন কোন ক্ষেত্রে স্কার্ফেও কাজ চলবে। অনেক সময় স্কার্ফও ভাল, এটি পুরু। এর আগে সর্বাধিক মৃত্যুও রেকর্ড ছিল ইতালির। ২৭ মার্চ দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯৬৯ জনের মৃত্যু হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মারফি উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের চিহ্নিত করা কঠিন হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা ৫ থেকে ১০ গুণ বেশিও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন। কাজে ফিরেছেন মেরকেল ॥ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ করে কাজে ফিরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। এর আগে মেরকেলের এক ডাক্তার করোনা আক্রান্ত হবার পর তিনি কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। যদিও মেরকেল করোনা আক্রান্ত ছিলেন না তারপরও তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৯৩২ ॥ লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে ইউরোপের দেশ স্পেনে। প্রতিদিন দেশটির শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে করোনা। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত আরও ৯৩২ জন মারা গেছেন। গত একদিনে নয় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে দেশটিতে। গত দিন স্পেনে করোনা আক্রান্ত ৯৫০ জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃতের সংখ্যাটা এখন ১০ হাজার ৯৩৫। করোনায় শুধু প্রাণহানি নয় মন্দায় পড়েছে স্পেনের অর্থনীতি। মহামারী শুরুর পর থেকে দেশটিতে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় নয় লাখ মানুষ। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। প্রায় তিন বছর পর দেশটিতে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখেরও বেশি। এক মাসের লকডাউনে সিঙ্গাপুর ॥ শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে সিঙ্গাপুর। গত এক মাসে সেই সাফল্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে। মার্চের শুরুতেও দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন একশ’র মতো। মাস শেষ না হতেই সেই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেকারণে করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর সরকার। শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। একারণে ধীরে ধীরে বাড়ানোর পরিবর্তে আগামী কয়েক সপ্তাহ চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, খাদ্যপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সুপারমার্কেট, হাসপাতাল, ক্লিনিক, জরুরী পরিবহন ও প্রধান ব্যাংকিং সেবাগুলোই শুধু চালু থাকবে। এর বাইরে যাবতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, অনুষ্ঠান বন্ধ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বিকল্প উপায়ে (অনলাইনে) শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। ওই নির্দেশনা আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে এর সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ১১৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন পাঁচজন। ফ্রান্সে ২৪ ঘণ্টায় ১৩৫৫ মৃত্যু ॥ করোনায় ফ্রান্সে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একদিনেই ঝরে গেছে এক হাজার ৩৫৫ জনের প্রাণ। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৩৮৭ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৯ হাজার ১০৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৪২৪ জন। প্রতি ১৯ জনে একজনের মৃত্যু। থামছেই না বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ক্রমেই লম্বা হয়ে চলেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও আক্রান্তের তালিকা। সংক্রমণের পর থেকে এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা অর্ধ লাখের বেশি। সেই হিসেবে এই ভাইরাসে প্রায় প্রতি ৫ জনে একজন সুস্থ হয়েছে। আর প্রতি ১৯ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে, আক্রান্তদের মধ্যে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৭ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১২ হাজার ১৬১ জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আর ৩৭ হাজার ৬৯৬ জনের অবস্থা গুরুতর। ইরানের স্পীকারও করোনা আক্রান্ত ॥ ইরানের পার্লামেন্টের স্পীকার আলি লারজানির দেহে করোনা উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ আরও অনেক হাই প্রোফাইল নেতা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ইরানের বেশ কিছু আইনপ্রণেতা ছাড়াও অনেক নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা এবং ধর্মীয় পরিষদের এক সদস্য ইতোমধ্যে প্রাণও হারিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিকভাবে করোনাভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরান। সবশেষে আজ দেশটির সরকারী ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, স্পীকার লারজানি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায়র পর বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে ইরানের কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্ট করোনায় আক্রান্ত হন। করোনায় দেশটির বিশিষ্ট ১৩ জন রাজনীতিবিদের মৃত্যু হয়। এছাড়া এরকম আরও অন্তত ১৩ জন নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে এখন পর্যন্ত ৮২ হাজার মানুষের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি মারা গেছেন। যার বেশিরভাগ ইরানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ১৬০ জন; আক্রান্ত ৫০ হাজারের বেশি। ইরানে মৃত বেড়ে ৩২৯৪ ॥ ইরানে মৃত্যুর সংখ্যায় প্রতিদিনই শত শত মানুষের নাম উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মধ্যপ্রাচ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশটিতে নতুন করে ১৩৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুরি জানিয়েছেন, একদিনে আরও শতাধিক প্রাণহানির পর দেশে করোনা কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪। নতুন আক্রান্ত নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ১৮৩ জনের দেহে করোনা উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৪ হাজারের বেশি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আগাম কবর খুঁড়ছে আয়ারল্যান্ড ॥ গ্রামের শেষ প্রান্তে উন্মুক্ত ময়দানে খোঁড়া হচ্ছে সারি সারি কবর। একটা দুইটা নয়, অসংখ্য গোর খুঁড়তে ব্যবহার হচ্ছে এক্সেভেটর মেশিন। করোনা মহামারীতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ানোর মধ্যে বেলফাস্ট সীমান্তের কাছেই উত্তর আয়ারল্যান্ডের আনত্রিম এলাকার সিক্সমাইল গোরস্থানে দেখা যায় এ দৃশ্য। কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গোরস্তানের কর্মী সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পরে গোর খোঁড়ার লোক পাওয়া যাবে না। তাই আগেভাগেই বেশি করে খুঁড়ে রাখা হচ্ছে। আমাজনে মিলল করোনা ॥ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় তাণ্ডব চালিয়ে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে সুদূর লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে। এবার জানা গেল, করোনা পৌঁছে গেছে পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনে। সেখানের ঘন জঙ্গলে ঘেরা একটি গ্রামে উপজাতি এক নারীর দেহে করোনা পাওয়া গেছে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ খবরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আমাজনে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সেখানের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর দেহে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। উহানে ৪ জনের মৃত্যু ॥ করোনা মহামারীর প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মাত্র কয়েকদিন আগেই তুলে নেয়া হয়। করোনার দ্বিতীয় ধাপের বিস্তারের আশঙ্কায় দেশটির সরকার নতুন করে আবারও বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। উহানে করোনায় চারজনের প্রাণহানির পর স্থানীয়দের আবারও ঘরে বন্দী এবং যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উহানের শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা সেখানকার বাসিন্দাদের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। শুক্রবার চীনে নতুন করে ৩১ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েছে; যাদের মধ্যে অন্তত দুজন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন, বাকিরা বিদেশ ফেরত। এছাড়া মারা গেছেন চারজন; যাদের সবাই উহানের বাসিন্দা। ভারতে করোনা ॥ করোনা মহামারীর শিকার দেশগুলোর মধ্য উত্থান-পতন থেমে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে গেছে প্রতিবেশী বৃহত্তম দেশ ভারত। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৬৭ জনের। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭২ জন। পাকিস্তানে করোনা ॥ পাকিস্তানে করোনা রোগী আছে ২ হাজার ৪৫০ জন। এক দিন আগেও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় ছিল শীর্ষে। পাকিস্তানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী ছিল ২ হাজার ১১৮। মারা গেছে ৩৫ জন। আমিরাতে আক্রান্তের সংখ্যা ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ২৪ জনে। মারা গেছেন মোট আটজন। আর সুস্থ হয়েছেন ৯৬ জন। দেশে দেশে মৃত্যু ॥ ইতালিতে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে স্পেনে মারা গেছেন ১০ হাজার ৯৩৫ জন। জার্মানিতে মৃত্যু এক হাজার ১১১ জন। চীনে তিন হাজার ৩৩২ জন। ফ্রান্সে ৫হাজার ৩৮৭ জন। ইরানে তিন হাজার ২৯৪ জন। ব্রিটেনে দুই হাজার ৯২১ জন। সুইজারল্যান্ডে ৫৭৩ জন। তুরস্কে ৩৬৫ জন। বেলজিয়ামে এক হাজার ১৪৩ জন। হল্যান্ডে এক হাজার ১৩৯ জন। অস্ট্রিয়ায় ১৬৮ জন। কানাডায় ১৭৩ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৭৪ জন। পর্তুগাল ২০৯ জন। ব্রাজিল ৩২৭ জন। ইসরাইলে ৩৭ জন। সুইডেনে ৩০৮ জন। অস্ট্রেলিয়ায় ২৮ জন। নরওয়েতে ৫৪ জন। রাশিয়ায় ৩৪ জন। চেকেস্লোভাকিয়া ৪৬ জন। আয়ারল্যান্ড ৯৮ জন। ডেনমার্ক ১৩৯ জন। চিলি ১৮ জন। মালয়েশিয়ায় ৫৩ জন। রোমানিয়ায় ১১৮ জন। ইকুয়েডর ১২০ জন। পোল্যান্ডে ৫৯ জন। ফিলিপিন্সে ১৩৬ জন। জাপানে ৬৩ জন। ভারতে ৭২ জন। লুক্সেমবার্গে ৩০ জন। পাকিস্তানে ৩৫ জন। ইন্দোনেশিয়ায় ১৮১ জন। থাইল্যান্ডে ১৯ জন। সৌদি আরবে ২১ জন। সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র ॥ আক্রান্তের সংখ্যায়ও রেকর্ড করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার দেশটিতে আরও ৩০ হাজারেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪০ জন। যা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় সর্বাধিক। যুক্তরাষ্ট্রে মহামারীর কেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। সেখানে ১ হাজার ৫৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার ৮০৯। যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে হোয়াইট হাউস। বেকার হয়েছে ৬৬ লাখ মানুষ। মার্কিন শ্রম বিভাগ জানায়, গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬৬ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। তারা ইতোমধ্যেই বেকার ভাতার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বেকারত্বের নতুন রেকর্ড। ব্যাংক অব আমেরিকা বলছে, করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে গভীর মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। বেকারত্বের হার ছাড়িয়ে যেতে পারে ১৫ শতাংশ। বাড়িভাড়া দিতে পারছে না লাখ লাখ মার্কিনী। করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মতো চাকরি হারিয়ে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য বিল দিতে পারছেন না সব শ্রেণির কয়েক লাখ মানুষ। হঠাৎ করেই তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন পুরোপুরি উল্টে গেছে। মার্কিন আদিবাসী এলাকায় ছড়াচ্ছে ॥ যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় আদিবাসী এলাকা নাভাজো নেশনে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন আঞ্চলিক নেতারা। তাদের আশঙ্কা, মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো যথেষ্ট চিকিৎসা সরঞ্জামাদি তাদের কাছে নেই। তার ওপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সরকার অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। আরিজোনা, নিউমেক্সিকো ও ইউটা এ তিন অঙ্গরাজ্যের ৭১ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসিত এলাকা নাভাজো নেশন। এটি নাভাজো জনগোষ্ঠীর সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং নাভাজো এরিয়া ইন্ডিয়ান হেলথ সার্ভিস জানিয়েছে, নাভাজো নেশনে এ পর্যন্ত ১৭৪ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৯ জন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে নাভাজো নেশনের নেতারা। সেখানকার প্রেসিডেন্ট জোনাথন নেজ জানিয়েছেন, ভ্রমণের হার কমাতে গত ৩০ মার্চ থেকে ওই এলাকায় কারফিউ জারি রাখা হয়েছে। রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ কার্ফু চলে। জরুরী কাজে নিয়োজিত থাকা মানুষ এ কার্ফু আওতামুক্ত থাকে তবে তাদেরও রাস্তায় বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দর্শাতে হয়। করোনা ছড়িয়েছে ২০৪ দেশে ॥ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, মহামারীটি বিশ্বকে আঁকড়ে ধরছে। এটি বিশ্ববাসীর জন্য একটি মাইলফলক। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন। ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ভাইরাসটি তিন মাস আগে চীনে প্রথম আবির্ভূত হয়। সেখান থেকে বর্তমানে বিশ্বের ২০৪ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ হলেও এর প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। এ ভাইরাসে প্রথম এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছিল দেড় মাস। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় দ্রুত ১০ লাখে পৌঁছে গেছে। যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি যোগ হচ্ছে নতুন দেশের নাম। সুস্থ হয়েছেন ২ লাখের বেশি ॥ বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনয় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ৯৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইতালিতেই মারা গেছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন। ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত দশ লাখেরও বেশি। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন ৭ লাখ ৩১১ জন ও ৩৭ হাজার জনের অবস্থা গুরুতর। আক্রান্তদের মধ্যে বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৯৯ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ২০ হাজার ৬৩১ জন। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন, আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন। ইতালির পরেই রয়েছে স্পেন। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৭১০ জন। মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালো ॥ বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেয়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজার ২৩১ জন। আর দুনিয়া জুড়ে এই ভাইরাসে নতুন করে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৮৯ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ইতালিতে এক লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন, স্পেনে এক লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জন, চীনে ৮২ হাজার ৪৩২ জন, জার্মানিতে ৮১ হাজার ৭২৮ জন, ফ্রান্সে ৫৭ হাজার ৮০৭, ইরানে ৫০ হাজার ৪৬৮ জন, ব্রিটেনে ৩৪ হাজার ১৬৫ জন, সুইজারল্যান্ডে ১৮ হাজার ৪৭৫ জন আর তুরস্কে ১৫ হাজার ৬৭৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জন। এর মধ্যে চীনে ৭৬ হাজার ৫৭১, স্পেনে ২৬ হাজার ৭৪৩, জার্মানিতে ২১ হাজার ৪০০, ইতালিতে ১৮ হাজার ২৭৮, ইরানে ১৬ হাজার ৭১১, ফ্রান্সে ১২ হাজার ৫৪৮, যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার ৮৪৯ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫ হাজার ৮২৮ জন।
×