ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা সঙ্কটে বিপাকে দিনাজপুরের দুই হাজার দুগ্ধ খামারি

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৪ এপ্রিল ২০২০

  করোনা সঙ্কটে বিপাকে দিনাজপুরের দুই  হাজার দুগ্ধ খামারি

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ দেশব্যাপী করোনা সঙ্কটের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুর জেলার ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার দুগ্ধ খামারি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হোটেল রেস্তরাঁসহ দোকানপাট বন্ধ এবং হাটবাজারে লোকজনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুধ বিক্রি হচ্ছে না। অন্যদিকে দামও কমেছে কেজি প্রতি প্রায় ২৫ টাকা। ‘দুধের দাম কমেছে, দুধ বিক্রি হচ্ছে না, কিন্তু গো-খাদ্যের দাম কমেনি’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দিনাজপুরের হতাশ খামারিরা। অন্যদিকে খামারিদের অন্যতম ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাও খামারিদের দুধ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খামারিরা। এ ব্যাপারে দিনাজপুর ডেইরি ফারমার এ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে। দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নে অবস্থিত ‘আফসা’ ডেইরি ফার্মের মহা ব্যবস্থাপক ফজলুল করিম টুটুল জানান, দিনাজপুরের খুচরা দুধ বিক্রেতারা আগে ৫০ টাকা লিটারে বাজারে দুধ বিক্রি করতেন। করোনার কারণে বর্তমানে তা বিক্রি করছেন ২০ টাকা ৩০ টাকায়। আর গো খামারিদের দুধ বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু গো খাদ্যের দাম একটুকুও কমেনি বরং বেড়েছে। ফলে গরুর খাবার জোগান দিতে ধার-কর্জ করতে হচ্ছে। তিনি জানান, শুধু তার নয়, একই অবস্থা দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার প্রায় দুই হাজার দুগ্ধ খামারির। দিনাজপুর ডেইরি ফারমার এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামারে তিনটি থেকে শুরু করে ২শ’টি পর্যন্ত শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জারসি, শংকরসহ উন্নত জাতের গাভী রয়েছে। খামারিদের অধিকাংশই সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তোলেন। প্রতিটি খামার থেকে দৈনিক ২০ লিটার থেকে ৭০০ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ খামারিরা মিল্কভিটাসহ গোয়াল (ফড়িয়া) ও বিভিন্ন হোটেল এবং দোকানপাটে সরবরাহ করে থাকেন। গোয়ালরা প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত খুচরো বিক্রি করেন। কিন্তু গত ২৬ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে হাটবাজার, দোকানপাট, লোক চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুধ কেনাবেচা বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে যান দুগ্ধ খামারিরা। প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ দুধ উৎপাদন হলেও, তা বিক্রি করতে পারছেন না তারা। কেউ কেউ বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের ফ্রিজে সংরক্ষণের সুযোগ পেলেও, অধিকাংশই দুধ সংরক্ষণ করতে পারছেন না। অনেকেই ১০ থেকে ২০ টাকা লিটারে অল্প স্বল্প করে দুধ বিক্রি করছেন। অনেকে প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন। খামারিরা জানান, প্রতিদিন ৩টি গাভীর ছোট্ট একটি খামারে গাভীর খাবার ও পরিচর্যা বাবদ তাদের সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা খরচ লাগে। প্রতিদিনের দুধ বিক্রির টাকা থেকেই এই খরচের জোগান হতো। কিন্তু দুধ বিক্রি না হওয়ায় পুরো টাকাই তাদের ধারকর্জ বা ঋণ করে এনে খরচ চালাতে হচ্ছে। খামারিরা আরও অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে গো-খাদ্য ব্যবসায়ীরা বাজারে গাভীর প্রতিটি খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাদের কঠিন সঙ্কট চলছে।
×