ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহল্লায় মহল্লায় উঠতি বয়সীদের আড্ডা থামছে না

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৪ এপ্রিল ২০২০

 মহল্লায় মহল্লায় উঠতি বয়সীদের আড্ডা থামছে না

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে অনেকে ঘরে থাকার নিয়ম মেনে চললেও মহল্লায় মহল্লায় উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণদের আড্ডা থামানো যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব বন্ধ থাকলেও এরা অযথা ঘোরাঘুরি করছেন। পাড়া-মহল্লা অলিতে গলিতে জটলা পাকিয়ে তরুণরা আড্ডা দিচ্ছেন। আবার কেউ সুরক্ষা সামগ্রী হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা কেউ নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। শুক্রবার নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কোয়ারেন্টাইন, ঘরে থাকার নিয়ম মেনে চললে আমরা প্রতিরোধ করতে পারব। ডিএমপি মিডিয়া উইং ডিসি মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, আমরা রাজধানীবাসীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যাতে কেউ বের না হন। তা সবার সর্বাত্মক সহযোগিতার চাই। সবাইকে ঘরে থাকার জন্য উদ্বুধ করছি। আর তরুণদের উদ্দেশে ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, সমাজের দর্পণ তরুণরা যাতে জটলা পাকিয়ে আড্ডা না দেন। কারণ অসচেতন তরুণরা এ ধরনের আড্ডা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবে। তিনি জানান, পুলিশ সব সময় পাড়া-মহল্লা অলিতে-গলিতে টহল দিচ্ছে। যাতে তরুণরা জটলা পাকিয়ে আড্ডা না দেয়। রাজধানীর কয়েকটি সরকারী হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতে জটলা পাকিয়ে তরুণদের আড্ডাবাজি বন্ধ করতে না পারলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর লালবাগ শহীদনগর, কিল্লার মোড়, নওয়াবগঞ্জ, আজিমপুর এলাকার অলিতে গলিতে তরুণরা ঘোরাঘুরি করছে। অনেকে বিভিন্ন গলিতে দীর্ঘদিন উচ্চস্বরে গান বাজনা করে। এদিকে কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসূলপুর ১ নম্বর গলিতে দিনরাত তরুণদের আড্ডা অতিষ্ট এলাকাবাসী। এখানকার বাসিন্দারা জানান, সরকারী প্রশাসনের করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই গলিতে বিভিন্ন বাড়ির পাশে বসে মাদকের আড্ডা বসায় বখাটে তরুণরা। আবার অনেকে রাস্তা বিভিন্ন স্থানে বসে লুড্ডু বসিয়ে জুয়ার খেলার আসর বসায়। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এলাকাবাসীরা জানান, মাঝে মাঝে পুলিশ কয়েক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী তরুণ ধরে নিয়ে যায়। পরেরদিন আবার তাদের এখানে দিনরাত আড্ডা বসাতে দেখা যায়। একই অবস্থায় পূর্ব রসূলপুর ২ থেকে ৯ নম্বর গলি পর্যন্ত। এছাড়া কামরাঙ্গীচর হাসপাতাল রোড, কমিউনিটি সেন্টার রোড, ইসলাম নগর, আশ্রাফাবাদ, মুসলিমনগর, ঝাউচর, হুজুরপাড়া, বাদশা মিয়া স্কুলে সামনে উঠতি বয়সের তরুণরা জটলা পাকিয়ে আড্ডাও দিচ্ছে। অন্যদিকে হাজারীবাগের ঝাউলাহাটি, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, মনেশ্বর রোড, ঝিগতলা। চকবাজারের ইসলামবাগ, পোস্তা, দেবিদাস ঘাট, চকবাজার। বংশালের চূড়িহাট্টা, নিমতলী, কাজী আলাউদ্দিন আলী রোড, নয়াবাজার, বাগদাসা লেন, কোতোয়ালি তাঁতীবাজার, জগন্নাত হল সংলগ্ন এলাকা, ইসলামপুর, বাবুবাজার। পুরানো ঢাকার সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, নারিন্দা শাহসাহেব বাড়ি, নারিন্দা লেন, লক্ষীবাজার, দক্ষিণ মুসুন্দী, এলাকার বিভিন্ন অলিতে গলিতে উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা নিত্যদিনের ঘটনা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে মোহাম্মদপুর, মিরপুরে বিভিন্ন অলিতে গলিতে কিশোর ও তরুণরা ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কেউ জটলা পাকিয়ে আড্ডাও দিচ্ছেন। একই অবস্থায় উত্তর বাড্ডায় এবং মহাখালী টিবি গেট, গুলশানের কড়াইল বস্তি এলাকা, টিভি সেন্টার আফতাবনগরসহ কয়েকটি থানা এলাকা। এসব এলাকা সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা তেমন চোখে পড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। লালবাগ নিউপল্টন এলাকার কয়েক বাসিন্দা জানান, দু’দিন ধরে পুলিশ ও সেনা টহল দেয়ার পর এখানে তরুণদের আড্ডা কিছুটা কমেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চলে যাবার পর আবার তরুণরা জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। লালবাগ ঢাকেশ্বরী মাঠের এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন শিমুলসহ কয়েক যুবক। শিমুল জানান, সারাদিন ঘরে বন্দী থেকে আর ভাল লাগছে না। তাই বাসার অদূরে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য এখানে দাঁড়িয়েছে। তবে এটি ঠিক নয় বলে এই যুবক জানান। ওই যুবকরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে অসচেতন ব্যক্তিরাই এ ধরনের আড্ডা দেয়। তবে তারা আর এ ধরনের আড্ডা দিবেন না বলে জানান। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিক্সা চলাচল কম। তবে রিক্সা চলাচলের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিবেশগত কারণে এসব রিক্সা চালকরা ঝুঁকি মধ্যে রয়েছে। তবে মাস্ক ব্যবহার করলে ঝুঁকিটা কম। তবে রিক্সা না চলানো উচিত। কামরাঙ্গীচর পূর্ব রসূলপুর এলাকার রিক্সা আলম জানান, একদিন রিক্সা না চালালে খাব কি ? সংসার চলবে কি করে। সরকারী সাহায্য আমরা পাইনি। তাই পেটের তাগিদে রিক্সা নিয়ে বের হই।
×