ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্ত ১০ লাখ ছাড়াতে পারে ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৩ এপ্রিল ২০২০

আক্রান্ত ১০ লাখ ছাড়াতে পারে ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও-এর প্রধান টেড্রোস আধানোম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ জন্য বিশ্ববাসীকে আরও সকর্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা এখনও নতুন একটি ভাইরাস। এর বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন তথ্য আসছে, এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরামর্শও বদল ফেলব।’ এত দিন মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ না দিলেও এবার সংস্থাটির কাছ থেকে এমন পরামর্শ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬০৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪৬ হাজার ৮০০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। করোনভাইরাসে দেশটিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড এটিই। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বুধবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত আট শ’ ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চার হাজার ছয় শ’ জনের বেশি মানুষ মারা গেল। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ মার্চ ইতালিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। ওইদিন দেশটিতে নয় শ’ ৬৯ জন মারা গিয়েছিল। এদিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার তিন শ’ ৭২ জন। এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রকাশিত এক ধারণায় উঠে আসে যে, প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে নেয়া পদক্ষেপ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত মানুষ মারা যেতে পারে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতিবিধিকে ইতালির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রাদুর্ভাবের সম্প্রতি কত মডেল পর্যবেক্ষণ করলে যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ধারার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য পাওয়া যায় ইতালির। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিউইয়র্ক। দেশটিতে মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক নিউ ইয়র্ক রাজ্যে। অন্যদিকে বর্তমানে নিউ অরলিয়েন্স ও ডেট্রয়েটের মতো অঞ্চলে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস মন্তব্য করেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে ৯ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে এবং অন্তত ৪৬ হাজার আট শ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাস্ক পরার বিষয়ে তাদের পূর্বের নির্দেশনা পরিবর্তন করার বিষয়ে আলোচনা করবে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিচ্ছিল যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবাদানকারী ব্যক্তি বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ছাড়া কারও মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তবে এখন সবাইকেই মাস্ক পরতে পরামর্শ দেয়ার কথা চিন্তা করছে তারা। এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। অধিকাংশ দেশেই মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে মানুষের চলাফেরার ওপর বিভিন্ন মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃৃপক্ষ। কোন কোন দেশে আরোপ করা হয়েছে সম্পূর্ণ লকডাউন, কোথাও কোথাও আংশিকভাবে চলছে মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ চলাফেরার ক্ষেত্রে কোন না কোন মাত্রায় নিষেধাজ্ঞার ওপর পড়েছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই অনেক দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×