ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরবন্দী মানুষের প্রণোদনায় গান

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৩ এপ্রিল ২০২০

  ঘরবন্দী মানুষের  প্রণোদনায় গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থবিরতা নেমেছে দেশের সংস্কৃতি ও বিনোদন অঙ্গনে। বন্ধ রাখা হয়েছে টিভি নাটক ও সিনেমার শূটিং। বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় হচ্ছে না নাটকের প্রদর্শনী। ঘরে এক প্রকার আটকা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ। এ অবস্থায় ঘরবন্দী মানুষের এই অবসন্নতা থেকে সামান্যতম স্বস্তি দেয়ার অভিপ্রায় সঙ্গীত শিল্পীদের কেউ কেউ বাসায় অবস্থান করেই নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন রকম জনপ্রিয় গান শোনাচ্ছেন ফেসবুক লাইভে এসে তেমনই এক সঙ্গীতশিল্পী সমরজিৎ রায়। নিজ উদ্যোগে বাসায় থেকে ফেসবুক লাইভে এসে ঘরবন্দী সঙ্গীতপ্রেমীদের গান শোনাচ্ছেন। হেমন্ত মুখার্জীর ‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো’, ‘ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা’ ও ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে’, সুবীর সেনের ‘এতো সুর আর এতো গান যদি কোনদিন থেমে যায়’, শ্যামল মিত্রের ‘এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মন যেতে নাহি চায়’সহ কালজয়ী শিল্পীদের অসংখ্য গান ফেসবুক লাইভে গেয়ে চলেছেন। সকাল-সন্ধ্যা তার দরাজ কণ্ঠের এসব গান কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে ঘরবন্দী দেশের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের। কোন কোন সময় পুরনো জনপ্রিয় বাংলা গান, আবার কোন সময় নিজের মৌলিক গান শুনিয়ে সান্ত¡না ও সাহস জোগানোর চেষ্টা করছেন। এটাই যেন তার মঞ্চ। যে মঞ্চ থেকে একের পর এক গান শোনার যুযোগ পাচ্ছে দর্শক-শ্রোতা। এ সম্পর্কে শিল্পী সমরজিৎ রায় জনকণ্ঠকে বলেন, এখন তো মানুষের একটা দুর্যোগ চলছে। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় কারও হাত নেই। এ সময় মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। এটা আমরা অনেকেই মানছি না। আমাদের শিল্পীদের তো এ সময় গান ছাড়া আর কিছু করার নেই। সে কারণে আমি ভাবলাম, এই মুহূর্তে মানুষের ঘরে থাকাটাই জরুরী। ঘরে বন্দী থাকাটা যে কত কষ্টের সেটা আমি নিজেও বুঝি। ঘরে বসে থাকতে থাকতে অনেক সময় বরিং হয়ে যেতে হয়। যদি ঘরেই থাকতে হয় তাহলে কি করা উচিত এটা নিয়ে আমি খুবই ভাবছি। আমাদের শিল্পী হিসেবে তো একটা দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব থেকেই ভাবলাম যে সবাই ঘরে থাকুক, তাদের জন্য বিনোদনের একটা বিষয় আমাদের শিল্পীদের করা উচিত। শুধু শিল্পীরাই নয়, সবারই যার যার জায়গা থেকে এ সময় একটা কিছু করা উচিত। আমার জায়গা থেকে আমি সেই প্রচেষ্টাটা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি এ সময়ে চেষ্টা করছি আমাদের বাঙালীদের সবার পছন্দের গানগুলো করতে। যে গানগুলো খুবই জনপ্রিয়, যেগুলো সবাই শুনতে চায় সেই গানই শোনার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে পুরনো দিনের বাংলা গান। কিছু লোক আমাকে প্রশ্ন করেছেন, এ সময়ে আধুনিক গান কেন করছেন? এ সময়ে উজ্জীবিত করার গানগুলো করা উচিত। আমি তাদেরকে বলি, আমরা তো কোন যুদ্ধে যাচ্ছি না। আমরা করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছি এটা ঠিক কিন্তু এর সঙ্গে যুদ্ধে তো আমাদের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। ঘরে থেকে কোনগুলো আমরা পছন্দ করব একচুয়ালি সময় কাটানোর জন্য? সেজন্য আমি বিভিন্ন কালজয়ী শিল্পীদের জনপ্রিয় গানগুলোই গাইছি। ঘরে বসে আমরা অনেক সময় মুভি দেখি, আমরা নিশ্চয়ই সে সময় উজ্জীবিত হবার গান শুনি না। এটা আমি চালিয়ে যেতে চাই। হয়ত অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে, কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে আমার দায়িত্ব থেকে এটা করে যেতে চাই। আমি এটা লাইভে করছি। কিছু গান আমি আগে রেকর্ড করে রেখেছিলাম ওগুলো মাঝে মধ্যে প্রচার করছি। আর কিছু কিছু গান শুধু হারমনিয়াম ধরে গেয়ে দিচ্ছি। আমি দিনের যে কোন সময় দিচ্ছি তবে সন্ধ্যা বা সকালে বেশি দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাবা মাকে কোনদিন কাজ ছাড়া বসে থাকতে দেখিনি। বাবা আজীবন শিক্ষকতার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন, আর মা ঘর সামলানোর কাজে। তাই হয়ত এখনও নিজের শরীরকে তারা ঠিক রাখতে পেরেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে সারা বিশ্বে এমন একটি দুর্যোগ চলে এসেছে, যাতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেভাবে করোনাভাইরাসের আধিপত্য বিস্তার পাচ্ছে, এতে অন্য সবার মতো আমারও বাবা মা এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাবা মা’সহ পরিবারের কাউকেই ঘরের বাইরে যেতে দিচ্ছি না নিজেদের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে। তাই অনেক বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আপনারাও দয়া করে সিদ্ধান্ত নিন যে, ঘরে থেকে সবার জীবন বাঁচাতে চান, নাকি নিজের এবং অনেকের মৃত্যুর কারণ হতে চান। আমি জানি ঘরে বন্দী থাকতে কারও ভাল লাগার কথা নয়। কারণ আসলেই তো আমরা জানি না পরিবারের সবার সঙ্গে এভাবে সময় কাটানোর সুযোগ আর কতদিন হবে। আপনারাও পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটান, এতে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
×