ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ভার্সিটি ও ঢাকা মেডিক্যালে করোনা পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৩ এপ্রিল ২০২০

 বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ভার্সিটি ও ঢাকা মেডিক্যালে করোনা পরীক্ষা শুরু

নিখিল মানখিন ॥ বর্তমানে দেশের মোট ছয়টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করতে স্থাপিত নতুন কেন্দ্রগুলোতে করোনার উপসর্গ রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইইডিসিআর ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৩ থেকে ৮টির মধ্যে রয়ে গেছে। তবে ওইসব কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়া নমুনা সংখ্যার অনেক গুণ বেশি রোগীর আগমন ঘটছে। সর্বোচ্চ সন্দেহজনক করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদেরই নমুনা পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্দি-কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে যাওয়া ৭৯ জনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয় ১৮ জনকে। একই অবস্থা দেখা দেয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বৃহস্পতিবার সংগৃহীত নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট আজ শুক্রবার প্রকাশ করা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগের বাংলাদেশ বেতার ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত করোনাভাইরাস ল্যাবরেটরিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করানোর কথা জানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সকাল সাতটার আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালটির বেতার ভবনের সামনে সৃষ্টি হয় আগত রোগীদের দীর্ঘ লাইন। নমুনা পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা দেরি হওয়ায় অপেক্ষমাণ লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ দেয়া দেয়। সৃষ্টি হয় সাময়িক গোলমাল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকাল দশটায় নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বেতার ভবনের নিচতলায় স্থাপিত জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি রোগীদের জন্য নির্ধারিত ফিভার ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলছে। এখানেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার এই ফিভার ক্লিনিকের মাধ্যমে মোট ৭০ জন রোগী আসেন। তাদের মধ্য থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য ৯ জনকে নির্বাচিত করা হয়। আর নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠানো আরও ৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এভাবে বৃহস্পতিবার মোট ১৮টি নমুনা পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়েছে। স্যাম্পলগুলোর ফলাফল আইইডিসিআরকে জানিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা দেশবাসীকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আমাদের নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। এই ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ২৪০টি কিট রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইইডিসিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এই ল্যাবরেটরির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে বেতার ভবনে আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হবে এবং চিকিৎসার জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ল্যাবরেটরিতে এসে রোগীদের ভোগান্তি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই ল্যাবরেটরির নিচ তলায় স্থাপিত ফিভার ক্লিনিকে কর্তৃব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোন রোগী করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত হলে সঙ্গে সঙ্গেই তার পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার ফলাফল পেতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। কোন রোগীর দেহে করোনাভাইরাস পজেটিভ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তিনি আরও জনান, যথাযথ নিয়ম ও প্রোটকল অনুসারে বাইরে থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে আনা হলে সেসকল স্যাম্পলও টেস্ট করা হবে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ বিদ্যুত কান্তি সাহা জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার পরীক্ষার জন্য ৬টি নমুনা নির্বাচিত করা হয়েছে। এদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী এবং বাইরে থেকে আসা রোগীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সন্দেহজনক করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করোনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নমুনার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান ডাঃ বিদ্যুত কান্তি সাহা। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানায়, বুধবার সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরে ১১৮টি, বিআইটিআইডিতে ৮টি, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৪টি, আইসিডিডিআরবিতে ৩টি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে ৪টি, বিএসএমএমইউতে ৪টি অর্থাৎ মোট ১৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত সেন্টার ‘আইপিএইচ’তে কোন নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। সূত্রটি আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নে ৬৪ হাজার ৮২৯টি, ৩৩৩ নম্বরে ১৬৩৬টি, আইইডিসিআরের নম্বরে ২৮৪৫টি অর্থাৎ মোট ৬৯ হাজার ৩১০টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ৭ জন, সমুদ্রবন্দরসমূহে ১৮৭ জন, স্থলবন্দরসমূহে ২০৮ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
×