ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামেও ফিরতে পারছেন না

নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ নেই, প্রয়োজন খাবারের নিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২ এপ্রিল ২০২০

নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ নেই, প্রয়োজন খাবারের নিশ্চয়তা

ফিরোজ মান্না ॥ টানা সাত দিন সারাদেশ লকডাউনে। এ অবস্থায় ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন মানুষের ঘরে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নগরীর মধুবাগে রিক্সাওয়ালা মামুন পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। একার আয়ে ছয় জনের সংসার চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। সোমবার বেলা একটায় রিক্সা নিয়ে বের হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৫০ টাকা রোজগার করেছেন। এখন থেকে ৬০ টাকা রিক্সা মালিককে জমা দিতে হবে। বাকি ৯০ টাকা দিয়ে চাল ডাল নুন মরিচ কিনে বাড়ি ফিরবেন। এই টাকায় স্ত্রী-দুই সন্তান ও মা বাবার মুখে আহার দেবেন। বিত্তবানদের সহযোগিতা তার কপালে জোটেনি। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ। পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামেও ফিরে যেতে পারছেন না। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ। আর বাড়িতে গিয়েই বা কি করবেন। সেখানেও তো কোন কাজ নেই। জীবন মরণ সমস্যার মধ্যে পড়েছেন মামুন। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে এসব কথাই জানা গেল। সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর শ্রমজীবী মানুষের একটি অংশ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। যারা রয়ে গেছেন তারা তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। রাজধানীতে বহু বস্তি রয়েছে। বস্তিবাসীদের অনেকেরই আয় রুজির কাজ নেই বলেই চলে। তাই তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। কর্মহীন অবস্থায় তারা বস্তিতেই আছেন। ভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও তাদের কাছে করোনা প্রতিরোধের চেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবারের নিশ্চয়তা। সফি নামের এক দিনমজুরের সঙ্গে কথা হলো মগবাজার কাঁচা বাজারে। তিনি মানুষের বাজার পৌঁছে দেন মানুষের ঘরে ঘরে। কিন্তু নিজের বাজার নিজে করতে পারেন না। আগে তার আয় বেশ ভালই ছিল। কারণ মানুষ করোনার ভয়ে প্রচুর জিনিসপত্র কিনে রেখেছেন। তখন তার ভালই চলত এখন। মানুষ বাজারে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। বোঝা টানাও তার বন্ধ এখন। পরিবার পরিজন নিয়ে চলাই তার খুব কষ্ট হয়ে গেছে। সেলিম নামের আরেক ‘মিনতি’ বা মুটে তার বাড়িতে ৮ জন সদস্য। একা বোঝা বয়ে ৮ জনের সংসার চালান। কিন্তু আর ৮ সংসার চলছে না। আগে যেসব মানুষের বোঝা টানতেন তারা আর বাজারমুখী হচ্ছেন না। আগেই সব কিনে মজুত করে রেখেছেন। ৮ জনের মুখে ভাত দেয়ার মতো তার অবস্থা নেই। বিত্তবানদের কাছ থেকেও তারা এখনও কোন সাহায্য পায়নি। এমন চিত্র ঢাকা শহরজুড়েই রয়েছে। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া সহযোগিতার ৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনি পেয়েছিলেন রিক্সাচালক আমির হোসেন বলেন, বাড়িতে মা ও ছোট দুই ভাই আছে। এটাই তার প্রথম সাহায্য পাওয়া। ছয় দিন ধরে করোনাভাইরাসের কারণে গোটা দেশ যখন লকডাউনে তখন তিনিও এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ঘরেই বন্দী ছিলেন। কিন্তু যেদিন তার জমানো সব খাবার শেষ হয়ে যায় সেদিন সে রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বেড় হলে গুলিস্তান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে এ খাবার পেয়ে যান। দুদিন ভালভাবেই ওই খাবার খেয়ে ঘরেই ছিলেন। কিন্তু সোমবার আবার তাকে রিক্সা নিয়ে বের হতে হয়েছে। ঘরে খাবার নেই। খাবারের জন্য সারা দিন রিক্সা চালিয়ে মাত্র আড়াইশ’ টাকা আয় করতে পেরেছেন। এখন থেকে ৭০ টাকা রিক্সার জমা দিতে হবে। বাকি টাকা দিয়ে বাজার সদাই করে ঘরে ফিরবেন। মানুষ পথ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ রিক্সায় উঠতে চান না। রিক্সাকেও তারা ভয় পাচ্ছেন। এমন অনেক কাহিনীর কথা গত কয়েক দিনে জানা গেছে।
×