ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাজীবী মানুষের ঘরেই ডিজিটাল কর্মচাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২ এপ্রিল ২০২০

পেশাজীবী মানুষের ঘরেই ডিজিটাল কর্মচাঞ্চল্য

মাজহার মান্না ॥ করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশজুড়ে মানুষ ঘরবন্দী, বলা যায় সারাদেশে এখন লকডাউন অবস্থা। বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির এখন দ্বিতীয় দফা চলছে। ফলে মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন, নিশ্চল। প্রকৃতির কাছে সবাই অসহায়। আর করোনাভাইরাস প্রতিরাধে প্রশাসনের তৎপরতায় কর্মচাঞ্চল্য সার্বিক জীবনচিত্রও যেন পাল্টে গেছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেনি বিশ্ববাসী। এই জীবনচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। করোনার কারণে মানুষ বাইরে বের না হওয়ায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অনেকের মধ্যে এখন শুরু হয়েছে হাহাকার। অন্যদিকে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এতে বাড়িতে বসেই পেশাজীবী অনেক নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেরে ফেলছেন তাদের অফিসের যাবতীয় কাজ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘর থেকে রুটিন মেনে নিজ নিজ পেশার দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে নিচ্ছেন তারা। চিকিৎসক ও মনোবিদরা এক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইন্টারনেট, ফোন কল, ভিডিও কল এবং সোশ্যাল সাইটে কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে কোন কোন গণমাধ্যমের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই নিজ নিজ অফিসে এসে দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে একই নিয়ম মেনে এই সময়ে পরিবারের লোকজনকে বেশি সময় দেয়ার পাশাপাশি অভিভাবকরা সন্তানদের পড়াশুনায় মনোযোগী হতে তাগিদ দিচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লম্বা ছুটি থাকায় পড়াশুনায় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় সংসদ টিভিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্প্রচারিত মাধ্যমিকের বিষয়ভিত্তিক ক্লাস পাঠদানের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। আর বাড়িতে বসেই নির্দিষ্ট সময়ে এসব ক্লাস গ্রহণে কোমলমতি সন্তানদের মনোযোগী করে তুলছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি পরিবারের অন্য সবাইকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলে নজর রাখছেন তারা। এ অবস্থায় ঘরবন্দী হয়েও যেন কাটছে না দুশ্চিন্তা। এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে সবার মনের মধ্যেই। ফ্যামিলি টাইস’র নির্বাহী পরিচালক খুজিস্থা বেগম জোনাকী বলেন, করোনায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ঘরে বসেই প্রযুক্তিজ্ঞানে নিজে এবং তার সহকর্মীরা অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম করছেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ বলেন, এখন সর্বত্র উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীরা বসে নেই। তারাও নিজেরা সচেতন থেকে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছেন। প্রযুক্তির এ যুগে এমন সময়ে অনেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন এ্যাপসে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। পাকুন্দিয়ার বুরুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হোসেন আলী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লম্বা ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাধ্যমিকে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস পাঠদানের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এসব ক্লাস। সম্প্রচার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত ও করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা ও করণীয় প্রচার করা হয়। বেসরকারী চাকরিজীবী এএফ এম আহাদ ও মুদ্রণ-প্রকাশনা পেশাজীবী ফয়সাল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে বসেই প্রযুক্তির মাধ্যমে যতদূর সম্ভব অফিসিয়াল ও পেশার প্রাত্যহিক কাজকর্ম করার চেষ্টা করছি। জেলা শহরের সতালের বাসিন্দা রূপা বিশ্বাস ও ইউপি সদস্য নয়ন চন্দ্র দাস দম্পতি বলেন, ছুটির সময়ে খ্যাতিমান শিক্ষকদের নিয়ে টিভিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস পাঠদান করানো হচ্ছে। এটি শিক্ষার্থীদের খুবই উপকারে আসবে। ঘরে থেকে স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েকে তারা এসব ক্লাস পাঠদানে মনোযোগী হতে নিয়মিত তদারকি করছেন বলে জানান। জেলা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা কমিটির সদস্য পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হক বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়িত প্রশাসনের সঙ্গে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষেরা খুবই বিপদে আছে। এখন বৃত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে মনে করেন চাকরিজীবীরা তো মাস শেষে বেতন পান। কিন্তু কিছু আইনজীবী আছেন যারা সপ্তাহের রোজগার দিয়ে চলেন, তাদের কী হবে? তারা কীভাবে চলবে। তাদের কথাও চিন্তা করতে হয়। সাধ্যমতো তাদেরও সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের সমন্বয়কারী এনায়েত করিম অমি জানান, সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা বিতরণের জন্য নিজেরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে। এর বাইরে মানুষের ঘরে থাকাকে উৎসাহিত করতে শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলা ক্যাব সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু জানান, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ থাকার পরও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শিশুখাদ্য এবং স্যানিটাইজেশন দ্রব্যাদির দাম কৃত্রিম সঙ্কটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব ব্যবসায়ী ভোক্তাদের কাছে ‘গণদুষমন’। প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন।
×