ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র জানতে নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২ এপ্রিল ২০২০

করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র জানতে নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে

নিখিল মানখিন ॥ দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র জানার জন্য করেনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে সীমিত পরিসরে হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। এখন অনির্দিষ্ট হয়ে গেছে করোনার বাহক। এখন বিদেশ ফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও অনেকের নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব উপসর্গ নিয়ে গত এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর আইইডিসিআর’র একক কর্তৃত্বের কারণে সরকারী-বেসরকারি সাতটি ল্যাব করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে পারছে না। আইইডিসিআর থেকে এসব ল্যাবে কোন নমুনা (স্যাম্পল) পাঠানো হচ্ছে না। সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহের অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না এসব প্রতিষ্ঠানকে। নমুনা সংগ্রহে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলও তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে আগের মতোই শুধু ঢাকায় দুটি ও চট্টগ্রামে একটি ল্যাবে চলছে পরীক্ষা। এতে প্রস্তুত সাতটি ল্যাব নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। করোনাভাইরাস সংক্রমণের চারটি স্তর রয়েছে। চারটি স্তরের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়টি হলো কমিউনিটি সংক্রমণ। এই স্তরে রোগ কোন সম্প্রদায়গতভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ সংক্রমিত হয়। সম্প্রদায়ের সংক্রমণ তখনই হয় যখন কোন রোগী সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও বা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে কোন একটি দেশে সফর না করা সত্ত্বেও তার শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এই পর্যায়ে, সংক্রমিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই সীমিত পরিসরে হলেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকলে দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো দরকার। দৈনিক গড়ে ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ব্যাপকতা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যাবে না। ফলে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০টি ল্যাব এ ভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও ১৯টি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই এগুলো কাজ শুরুর মতো অবস্থায় যাবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা একটি পরিকল্পনা করে কাজ করছি। তাই অনেক ল্যাব প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়নি, বিষয়টি সে অর্থে ঠিক নয়। আমরা মনে করি, যখন আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না, তখন ওই ল্যাবগুলোর সহায়তা নেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আমরাই নমুনা সংগ্রহ করব এবং কোন ল্যাব পরীক্ষা করবে, সেটিও আমরাই নির্ধারণ করব বলে জানান ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- করোনাভাইরাসে সন্দেহভাজন সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একাধিকবার অধিকতর পরীক্ষা করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৯টি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত পুল করে নমুনা সংগ্রহে ব্যাপক জনবল অন্তর্ভুক্ত করা না হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। সন্দেহভাজন অনেকেই থেকে যাবে পরীক্ষার বাইরে। ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ একেএম শামসুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সন্দেহভাজন যে হবে, তাকেই পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে জানানো হলো নতুন দু’জন রোগী পাওয়া গেছে। তাদের একজনের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা নিশ্চিত প্রমাণ করে সামাজিক সংক্রমণ চলছে। এই চরম মুহূর্তে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নমুনা সংগ্রহের জন্য পুল করতে হবে। কোন ল্যাবে নমুনা যাবে সেটা কন্ট্রোল রুম ঠিক করে দেবে। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে রোগীর ফোন পাওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষা করতে হবে। সব পরীক্ষার ফল কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশ করা দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম শামসুজ্জামান। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য সরকার পরীক্ষাগার বৃদ্ধি করেছে। এটা নিঃসন্দেহে ভাল একটি উদ্যোগ। এখন আমাদের যে কাজটা সবচেয়ে বেশি জরুরী সেটা হলো কোন অঞ্চল থেকে ফোন কল বেশি আসছে সেখানে অনুসন্ধান ও জরিপ চালিয়ে দেখতে হবে যে, রোগটা সমাজে ঠিক কতটা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে সেখানে লকডাউন জারি করতে হবে। এছাড়াও ভাইরাসটি কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ভাইরাসটি সমাজে একবার ছড়িয়ে পড়লে আমাদের ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। ব্যাপক প্রাণহানিও ঘটতে পারে। সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সচেতন ভূমিকা পালন করা জরুরী। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার পরীক্ষা অবশ্যই বাড়াতে হবে। নিউমোনিয়ার রোগীদের পরীক্ষা করতে হবে। করোনা সন্দেহ দেখা দেয়া প্রত্যেকের পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষা করা গেলেই রোগটি ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটা জানা যাবে এবং নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আর তা না হলে এক সময় ব্যাপক হারে রোগটি ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে বলে মনে করেন অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম। করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বুধবার আইইডিসিআর’র ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (এমআইএস) ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যাওয়া কতজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে জানানো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহজনক করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে দেশের বিভিন্ন হাসপতাালে। অসংখ্যবার কল দিয়ে সাড়া পাচ্ছেন না শত শত করোনা উপসর্গে আক্রান্ত মানুষ। করোনার মতো উপসর্গ শোনার পরও নমুনা পরীক্ষা করানোর বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছেন হটলাইনে থাকা চিকিৎসকেরা। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর রোগীটির দাফন/সৎকার করা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৈরিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী। কিন্তু মৃত রোগীটির নমুনা পরীক্ষা হয় না। দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব চিত্র বেরিয়ে এসেছে। রাজশাহীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু ॥ শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বুলবুল নামে এক যুবক মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যায়। বুলবুলের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়। তবে সে করোনা সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ আজিজুল হক আজাদ জানান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুলবুল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভর্তি হয়। এরপর তাকে ৩৯ নং ওয়ার্ডে নেয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন দেয়ার সময়ই সে মারা যায়। তার এ্যাজমা ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে আমরা কোন চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ পায়নি। আগেই সে মারা যায়। তিনি আরও জানান, বুলবুলের করোনার উপসর্গ ছিল কিনা তাও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় নমুনা সংগ্রহও করা যায়নি। তবে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা খুব জরুরী ছিল। বুধবার থেকে এখানে করোনার উপসর্গ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে তার আগেই মৃত্যু হয়েছে। রাতেই তার লাশ বাড়ি নিয়ে গেছে স্বজনরা। সাতক্ষীরায় উপসর্গ নিয়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু ॥ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি ও গ্যাসজনিত কারণে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দেকাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত গৃহবধূর নাম শিল্পী খাতুন (৩৩)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের সিরাজুল কারিকরের স্ত্রী। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৈয়েবুর রহমান দুপুরে জনকণ্ঠকে জানান, মৃতের শরীরে করোনার কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। বুকে ব্যথা ও হার্ট এটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান। পরিবার ও তারা ইসলামী অনুশাসনে চলেন এবং স্ত্রীর শরীর কোন করানোর লক্ষণ না থাকায় স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি বলে স্বামী জানান। সীতাকু-ে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু ॥ চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা আরফা বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় মোঃ আবুল হোসেনের স্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম নগরীর জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। বিকেলের দিকে জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তার অসুন্থ নারীকে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে রেফার করেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই মৃত্যু ঘটে। শরীয়তপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক রোগীর মৃত্যু ॥ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে শ^াসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া এক রোগী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা গেছেন। নড়িয়া নিবাসী রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে ওই রোগী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ৯টায় তার মৃত্যু ঘটে। তবে তিনি প্রবাসী ছিলেন না। তিনি শনাক্তকৃত টিবি রোগী ছিলেন বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, এর আগে গত ১৯ মার্চ নড়িয়া উপজেলা নিবাসী রফিকুল ইসলাম শ^াস কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২৩ মার্চ পযর্ন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন তার স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে টিবি (যক্ষা) রোগ ধরা পড়েছিল। এরপর সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মতে সে বাড়িতে অবস্থান করে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে আসছিল। মেহেরপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক রোগীর ভর্তি ॥ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠা-া, জ্বর, কাশি নিয়ে একজন ভর্তি হওয়ায় করোনা সন্দেহে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়েছে রোগীরা। এমনকি কর্তব্যরত সেবিকারাও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাতে সেবা দিতে ভয় পাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে ওই ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানান, রোগীটি করোনায় আক্রান্ত কিনা তা নির্ণয় করতে নমুনা সংগ্রহ করবে আইইডিসিআর। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এম রিয়াজুল আলম জানান, মঙ্গলবার রাতে শ^াসকষ্ট, ঠা-া, জ্বর, কাশি নিয়ে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বুধবার সকালে হাসাপাতাল থেকে আইইডিসিআর এ যোগাযোগ করেছি। রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর জানা যাবে তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা। নেত্রকোনা মোহনগঞ্জে করোনা উপসর্গের রোগী ভর্তি ॥ মোহনগঞ্জে রমজান আলী (১৭) নামে একজনকে করোনাভাইরাস সন্দেহে বুধবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে মোহনগঞ্জ হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার অলক কান্তি তালুকদার। রোগীটি পৌর শহরের উত্তর দৌলতপুর গ্রামের আব্দুস ছোবানের ছেলে। শরীরে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি রোগ নিয়ে তিনি গত ৪ দিন আগে চট্টগ্রাম থেকে মোহনগঞ্জে নিজের বাড়িতে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের একটি খাবার হোটেলে কর্মরত ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্দেহজনক করোনা রোগী ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে একজনের বাড়িতে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। মঙ্গলবার রাতে রূপসদী ইউপি চেয়ারম্যান মহসীন মিয়ার মাধ্যমে সেখানকার দক্ষিণপাড়ার ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পায় স্থানীয় স্বাস্থ্য ও উপজেলা প্রশাসন। এরপর তারা রাতেই সেখানে গিয়ে ওই বাড়িটি লাল পতাকায় চিহ্নিত করে দেন। তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আল মামুন জানান, তার উচ্চ মাত্রার জ্বর ও কাশি ছিল। সে কারণে করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করা হচ্ছে। আমরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাব। আক্রান্ত সন্দেহ ব্যক্তি একজন সরকারী চাকরিজীবী। সে আখাউড়ায় কর্মরত। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সরোয়ার জানিয়েছেন, আক্রান্ত সন্দেহ ব্যক্তি ভাল আছেন। নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। ঝালকাঠিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক শিশুর মৃত্যু ॥ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া বন্দরের সরদারপাড়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন বছর বয়সী শিশু আবির সরদারের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এ মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়ে বাড়ির ৬ পরিবারের ৩০ জনকে হোম কোয়ারন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া সরদারপাড়া এলাকায় শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আবির ওই এলাকার শহীদ সরদারের ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, জ্বরে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, তারপরেও আমরা ওই বাড়ির লোকজনকে বাইরে বের হতে নিষেধ করেছি। তারা অন্তত ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবে। ফেনীতে একজনের মৃত্যু ॥ ফেনীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার পশ্চিম ছনুয়া গ্রামের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেনীর সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যুবকের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। কি কারণে যুবকের মৃত্যু হয়েছে তা জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। নড়াইলে একজনের মৃত্যু ॥ শ্বাসকষ্ট, জ্বর, পাতলা পায়খানা, গা ব্যথা ও বমিতে আক্রান্ত হয়ে নড়াইলে শওকত আলী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শওকত শহরের দক্ষিণ নড়াইলের ওমর আলীর ছেলে। তিনি রূপগঞ্জ বাজারে সুপারির ব্যবসা করতেন। নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, রোগীর শ্বাসকষ্ট ও বমি ছিল। জ্বর মাঝে মধ্যে আসছে, আবার চলে গেছে। হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়; কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, দক্ষিণ নড়াইলে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কেউ আতঙ্কিত না হয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পুরো জেলায়ই জোরদারভাবে করা হচ্ছে। মৃত শওকত আলীর নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজনের মৃত্যু ॥ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একজন সন্দেহভাজন করোনা রোগী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে ৫৭ বছর বয়সের এই রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আরও জানান, এই রোগী পুরান ঢাকা থেকে এসেছিলেন। হাসপাতালে আসার আগে আরও কয়েককটি হাসপাতলে তাকে ভর্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। রোগীর মৃত্যুর পর তার শরীর থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে জানা যাবে তার করোনা হয়েছিল কিনা। ২০১৭ সালে এই রোগীর স্ট্রোক হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
×