ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরও কঠিন সময় আসছে

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২ এপ্রিল ২০২০

আরও কঠিন সময় আসছে

করোনাভাইরাস ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, আরও কঠিন সময় আসছে। আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক সময়। এ জন্য আমাদের সকলের প্রস্তুতি নিতে হবে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বক্তব্যে এই করোনাভাইরাস মহামারীকে প্লেগের সঙ্গে তুলনা করেন ট্রাম্প। খবর বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের। তিন মাস আগে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করা এ ভাইরাস আদৌ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারবে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর কতটা প্রভাব পড়বে, সেসব বিষয়ে গত কয়েকটি সপ্তাহে বার বার অবস্থান বদলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪ হাজার। কেবল মঙ্গলবারই মৃত্যু হয়েছে ৮৬৫ জনের, যা যুক্তরাষ্ট্রে একদিনের রেকর্ড। সংক্রমণ ছড়ানোর গতি কমাতে পুরো দেশের মানুষকে ঘরে থাকার যে নির্দেশ ট্রাম্প দিয়েছিলেন, পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় ইতোমধ্যে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে পুরো এপ্রিল মাস। প্রতি চারজন নাগরিকের মধ্যে তিনজনই এখন আছেন লকডাউনে। যেসব কঠোর ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে নিয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক অনুসরণ করা গেলেও মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারে এক লাখ থেকে আড়াই লাখের মধ্যে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া বক্তব্যে করোনাভাইরাস মহামারীকে ট্রাম্প প্লেগ রোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘সামনের দুটো সপ্তাহ হবে খুবই বেদনাদায়ক- খুব খুব কষ্টকর দুটো সপ্তাহ। আমি চাই, সামনে যে খারাপ সময় আসছে, আমেরিকার মানুষ সেজন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখুক। এখন পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে উঠেছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর ‘তিক্ত কথায় মিষ্টি প্রলেপ’ দিতে চাইছেন না, তিনি আর ইস্টারের আগে ‘মিরকলের’ কথা বলছেন না। শীঘ্রই পুরোদমে ব্যবসা বাণিজ্য চালু করার আশার কথাও তিনি আর শোনাচ্ছেন না। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ১৮০ দেশে এ পর্যন্ত সাড়ে আট লাখের বেশি মানুষ নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৪২ হাজার ৩০০ জন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমান পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সামনে ‘সবচেয়ে বড় পরীক্ষা’ হিসেবে দেখছেন। তার শঙ্কা, করোনাভাইরাস পৃথিবীকে যে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, নিকট অতীতে ততটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মানুষকে হয়ত আর দেখতে হয়নি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী আগস্ট নাগাদ ৮২ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। পরিসংখ্যানের ১২টি মডেল পর্যালোচনা করে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মেনে চলার সময়সীমা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। গত রবিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ড. ডেবোরাহ বার্কস। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় ডেবোরাহ বার্কস অবশ্য আরেকটি মডেলের কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস এ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভিন্ন দেশের সরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা ওই মডেলটি জনপরিসরে তুলনামূলক বেশি পরিচিত। ডেবোরাহ বলেন, ‘এই বিশ্লেষণ এক হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরছে। কোন অঙ্গরাজ্য বা শহরই এই সংক্রমণের বাইরে থাকবে না। এমনকি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেও মৃতের সংখ্যা খুব বেশি কমানো যাবে না। সোমবার পর্যন্ত যে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তাতে মধ্য-এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়েই যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হবে। ওই পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ২৪ হাজার হাসপাতাল বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত ৬০ হাজার কম। এতে আরও বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মে মাস পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে।
×