ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা দেখছেন না টিম পেইন

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১ এপ্রিল ২০২০

বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা দেখছেন না টিম পেইন

মিথুন আশরাফ ॥ সারাবিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়। সব দেশেই সব ধরনের খেলা স্থগিত। একের পর এক ম্যাচ, ইভেন্ট, সিরিজ, লীগ বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াতেও তাই হয়েছে। অন্য খেলার মতো ক্রিকেটাঙ্গন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আর তাতে করে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত ক্রিকেট সফরসূচীতেও দারুণভাবে প্রভাব পড়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল, জুনে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। সেই সম্ভাবনা আরও বাড়ল যখন অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক টিম পেইন নিজেই এ সফরের সম্ভাবনা দেখছেন না। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে জুনের প্রথম সপ্তাহেই আসার সূচী নির্ধারণ করা আছে। ১১ জুন চট্টগ্রামে প্রথম ও ১৯ জুন মিরপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরুর সূচী আছে। হাতে সময়ও আছে। এখনও দুই মাস বাকি আছে। কিন্তু যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে এ সফর যে হচ্ছে না, তা টিম পেইন ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছেন। এ সফর নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না বাংলাদেশ সফর হবে, বিশেষ করে জুন মাসে। আর এটা বলার জন্য নিশ্চয়ই আইন্সটাইন (বিখ্যাত বিজ্ঞানী) হতে হবে না। তবে সিরিজ বাতিল হোক বা পিছিয়ে দেয়া হোক-এখনই এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এখানে দুইটি টেস্ট খেলা হবে এবং তা না হলে আমরা খুব মিস করব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, হয় তো কিছু সিরিজ বাতিল হবে, কিছু হয়তো সামনে এগুবে অথবা কিছু সিরিজ হয়তো স্থগিত করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে। আর খুব সম্ভবত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সব খেলা শেষ করার জন্য টানা পাঁচ সপ্তাহও মাঠে থাকা লাগতে পারে খেলোয়াড়দের।’ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে অস্ট্রেলিয়ানরা। কারণ, তারা টেস্ট বিশ্বকাপ খ্যাত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিততে চায়। কিন্তু যেভাবে করোনা বিশ্ব মহামারী আকার ধারণ করেছে, ‘লকডাউনে’ পড়ে গেছে বিশ্ব; তাতে সহসাই ক্রিকেটে যে ফেরা হচ্ছে না তা বোঝা যাচ্ছে। তাতে করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সূচীতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে নিশ্চিতই। ফাইনাল ম্যাচও যে যথা সময়ে হতে পারবে না, তাও নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। তবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যে পয়েন্ট পদ্ধতি করেছে, তাতে অজি অধিনায়ক খুব খুশি। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, খেলোয়াড়রা এই পয়েন্ট সিস্টেমটা খুব উপভোগ করছে। কারণ প্রত্যেকটা ম্যাচই এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে আপনি একটি শিরোপার জন্য খেলে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, সব খেলোয়াড়রা এটাই চাইবে যে, যে কোন মূল্যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপটা শেষ করা হোক। তবে আবারও বলছি, কয়েকটা টেস্ট ম্যাচের চেয়ে আরও কঠিন পরিস্থিতি এখন সারাবিশ্বে। কিছু টেস্ট মিস করলেও সেটা আমাদের তেমন ক্ষতি করবে না।’ অনেক চড়াই উতরাইয়ের পর বাংলাদেশ সফরে আসবে অস্ট্রেলিয়া, সেই সূচী নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে তাও ভেস্তে যেতে বসেছে। যদিও ম্যাচ দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। আর এখানেই বাংলাদেশের স্বস্তি জড়িয়ে থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়া যদি এ মুহূর্তে দুটি টেস্ট খেলতে নাও আসে, সময় সুযোগ বুঝে পরে হলেও খেলতে হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে থাকতে হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুধু নয়, যাদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলা আছে; তা খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। তা না হলে পয়েন্ট হারাবে। চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে তখন ছিটকে পড়ে যেতে পারে। তাই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এখন না আসলেও বাংলাদেশে আসতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। অবশ্য বাংলাদেশে যখন আসবে অস্ট্রেলিয়া, তখন টিম পেইনের নেতৃত্বেই আসবে, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, স্টিভ স্মিথের নেতৃত্বের ওপর পড়া নিষেধাজ্ঞাও যে সরে গেছে। এমনও হতে পারে, স্মিথই অধিনায়ক হয়ে বাংলাদেশের টেস্ট খেলতে আসলেন। টিম পেইন এগুলো নিয়ে ভাবতে নারাজ। বাংলাদেশ সফরের সঙ্গে এমনকি এ্যাশেজ নিয়েও ভাবনা নেই টিম পেইনের। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ভাবনায় আছে পেইনের, ‘বিশ্ব এখন বড় সমস্যা সামলাচ্ছে। পুরো পরিস্থিতিই যে কোন খেলা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বের সঠিক রাস্তায় ফেরা, মানুষের সুস্থতা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন। এ্যাশেজ নিয়ে ভাবছি না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা এবং শিরোপা জেতা এখন লক্ষ্য। আমার মনে হয়, সব ক্রিকেটারই চাইবে, যে কোনভাবেই হোক এটি (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) শেষ করতে। কিন্তু তা যদি না হয়, বুঝতে হবে, বিশ্বে এই মুহূর্তে আরও বড় কিছু ইস্যু আছে। সেই ইস্যুর চেয়ে কিছু টেস্ট ম্যাচ মিস করা আমাদের খুব একটা ভোগাবে না। স্মিথকে নিয়ে টিম পেইন বলেন, ‘আমাদের অনেক আছে বেছে নেয়ার জন্য। স্টিভেন স্মিথ আগে করেছে। আরও কিছু খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে যেমন ট্রেভিস হেড, এ্যালেক্স ক্যারি, মারনাস ল্যাবুশেন, প্যাট কামিন্সও আরেকজন। আমরা সত্যিকারের গভীরতা তৈরি করার কাজ করছি। আমার যখন সময় ফুরোবে অনেক বিকল্প থাকবে। স্মিথের সঙ্গে আমার কথা হয়নি এখনও। সে সম্ভবত রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়কত্বে ফিরছে, দ্য হ্যান্ড্রেডেও অধিনায়কত্ব করবে। যেটা করতে সে পছন্দ করে। স্মিথ যদি সিদ্ধান্ত নেয় (আবার অধিনায়কত্ব করার), তাহলে আমি তাকে পুরো সমর্থন দেব।’ স্মিথ যদি চায়, তাহলে নেতৃত্বে ফিরতে পারেন। বাংলাদেশে যখন অস্ট্রেলিয়া সফর করতে আসবে, তখন হয়ত স্মিথই নেতৃত্ব দিতে পারেন। তবে জুনে যে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নেই, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক টিম পেইন।
×