ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

করোনায় অসচ্ছল শিল্পী-কুশলীদের সহায়তার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১ এপ্রিল ২০২০

করোনায় অসচ্ছল শিল্পী-কুশলীদের সহায়তার উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা কিছুতে আছড়ে পড়ছে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার অভিঘাত। তাই স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে থমকে গেছে শিল্প-সংস্কৃতিচর্চা। সেই আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। গত ২২ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের টিভি নাটকের শূটিং। সেই সুবাদে টিভি নাট্যশিল্পে নিযুক্ত অনেকেই পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। ক্রমশ কলেবর বেড়ে বর্তমানে টিভি নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বা খ্যাতিমান শিল্পীরা সাময়িক কর্মহীনতার আঘাতকে সামলে নিলেও বেকায়দায় পড়েছেন দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করা অভিনয়শিল্পী ও কুশলীরা। স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করা এই মানুষগুলো নিমজ্জিত হয়েছেন আর্থিক সঙ্কটে। তাদের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে টিভি নাটককেন্দ্রিক চারটি সংগঠন। এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে টানাপোড়েনে পড়া অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এই চারটি সংগঠন হচ্ছে অভিনয় শিল্পী সংঘ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এ্যাসোসিয়েশন। এ বিষয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম জনকণ্ঠকে বলেন, উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সাংগঠনিকভাবে অসচ্ছল অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি সংগঠন থেকেও যে যার মতো করে এই তহবিল গড়ে তুলছে। এই তহবিলের অর্থ প্রদান করা হবে মূলত অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। টেলিভিশন নাট্যশিল্পে এখন নেমেছে স্থবিরতা। এই সাময়িক কর্মহীনতা প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা সামলে নিলেও বিপাকে পড়েছেন স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করা শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সেই বাস্তবতায় আমরা এখন অসচ্ছল শিল্পী ও কুশলীদের তালিকা তৈরি করছি। খোঁজ নেয়া হচ্ছে, কার কার প্রয়োজন বেশি। এই তালিকায় অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে শূটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত লাইটম্যান, গাড়িচালক, মেকাপম্যান, প্রোডাকশন বয়, প্রোডাকশন ম্যানেজার সবাই অন্তর্ভুক্ত হবে। তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এপ্রিলের ১ বা ২ তারিখের মধ্যে টিভি নাটকের আন্তঃসংগঠসমূহের বৈঠকের মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তারপর অসচ্ছলদের সহায়তা প্রদান করা হবে। শুরুতে আমরা নিজেরা এই তহবিল গড়লেও পরবর্তীতে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা চাইব। সেজন্য ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনও করা হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের চেয়ে বেশি টাকা লগ্নিœ হয় টেলিভিশন নাটকে। টিভি নাটককে ঘিরে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়। সেই হিসাবে মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয় টিভি নাটককে কেন্দ্র করে। এর মঙ্গে জড়িয়ে থাকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের রুটি-রুজি। সে কারণে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই শিল্প এবং শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন। এর মধ্যে অভিনয় শিল্পী সংঘের তালিকাভুক্ত শিল্পীর সংখ্যাই ১১০০। এর মধ্যে আবার অনেক শিল্পী আছেন সংঘের বাইরে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিল্পীই চরমভাবে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হবেন। নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, অভিনয়শিল্পী এবং কলাকুশলী মিলিয়ে টিভি নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই করোনা পরিস্থিতিতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। বিশেষ করে শিল্পীদের মধ্যে দৈনিক দুই হাজার টাকা বা তার চেয়েও কম মজুরির ভিত্তিতে অভিনয় করা শিল্পীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের রুটি-রুজি বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে এসব শিল্পীর জমানো অর্থ বলতেও তেমন কিছু নেই যে আগামী দিনগুলো চালিয়ে নেবে। পাশাপাশি লাইটম্যান, ক্যামেরাম্যান, ক্যামেরা ক্রু, গাড়িচালকসহ শূটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। আমরা এসব অসচ্ছল ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী বা কলাকুশলীদের সহায়তায় তহবিল গড়ছি। অনেক নাট্যকারই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সমন্বিত সহায়তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ আমরা তুলে দেব অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। পরবর্তীতে সরকারীভাবেও আমরা সহযোগিতা চাইব।
×