ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তিতে নগরীর খেটে খাওয়া মানুষ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৩১ মার্চ ২০২০

দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তিতে নগরীর খেটে খাওয়া মানুষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারী ছুটি বাড়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন নগরীর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম আরেকদফা বেড়ে গেছে। কমেছে শুধু পেঁয়াজ, রসুন, ব্রয়লার মুরগির দাম। এছাড়া বেশিরভাগ পণ্যের দাম সপ্তাহখানেক আগে বেড়ে আর কমছে না। কিন্তু লকডাউনের ফলে নগরীর সাধারণ মানুষ বিশেষ করে রিকশা চালক, সিএনজি চালক, অটো চালক, ফুল ও ফল বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, চানাচুর বিক্রেতাসহ ভ্রাম্যমান হকাররা বেকার হয়ে পড়ছেন। কর্মহীন এসব মানুষের আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সরকারী- বেসরকারী সাহায্য সহযোগীতা যা আসছে তা অপ্রতুল। সাহায্য সহযোগীতা না বাড়লে আইনশৃঙ্খলা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষায় চলমান ছুটিতে নগরবাসীর কেউ আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে করে যারা প্রতিদিন রোজগার করে সংসার চালান এরকম স্বল্প আয়ের মানুষের আয় উপার্জন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারীখাতে সাহায্য সহযোগীতার যেসব খবর সোস্যাল মিডিয়ায় দেয়া হচ্ছে তা অনেককাংশে হচ্ছে লোক দেখানো, কিংবা সস্তা বাহবা পাওয়ার আশায়। সত্যিকার অর্থে সাধারণ গরিব মানুষ সঙ্কটের মধ্যে আছেন। অন্যদিকে মধ্যবিত্তরা আগে-ভাগে বাজার করে ঘরে ঢুকে গেছেন। বাজার ফুরিয়ে গেলে আবার আসছেন বাজারে। কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো সব খাদ্যপণ্য। আর উচ্চবিত্তের মানুষ সব হিসেব-নিকেশের বাইরে। চলমান লকডাউনে তাদের ব্যস্ত সময় কাটছে টিভি দেখে কিংবা বই পড়ে। মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়-পণ্যদ্রব্যের কোন সঙ্কট নেই। ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে বাহারী সব পণ্য। বড় বাজারগুলোতে লোকজনের ভিড় না থাকায় বুঝা যায়-লকডাউন চলছে, ছুটিতে রয়েছেন নগরবাসী। স্বল্প আয়ের মানুষরা আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে বাজার করতে পারছে না। জিনিসপত্রের দাম যতটুকু বাড়ছে তা সামাল দেয়া সম্ভব যদি উপার্জন ঠিক থাকে। কিন্তু আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় অনেকেই নিত্যপণ্যের কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে চাল কিনছিলেন চা বিক্রেতা হান্নান মিয়া। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে তার চার দোকানটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে আয় উপার্জন নেই। হাতে যে টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে তা শুধু মালিকই জানেন। তিনি বলেন, আজ আবার ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থাৎ আরও এক সপ্তাহ দোকান বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় সংসার চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নবগ্রামের ঠেলাচালক সালাম জানান, করোনার প্রভাবে ছুটি থাকায় তার ঠেলাগাড়ি এখন আর কাজ নেই। আয় উপার্জন নেই, হাতে জমানোও শেষ। এ অবস্থায় ধারেেদনা করে সংসার কোনমতে চলছে। নতুন করে কাজকর্ম শুরু না হলে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কট তৈরি হবে বলে জানালেন তিনি। জানা গেছে, এরকম হান্নান ও সালামের মতো লাখ লাখ স্বল্প আয়ের মানুষের বাস এই ঢাকা শহরে। যারা প্রতিদিন আয় উপার্জন করেন। সেই টাকা বিকাশে গ্রামে বসবাসরত মা-বাবা ও স্ত্রীকে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এরা আজ সবাই বেকার হয়ে পড়ছেন। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন এসব মানুষ। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান করোনার প্রভাবে নিত্যপণ্যের বাজারে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের। তবে এসব স্বল্প আয়ের মানুষের দিক চিন্তা করেই সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছে। এছাড়া সরকারের ওএমএস কার্যক্রম চালু আছে। এর পাশাপাশি সরকারী অন্যান্য সহযোগীতা অব্যাহত আছে। জানা গেছে, করোনার প্রকোপে সবকিছু বন্ধ থাকায় ঢাকার লাখ রাখ হকারও বেকার হয়ে পড়ছেন। এতে করে তাদের কেনাকাটা কমে গেছে। আয় উপার্জনহীন এসব হকার সম্প্রদায় এখন সরকারী সহযোগীতা পাওয়ার প্রত্যাশায় আছেন। এছাড়া বেসরকারীখাতের সহযোগীতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যথায় বেকার হয়ে পড়ে এসব মানুষ বড় ধরনের আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়বেন। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ধনী ও গরিবের আয় বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা অর্থনীতিবিদরা সব সময়ে বলে আসছেন। শুধু অর্থনীতিবিদ কেন, পৃথিবীর সব বিবেকবান সব মানুষ চান সমাজের সবাই ভাল থাকুন স্বস্তিতে থাকুন। করোনার প্রভাবে স্বল্প আয়ের গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের আয় উপার্জন নেই, বেকার হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় তাদের আর্থিক সহযোগীতার চেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন খাদ্য সহায়তা। তাদের সহযোগীতার জন্য সরকারের তরফ থেকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আবার বেড়েছে চালের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই চালের। বর্তমান প্রতিকেজি মোটা চাল ৪২-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে এই চাল ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে ঢাকায়। প্রতিকেজি ডালে ৩০ টাকা বেড়ে এখস ৮০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে ভোজ্যতেল ৯৩-৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া অন্যান্য দ্রব্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×