ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১ এপ্রিল ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ

স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে ভরসা দিয়েছিলেন চলমান দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার। পরিবারের আপনজনের মতোই তারও আগে থেকে, যখন থেকে এ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় বক্তব্য প্রদানকালে দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। ভাষণে দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সরকারের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার দিকগুলোও দেশবাসীর কাছে তিনি স্পষ্ট করেছেন। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী প্রাসঙ্গিক বহু বিষয়ই তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করার বিষয়টি এবং নতুন রোগকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য সঠিক নিয়মে সংগ্রাম করার প্রেরণাই তার ভাষণ থেকে দেশবাসীর মূল প্রাপ্তি। দুর্যোগে ভরসা ও মনোবল অত্যন্ত সহায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার পরামর্শ ও বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর পুনঃপুন সতর্কতার আহ্বান থেকে এটাই স্পষ্ট যে, প্রতিক্ষণই তিনি চলমান সঙ্কট সম্পর্কে অবহিত এবং দেশবাসীকে সুরক্ষার জন্য সর্বতোভাবে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি যথার্থই বললেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না। বাইরে বের হলে মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলুন। যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছেন, তাঁরা ১৪ দিন সম্পূর্ণ আলাদা থাকুন। ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন। যেখানে- সেখানে কফ-থুতু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ঘরে বসে প্রার্থনা করুন। পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী এবং দেশের মানুষের জীবন রক্ষার্থে এসব পরামর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।’ এর প্রতিটি বাক্য বর্তমান সময়ের জন্য মহাগুরুত্বপূর্র্ণ। প্রধানমন্ত্রী আবারও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস অবশ্য প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছে। পরিবারের সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দেয়া এবং আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেশবাসী সর্বদা স্মরণে রাখবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। বিশ্বের উন্নত সব দেশ যখন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, সে সময়ে আতঙ্কিত না হওয়া এবং ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়টি প্রধান বিবেচ্য। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের মানুষকে এই প্রাণঘাতী সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা, এমন অঙ্গীকার সরকারপ্রধানের মুখ থেকে শুনতে পাওয়া আবশ্যক ছিল। তারপরও কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত পরামর্শ মানুষকে স্বস্তি দেবে। ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যত দূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে- এমন বার্তাই এখন জরুরী, যা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্যোগের সময়ই মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার, মানবতা প্রদর্শনের। আমাদের প্রত্যাশা, মানুষ মানবতা প্রদর্শনে কার্পণ্য করবে না। স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকরাই বর্তমান সময়ে প্রকৃত যোদ্ধা। তাদের সুরক্ষায় সামান্যতম অবহেলা কাম্য নয়। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দুঃসময়ে সংযত ও মানবিক আচরণ করবে, জনতার বন্ধু হিসেবে ভূমিকা রাখবে- এটাও নিশ্চিত করা চাই।
×