ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন করে করোনায় আক্রান্ত একজন, সুস্থ হয়েছেন ৪

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩১ মার্চ ২০২০

নতুন করে করোনায় আক্রান্ত একজন, সুস্থ হয়েছেন ৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং আরও চারজন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪৯ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ১৯ জন। আর মারা গেছেন পাঁচজন। সোমবার বেলা বারোটার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) হাবিবুর রহমান। নিজ বাসা থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে অংশ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর-এর হটলাইনে কল এসেছে ৪ হাজার ৭২৫টি। এর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ছিল ৩ হাজার ৯৯৭টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫৩ জনের। এদের মধ্যে নতুন করে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি একজন নারী, বয়স ২০ বছর। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত ৪৯ জনের মধ্যে আরও চার জনের শরীরে সংক্রমণ আর নেই। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ বছর। আরও দুজনের বয়স ৬০-এর বেশি। তার মানে বয়োজ্যেষ্ঠ হলেই ঝুঁকিপূর্ণ এমন নয়। চারজনের মধ্যে দু’জন বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনজনের বিভিন্ন রোগ ছিল। এই চার জনের মধ্যে একজন চিকিৎসাকর্মী ও একজন নার্স ছিলেন। সব মিলিয়ে ১৯ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। ডাঃ মীরজাদী বলেন, একটি কেন্দ্রে ৩৬ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। রবিবার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস না পাওয়া যাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে এখনও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩২ জন। আর ৬২ জন আছেন আইসোলেশনে। সব মিলিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন ২৮৪ জন। তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। একদিন কোন কেস ডিটেক্টেড না হলে ধরে নেয়া যাবে না আমরা ঝুঁকিমুক্ত হয়ে গেছি। নিরাপদে আছে বাংলাদেশÑ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ আমাদের দেশ এখন ভাল আছে, নিরাপদে আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালেক। সোমবার দুপুরে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস মিলনায়তনে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ এখন ভাল আছে, নিরাপদে আছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। বাংলাদেশ আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে আমরা ভালভাবে মোকাবেলা করছি। ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। আমাদের ডাক্তার, নার্স সাবই মিলে কাজ করে যাচ্ছে। কারো কোন সমস্যা হলে আমাদের কল সেন্টারে যোগাযোগ করবেন। পাঁচ শতাধিক পিপিই বিতরণ করেছে বিআরআইসি ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসকদের সুরক্ষায় তাদের মধ্যে পিপিই বিতরণ করেছে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ রেডিয়াল ইন্টার-ভেনশন কোর্স (বিআরআইসি)। সংগঠনটির মহাসচিব ও দেশের খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠনের চিকিৎসকরা হৃদরোগ ছাড়াও হার্ট ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক সেন্টার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি চিকিৎসকদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক পিপিই বিতরণ করেন। এ ব্যাপারে হৃদরোগ মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ও সংগঠনটির মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মীর জামাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, সারাবিশ্বে মহামারী আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রধান সৈনিকই হচ্ছে আমাদের চিকিৎসকরা। যেকোন ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করেই আমাদের রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে। এ জন্যই আমাদের কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসকরদের মাঝে আমরা পিপিই বিতরণ করছি। পাঁচ শ’ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আরও পাঁচ শ’ পিপিই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক প্রস্তুত করেছে বিএমএ ॥ সোমবার পাঠানো বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব ডাঃ মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিএমএ ইতোমধ্যে ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকের নামের তালিকা প্রণয়ন করেছে। বিএমএ’র পক্ষ থেকে সারাদেশ থেকে আরও স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকের নাম আহ্বান করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে আরও প্রায় ২ শতাধিক চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং প্রতিনিয়ত অনেকেই বিএমএ এর আহ্বানে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের নাম মোবাইল নম্বরসহ বিএমএ কেন্দ্রীয় অফিসে যোগাযোগ করছেন। আগ্রহীদের বিএমএ ই-মেইল: এ নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ও বর্তমান অবস্থান বা কর্মস্থলের ঠিকানাসহ বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। করোনা হেল্প লাইন চালু করেছে বিএসএমএমইউ ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রোগীদের সুবিধার্থে ও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হেল্প লাইন চালুসহ সময়োপযোগী নানামুখী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রোগীরা জরুরী প্রয়োজনে নি¤েœ উল্লেখিত বিভাগসমূহে বর্ণিত মোবাইল নম্বরে কল করে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। বিভাগ ও মোবাইল নম্বরসমূহ হলোÑ মেডিসিন বিভাগ-০১৪০৬-৪২৬৪৩৭, ০১৪০৬-৪২৬৪৩৮, সার্জারি বিভাগÑ০১৪০৬-৪২৬৪৩৯, নাক, কান, গলা বিভাগ-০১৪০৬-৪২৬৪৪০, বক্ষব্যধিÑ০১৪০৬-৪২৬৪৪১, অবস এ্যান্ড গাইনিÑ০১৪০৬-৪২৬৪৪২. শিশু বিভাগÑ০১৯৮৪-৫১৯৫২৫, ০১৯৫১-৮২০৮৪৩. এরমধ্যে শিশু বিভাগ থেকে নিজস্ব উদ্যোগে গত দু’সপ্তাহ ধরে হেল্প লাইনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। রোগীরা যাতে হাসপাতালে না এসেও চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে ইন্টার মেডিসিন বিভাগ, জেনারেল অবস এ্যান্ড গাইনি বিভাগ, জেনারেল পেডিয়াট্রিক্স (শিশু) বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ ও ডেন্টালের সকল বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অন্য সকল বিভাগে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য জরুরী চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ পর্যন্ত রোগীরা এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। জ্বর সর্দি হাঁচি কাশির রোগীদের জন্য শাহবাগ বাংলাদেশ বেতার ভবনের নীচতলায় ‘ফিভার ক্লিনিক” চালুর মাধ্যমে পৃথক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা সমন্বিতভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই ধরণের রোগীরা ফিভার ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগ, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ, অবস এ্যান্ড গাইনি বিভাগ, নবজাতক বিভাগে বিদম্যান জরুরী চিকিৎসাসেবা প্রদান পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলাদেশ বেতার ভবনের দ্বিতীয় তলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার জন্য ল্যাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
×