ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০ ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধ ;###;৬ জন আটক ;###;৭ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ

করোনা- গুজব রটানো নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনা- গুজব রটানো নিষিদ্ধ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও সরকারবিরোধী তৎপরতার কারণে ২০টি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত আরও ৫০টি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত হয়েছে। এসব থেকেও করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। পর্যায়ক্রমে এগুলোকেও বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যেই এমন অপতৎপরতায় জড়িত থাকার দায়ে আরও ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে আটক হলো ২০ জন। আরও সাত জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যখন বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। দেশের প্রতিটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের আশঙ্কায় দিশেহারা। তখনও করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো ও সরকারবিরোধী বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনা দেশবাসীকে হতভম্ব করেছে। ইতোপূর্বে ঢাকা মহানগর পুলিশ করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে সাত জনকে আটক করার পর তাদের সংশোধন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। তবে এবার সেটি হচ্ছে না। আটককৃত ছয় জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ ও র‌্যাব করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়টির ওপর নজরদারি করছে। বিশেষ করে পুলিশের বিভিন্ন সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ ও র‌্যাবের সাইবার বিভাগ করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে মনিটরিং করতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘মুসলমানদের জন্য করোনাভাইরাস কোন আতঙ্কের কারণ নয়, বরং কাফিরদের প্রতি চরম আজাব-গজব’ শিরোনামের লিফলেট বিতরণ করা হয় গত শনিবার এ সময় ছয় জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে, মোঃ আওকাত হোসাইন (৫৩), মোঃ ফেরদাউস হাসান টিটু (২৫), মোঃ তাওহিদুল ইসলাম (২৫), মোঃ মুসলিম উদ্দিন (২৩), মোঃ মফিজুল ইসলাম (২০) ও মোঃ ফরিদ হোসেন (২০)। তারা একটি পিকআপে করে এমন লিফলেট বিতরণ করছিল। তাদের বহনকারী ঢাকা মেট্রো-ম, ৫১-২৫৯০ নম্বরের পিকআপটিও জব্দ করা হয়। জব্দ করা হয় বহু লিফলেট। ঘটনার সময় একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে লিফলেট বিতরণ করছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ওয়্যারলেসে এমন বার্তা সারা ঢাকায় দেয়া হয়। এ সময় মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে আর পাঁচ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুটি শাহবাগ ও রমনা মডেল থানায় একটি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। আটককৃতদের বরাত দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজারবাগী হুজুর নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় এমন লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতদের দাবি। তারা মোট ৩২ পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা শহরে এই লিফলেট বিতরণ করছিল। এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান। তিনি বলছেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন বা কি উদ্দেশ্যে কারা এসব লিফলেট বিতরণ করছে, তার গভীর অনুসন্ধান চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গুজব বন্ধে সাইবার পেট্রোলিং করা হচ্ছে। র‌্যাব, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সিআইডি বিশেষভাবে এমন পেট্রোলিং করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসে তিন জনের আক্রান্ত হওয়ার সরকারী ঘোষণার পর থেকেই ভাইরাসটি নিয়ে গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এমন ২০টি ফেসবুক আইডি ও পেজ শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুজব ছড়াতে এসব ফেসবুক আইডি ও পেজ চালানোর সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোঃ নাজমুল ইসলাম এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে অনেকে নানাভাবে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে ২০টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুজব বন্ধে সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে। অনেকেই না বুঝে এগুলো শেয়ার করে গুজবটাকে বিস্তৃত করছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে সবাইকে কোন পোস্ট নিশ্চিত না হয়ে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে ৪টি ইস্যুতে গুজব সৃষ্টি করা আরও ৫০টি ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও পেজ। এসব এ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্রের মুসলিমবিরোধী কার্যক্রমসহ বাংলাদেশের সরকার ও সরকারের নানা কাজের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এসব কাজের জন্য সারাদেশ থেকে মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া গুজবের পোস্ট শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ৭ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ইতোপূর্বেও করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে সাত জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। রবিবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে পৃথিবীব্যাপী ভুয়া খবর ও গুজব ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পুলিশ ও র‌্যাব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের উপকমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে, সে জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এজন্য নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আবু সায়েম জনকণ্ঠকে বলেন, সিআইডির সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ যে কোন ধরনের গুজব নিয়েই কাজ করে। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারী ঘোষণার পর স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যাতে দেশবাসীকে আরও আতঙ্কগ্রস্ত করতে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়াতে না পারে, এজন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়মিত ফিল্টারিং করছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে যারা ফেসবুকে সরব, তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। অনেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে চিকিৎসকদের প্রকাশিত মতামত পরিচিতদের জানিয়েছেন। যা খুবই ভাল দিক। ভবিষ্যতে করোনা নিয়ে যাতে কেউ কোন গুজব না ছড়ান, এজন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন। করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বেও সমস্যা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরী স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)। ইতোমধ্যেই বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আবার যারা অন্যত্র চলে গেছেন, তাদের নিকটস্থ থানায় তাদের অবস্থান ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য নম্বর দিয়ে আসার জন্য পুলিশ সদর দফতর নির্দেশনা জারি করেছে। অধিকাংশ বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশীরা এমন নির্দেশনা মানছেন না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। যারা আত্মগোপনে চলে গেছেন, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পুলিশ সারাদেশে অভিযান চালাচ্ছে।
×