ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আতঙ্কে ভেঙ্গে পড়েছে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনা আতঙ্কে ভেঙ্গে পড়েছে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এ্যাম্বুলেন্সে দুদিন ধরে ছয় ছয়টি হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করেও কোথাও ন্যূনতম চিকিৎসা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমাস উদ্দিনের করুণ মৃত্যু নাড়া দিয়েছে পুরো জাতিকেই। গত এক সপ্তাহে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের মৃত্যুর খবর সামনে এলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই। শেষ পর্যন্ত যেন মুক্তিযোদ্ধা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন করোনা মোকাবেলার নামে কিভাবে রীতিমতো যেন ভেঙ্গে পড়েছে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থা। সাধারণ জ্বর-কাশি তো নয়ই, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তরাও চিকিৎসা পাচ্ছেন না হাসপাতালে। চিকিৎসার আশায় ছুটছে মানুষ। সরকারী হাসপাতালে সিট খালি, অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল ও ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারও বন্ধ। রোগীদের কান্না স্পর্শ করছে না ডাক্তারদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও যেন বিকার নেই। যদিও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার একের পর এক খবর আসার প্রেক্ষাপটে সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছুটা হলেও সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, চিকিৎসক ও নার্সরা ভাল কাজ করছেন। তবে কিছু তথ্য এসেছে, প্রাইভেট চেম্বার কম আছে। ডাক্তাররাও কম আসছে। আমি আহ্বান করব সবাই যেন যার যার কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন। তবে পরিস্থিতিতে বিচলিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব (স্বাচিপ) ডাঃ ইকবাল আর্সলান জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমি হাসপাতালের পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে ইতোমধ্যেই কথা বলেছি। মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদায়ের সঙ্গেও কথা বলছি। আসলে করোনার আতঙ্ক থেকে এই অবস্থা। দরকার ডাক্তারদের কাউন্সেলিং। এটা করতে পারলে ভাল হতো। এসব কাজ আগে করা প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে একটা ওয়ার্ক প্লান দরকার ছিল। কিভাবে কি করতে হবে তা আগে হলে ভাল হতো। কাজ হয়তো কদিনে অনেক করা হয়েছে। কিন্তু অনেক দেরিতে হয়েছে। তার পরেও চেষ্টা করছি পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য। এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার হ য ব র ল চিত্রেই খবর আসছে। একদিকে করোনার চিকিৎসা না পাওয়া অন্যদিকে করোনার আতঙ্কে হাসপাতালগুলোকে সাধারণ জ্বর-সর্দি, কাশি এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গেলেও ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলছে না কোন চিকিৎসা। জ্বর-সর্দি, কাশি হলেই করোনা আক্রান্ত হতে পারেন এই ভয়ে চিকিৎসকরা দিচ্ছেন না চিকিৎসা। করোনা আক্রান্ত রোগী এসেছেন কিংবা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন এমন সন্দেহে হাসপাতাল ছেড়ে ডাক্তারের পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। গত কয়েকদিনে যেসব হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগী মারা গেছেন তার প্রায় প্রত্যেকটি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স এমনকি রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দিন দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এখনও মহামারী আকার ধারণ করেনি। আইইডিসিআর এখনো সীমিত সংখ্যক মানুষ আক্রান্তের খবরই দিচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণেই গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। এমনিতেই বছরের এই সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ইতোমধ্যেই যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যায় গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। এডিস মশা নিধনে তরিৎ পদক্ষেপ না নিলে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু গত বছরের তুলনায় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হতে পারে বলে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। গত বছর তিন মাসে যেখানে রোগী ছিল ৪৮ জন, সেখানে এখন পর্যন্ত রোগী হয়েছে ২৭১ জন। মশা নিধনের কোন উদ্যোগ না থাকায় পরিবেশে এডিসের ঘনত্বও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। দেশে ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিয়ে কাজ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গেও একই ইস্যুতে কাজ করা এ বিশেষজ্ঞও সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তরিৎ পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছরে প্রথম তিন মাসে ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব যা ছিল এবার একই সময়ে তা অনেক বেশি। ঘনত্ব বাড়লে ঝুঁকিও বাড়বে। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাও আমরা পেয়েছি। তাছাড়া বৃষ্টিও হয়েছে। তাই এই সমস্যা আরও বাড়বে যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয়। আশঙ্কা করছি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এবার বর্ষার মৌসুমে জুন-জুলাই মাসে গতবারের চেয়ে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেশি হবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। করোনা একটি শত্রু। ওই শত্রুকে মোকাবেলা করতে হবে একইসঙ্গে অন্য শত্রু যেন আক্রমণ করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একটি শত্রুর মোকাবেলা করতে গিয়ে যেন ঘরের আরেকটি দরজা আমরা খুলে না রাখি। তাহলে সেই দরজা দিয়ে দ্বিতীয় শত্রু প্রবেশ করবেই। দুটি দরজাতেই পাহারা বসাতে হবে। অন্যথায় বিপদ মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এদিকে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তারাও হাসপাতালে ভর্তি হতে বিড়ম্বনায় পরছেন। গায়ে জ¦র থাকায় কোন হাসপাতালেই রোগীদের গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছে না করোনা হতে পারে এই আশঙ্কায়। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা একটি ভীতিকর বিষয়ে পরিণত হয়। তারা তখন পার্সোনাল প্রকেটশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই দাবি করেন এবং জানান পিপিই ছাড়া চিকিৎসা আসলেই অসম্ভব। এরপরই বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সর্দিজ্বরের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। এখন হৃদরোগ, এ্যাজমা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে নামীদামী বেসরকারী হাসপাতালগুলো সীমিত আকারে তাদের চিকিৎসা চালাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি নজিরবিহীন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনার পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যসেবার সঙ্কটের বিষয়টিতেও অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় করোনা ছাড়াই কেবল চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে পারেন অনেক মানুষ। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েও দেখা যাচ্ছে, কোন কোন ডাক্তার জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেবেন না বলেও লিখে রেখেছে। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের কারণে জ্বর বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অনেক রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বেসরকারী হাসপাতালগুলো এসব রোগী সরকারী হাসপাতালে রেফার করছে। এতে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা চিকিৎসা করছেন না বলেন ডাক্তাররা। চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। মিরপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, আলোক হাসপাতাল, কিংস্টোন হাসপাতাল, ডাঃ আজমল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কোন রোগী এলে সরকারী হাসপাতালে রেফার করা হয়। মিরপুর ১২ নম্বর কিংস্টোন হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, ইমার্জেন্সি ডাক্তারদের বলা হয়েছে- জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি নিয়ে কোন রোগী এলে সরকারী কুর্মিটোলা হাসপাতালে যেন রেফার করা হয়। এক চিকিৎসক জনকণ্ঠকে বলছিলেন, যদি এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে কেউ আসে, কাউন্সেলিং করে পর্যাপ্ত মেডিসিন দিয়ে সরকারী হাসপাতালে পাঠানো হয়। যেহেতু করোনাভাইরাস শনাক্তের কোন ব্যবস্থা এখানে নেই, তাই আমারা রিস্ক নিতে চাই না। করোনা হোক বা না হোক সর্দি, কাশি কিংবা জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে সরকারী বেসরকারী প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের একই চিত্র। নানা ছুতোয় বয়স্ক রোগীদের এড়াচ্ছেন ডাক্তাররা। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বয়স্ক রোগাক্রান্তদের বিষরয় এমন অবস্থানে চলে গেছে হাসপাতালগুলো। দিনে দিনে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার হার বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা পারতপক্ষে রোগী ভর্তি না করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা এও বলছেন, পার্সোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) ছাড়া এ মুহূর্তে রোগী দেখা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। হাসপাতাল তো ভর্তি নিচ্ছেই না, চিকিৎসক না আসায় চেম্বারেও দেখানো যাচ্ছে না রোগীকে। এদিকে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার সঙ্কটের একটি চিত্র পাওয়া যায় হাসপাতালের দিকে তাকালেও। করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে রোগী আসাও অনেক কমে গেছে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় অনেক চিকিৎসক বহির্বিভাগে রোগী দেখাও বন্ধ করেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল থেকে শুরু করে প্রতিটি হাসপাতালে সিট খালি আছে অর্ধেকেরও বেশি। অথচ অন্য সময় বারান্দায় রোগী রেখেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় না। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে রোগীর উপচেপড়া ভিড় থাকলেও, এখন একেবারেই ফাঁকা। করোনা আতঙ্ক ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাসপাতালে রোগী আসছে কম। একই চিত্র রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর চাপ থাকে, সেখানে এখন নীরবতা। রোগী আসছে অনেক কম। তবে, জ্বর ও ঠা-াজনিত সমস্যায় যারা আসছেন, তাদের সেবা দেয়া হচ্ছে বিশেষ সতর্কতায়। শিশু হাসপাতালেও রোগীর চাপ কম। তবে, হাসপাতালে আইসিইউতে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। চিকিৎসদের অনেকেই সংক্রমণের শঙ্কায় বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। জরুরী বিভাগে জ্বর, হাঁচি, কাশি নিয়ে কেউ আসলেই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে। ল্যাব এইড হাসপাতালে কিছু কিছু ডাক্তার এখনও বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। আর কিছু ডাক্তার তাদের নিরাপত্তার জন্য বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। এদিকে ঢাকার বাইরেও একই সঙ্কট। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন এমন খবরে পুরো হাসপাতাল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পাচ্ছে না। গত কয়েকদিনে চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছেন অনেক রোগী। সোমবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ বলেন, রবিবার বিকেলে ওই শিশু সর্দি-কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসে। তাকে ভর্তি করে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা গেল কি না, তা নিশ্চিত নয়। পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে শিশুটির রোগের ইতিহাস শুনে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, শিশুটির রোগের ইতিহাসের সঙ্গে করোনাভাইরাসের লক্ষণ মিলছে না। এ জন্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এদিকে শিশুটি মারা যাওয়ার পর উপজেলা ও জেলার অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স সব ধরনের চিকিৎসা বন্ধ রেখেছেন। কোন রোগী দেখছেন না। কোন সমস্যাই শুনছেন না, রোগীকে কাছে আসতে দিচ্ছেন না। করোনা আতঙ্কে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে দুদিন আগে একজনের মৃত্যুর পর ফাঁকা হয়ে গেছে ওই হাসপাতাল। করোনা সন্দেহে আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। সম্পূর্ণ হাসপাতালটিকে করোনা ইউনিট করার ঘোষণা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এখন কোন নতুন রোগী ভর্তি করছেন না। খুলনা জেনারেল হাসপাতালেও রোগী ভর্তি কমে গেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রোগীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে কয়েকদিন আগে চিত্র ছিল ভিন্ন। সিট না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতেও দেখা গেছে। এখন রোগী নেই বললেই চলে। করোনা আতঙ্কে চমেক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। আগে যেখানে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী থাকত, সেখানে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সোমবার ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক স্কুল শিক্ষিকা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। মারা যাওয়া রিপা দাস (৩২) রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার রামকল গ্রামের মিঠুন সরকারের স্ত্রী। তিনি রামকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। করোনা আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে ডাক্তার পলায়নের ঘটনাও ঘটছে। করোনা আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি পালিয়ে গেছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডাঃ আমিরুজ্জামান মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন। ডাঃ মোহাম্মদ রিয়াজুল আলম আরও জানান, ডাঃ আরেফিনকে গত বৃহস্পতিবার ইমারজেন্সি ডিউটি দেয়া হয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে জরুরী ডাক্তারী সেবা দিতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে। ডাক্তার আরেফিন বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। কর্তৃপক্ষ জোর করে ডিউটি পালনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করাই আমি বেশ কিছুদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভুগছি। এছাড়া আমার এ্যাজমার সমস্যা রয়েছে। করোনা ভাইরাসটি এ্যাজমা রোগীদের জন্য বেশি ঝুঁকি। শুনেছি, গত ২৪ মার্চ হাসপাতালে দু’জন রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসে মারা গেছেন। তাদের বিষয়ে কোন তথ্য আমরা জানার আগেই রোগীর লোকজন মরদেহ নিয়ে চলে গেছে। আমি ওটা দেখেও ভয় পেয়েছি। তাই নিজের এবং পরিবারের লোকজনকে বাঁচাতেই চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। আমি ওখান থেকে এসেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি। তবে বর্তমানে ভাল আছি। পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব।
×