ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নবিত্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৩১ মার্চ ২০২০

নিম্নবিত্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুর ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের জীবনযাত্রা বিবেচনায় ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এতে করে কিছুটা হলেও উপকৃত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। সোমবারও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এসব খাদ্যসামগ্রী বিরতণ হয়। ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন ৭ এসিল্যান্ড ॥ করোনা সঙ্কটে অসহায়দের ঘরে ঘরে ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন রাজধানীর মিরপুর জোনের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার- ভূমি) সৈয়দ মুরাদ আলী। যারা প্রকৃত অসহায়, কোন কাজ পাচ্ছেন না, তাদের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন তিনি। জনপ্রতি ১০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু ও দুই কেজি ডাল দেয়া হচ্ছে। সরকারের ত্রাণ পেয়ে কেঁদেই দিলেন শিবু রানী। তার স্বামী নেই। দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন মিরপুর শাহ আলী এলাকায়। তিনি মূলত মাটি কাটার কাজ করেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। শিবু রানী বলেন, এক সপ্তাহ হলো কেউ কাজে নেয় না। মাটি কাটা বন্ধ। খুব চিন্তায় ছিলাম। খাবার ছিল না ঘরে। ত্রাণ পেয়ে ভাল লাগল। মেয়েদের নিয়ে কয়েকদিন খাইতে পারব। রিক্সাচালক মিলন মিয়া তার দুই পা অক্ষম। তিনি ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালিয়ে আয় করেন। মিলন মিয়া বলেন, এমন ফাঁকা ঢাকা ঈদেও দেখিনি। ১৭ কেজি ত্রাণ পেলাম। অনেক উপকার হবে। এই ভ্রাম্যমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে ঢাকার মিরপুর-১, সদরঘাট, হাতিরঝিল, ডেমরা, কাওরানবাজার, ধানম-ি ও ফার্মগেটেও। সাতজন জন এসিল্যান্ড ৭০০ অসহায় পরিবারের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেবেন। ভ্রাম্যমাণ ত্রাণ প্রসঙ্গে এসিল্যান্ড সৈয়দ মুরাদ আলী বলেন, সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ ত্রাণ কার্যক্রম। সাতটি স্পটে দেয়া হবে। সামনে আরও বড় পরিসরে ভ্রাম্যমাণ ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ॥ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের মানুষদের সাহায্যের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। সোমবার ঢাকার মিরপুরের ইব্রাহীমপুর ও দক্ষিণ কাফরুলে গরিব, অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণকালে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। করোনাসংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালনের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা রোগের চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশের দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে বিত্তবানদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসব উপকরণ নিম্নআয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন এতে উপস্থিত ছিলেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পক্ষ হতে প্রায় ৭০০ পরিবারকে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১টি সাবান ও ১টি হ্যান্ড স্যনিটাইজার দেয়া হয়। ডিএমপির উদ্যোগে খাবার বিতরণ ॥ করোনাভাইরাসের কারণে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থদের মধ্যে আড়াই হাজার জনের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছেন ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সোমবার দুপুরের জন্য একবেলা এসব খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় এই খাবার বিতরণের অংশ হিসেবে রান্না করা খিচুড়ি, ডিম ও পানি সরবরাহ করা হয়। রাজধানীর ৫০টি থানায় দুই হাজার পাঁচশত ছিন্নমূল মানুষের দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হয়। ডিএমপি সূত্র জানায়, আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন দুই হাজার পাঁচশত ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থ মানুষের খাবার সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি। প্রতিদিন দুপুরে ডিএমপির প্রতিটি থানায় ৫০ জন করে ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থ নাগরিকদের মধ্যে প্যাকেটে করে এই খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। মানুষ মানুষের জন্য এই মহান মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থ নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে ডিএমপি পরিবার। মানসিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে খাবার বিতরণ ॥ রাজধানীতে মানসিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি)। সোমবার দুপুরে সচেতনতা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খাবার বিতরণ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিএইচআরসির সদর দফতরের বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ আজমুল হকের নেতৃত্বে মানবাধিকার কর্মীরা ঢাকা মহানগরের রামপুরা, খিলগাঁও এবং বাড্ডা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানসিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। এসময় তারা মানসিক প্রতিবন্ধীদের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করেন। দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে ॥ অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিতকল্পে সরকার দেশব্যাপী ছুটি ঘোষণা করেছে বিধায় সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার রাজধানীর মিরপুরে কল্যাণপুর নতুন বাজার পোড়াবস্তিতে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে অনেক দরিদ্র লোকের পক্ষে খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার তাদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দুস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক বিবেচনায় ঢাকা ওয়াসা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আজ (সোমবার) এখানে দেড় শ’ পরিবারসহ ঢাকা শহরে প্রায় দুই হাজার তিনশ পরিবারের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ ও জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমেও আমরা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে এর পরিসর ও উপকারভোগীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এদিন, রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এবং হাতিরপুল এলাকায় অসহায় ও দুস্থদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলছেন, করোনার ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। একযোগে ঢাকার বাইরেও প্রতিটি ইউনিটে এই কাজ চলছে। জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও দুস্থ ও অনাহারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস) ও এর যুব শাখা ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি)। সংস্থাটির উদ্যোগে ‘করোনায় স্বেচ্ছাসেবী’ নামে দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ঢাকাসহ ছয়টি জেলার প্রায় ২৪০টি পরিবারের মাঝে এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তারা। সোমবার ‘করোনায় স্বেচ্ছাসেবী’দের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ঢাকার সাভারে ২৫টি পরিবার, উত্তরায় ২৫ পরিবারসহ অন্যান্য জেলায় তারা এই সহায়তা দিয়েছেন।
×