ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাস বনরুই থেকে এসেছে ॥ ধারণা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস বনরুই থেকে এসেছে ॥ ধারণা বিজ্ঞানীদের

বনরুই নামের একটি স্থলজ প্রাণীর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে তারা জানিয়েছেন। চীনে পাচার হওয়া ওইসব বনরুইয়ের ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ‘কোভিড-১৯’-এর মিল আছে। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। ওয়েবসাইট। বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষক টমি ল্যাম বলেন, চোরাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়ার পর প্রশ্নটাও উঠেছে যে এই প্রজাতির বনরুইয়ের শরীরেই বা কিভাবে এই ভাইরাস প্রবেশ করে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ-২’-এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারী ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত। এদিকে বন্যপ্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগবালাই নিয়ে গবেষণাকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইকো হেলথ এ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারীর সম্পর্ক রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসকে পিটার ডাসক বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে ছড়ায়। ওই প্রাণী চীনের উহানে বিক্রির চল আছে। শুধু তাই নয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল নেচার-এ পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র ১৭ মার্চ প্রকাশ হয়। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণীর বাজারে বনরুইয়ের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত। গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ, যা মানুষের শরীরের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই। সহ-গবেষক সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্য প্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে। তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড-১৯’ উৎস এখনও অজানা।
×