ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা বাজারে ক্রেতাদের কেনাকাটা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৩০ মার্চ ২০২০

কাঁচা বাজারে ক্রেতাদের কেনাকাটা বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ছুটির পঞ্চম দিন সোমবার রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের কেনাকাটা বেড়েছে। ভোক্তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া তারা প্রয়োজনমতো চাল, ডাল, ডিম, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্য সংগ্রহ করেছেন মুদিপণ্যের দোকান থেকে। দাম বেড়েছে, চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, রসুন ও আদার। তবে কমেছে পেঁয়াজ ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও আলুর দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোক্তাদের কেনাকাটা বাড়ায় জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। এছাড়া ভিড় বেড়েছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র পণ্যসামগ্রী কেনাকাটায়। নগরীর কোথাও কোথাও লাইন ধরে পণ্য কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। অনেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে টিসিবি থেকে পণ্যসামগ্রী কিনছেন। এতে করে করোনাভাইরাসজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, গোঁড়ান কাঁচা বাজার এবং মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়- ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়েছেন। গত ২৬ মার্চ থেকে রবিরবার পর্যন্ত বাজারে ক্রেতাদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কিন্তু সোমবার বেশিরভাগ বাজার সকাল সকাল জমে উঠে। ভোক্তারা চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বাজার থেকে কেনাকাটা করেছেন। এতে করে বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে বাজারে। শুধু তাই নয়, যেসব ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে ছুটিতে ছিলেন, তারাও আবার কাজকর্ম শুরু করেছেন। বাজারে বেচাবিক্রি বাড়লেও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অনেক বাজারে পুলিশ ও সেনবাহিনীর সদস্যরা করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি ভোক্তাদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন। সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করেন সেলক্ষ্যে উপদেশ ও নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। তবে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের ক্রেতা যারা রয়েছেন তাদের কাছে করোনার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। মাস্ক ছাড়াই অনেককে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, কেজিতে ৫ টাকা কমে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকৃতটি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। করোনা আতঙ্কের মধ্যে এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা দ্বিগুন দামে ক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করে। ওই সময় একলাফে ৪০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। এছাড়া চালের দামও সেই সময় কেজিতে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাজারে নিত্যপণ্যের দোকানপাট চালু থাকলেও এখন বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্যসামগ্রী। এতে করে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। যদিও সাধারণ ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগে-ভাগে টিসিবি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারেনি। খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে বাজার করছিলেন শাজাহানপুরের বাসিন্দা সেক নেয়ামত আলী। চারদিন পর বাজারে এসে কেনাকাটা করছিলেন তিনি। তিনি জানান, বাজারে এখনও বেড়ে যাওয়া দামে জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। একদিকে করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া। এটা মরার ওপর খাড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো ক্রেতাদেরও সমস্যা আছে। করোনা আতঙ্কে এবার সবাই পাগলের মতো পণ্যসামগ্রীর কেনাকাটা করেছে। এতেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এদিকে বাজারে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে স্বর্ণা ও চায়না ইরি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৬, এবং সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬০-৬৮, মশুর ডাল ৮০-১৩০, রসুন ৯০-১১০, আদা ১২০-১৫০, ভোজ্যতেল প্রতিলিটার ৯৩-৯৫, আটা ৩০-৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দাম কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১১০-১২০, প্রতিহালী ডিম ৩২-৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া শাক-সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। দেশীয় জাতীয় সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এছাড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছে। এছাড়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খোলাবজারে ওএমএস কার্যক্রম চালু রেখেছে সরকার।
×