ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহবন্দী জীবন ॥ উৎকণ্ঠায় দেশবাসী

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৩০ মার্চ ২০২০

গৃহবন্দী জীবন ॥ উৎকণ্ঠায় দেশবাসী

ওয়াজেদ হীরা ॥ চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী প্রায় গোটা বিশ্ব। স্তব্ধ জীবনযাত্রা। থেমে গেছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘরবন্দী হয়েছে মানুষ। দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকার একটা লম্বা সময় সাধারণ ছুটি দিয়েছে। যা উৎসবের ছুটি নয়। বিশ^ব্যাপী মহামারী হওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো করোনার আতঙ্কে ছুটিতে থাকলেও ভাল নেই দেশের মানুষ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটে না ‘গৃহবন্দী’ সময়। কেউ কেউ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। টেলিভিশন দেখে বই পড়ে সময় কাটানোর পাশাপাশি ঘরে ঘরে লুডু-দাবা খেলেও সময় কাটাচ্ছে মানুষ। বাইরে বের হতে না পারায় ঘরই এখন খেলার মাঠ হয়ে গেছে শিশুদের। সব বয়সী মানুষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশায় খোঁজ রাখছেন দেশ ও বিশ্বের। একঘেয়েমি বোধ করলে ঘরে নিজেকে ব্যস্ত রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস নামের জীবাণুতে কুপোকাত গোটা বিশ্ব। চীন থেকে শুরু হওয়া মহামারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ লাখের বেশি। আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার উপরে এখন যুক্তরাষ্ট্র। আর মারা গেছে সবচেয়ে বেশি ইতালিতে যা ১০ হাজারের বেশি মানুষ। স্পেনে এই ভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাটা ৫ হাজারের বেশি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ৪৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় সারা বিশ্ব এই রোগের বিস্তার কমাতে ‘লকডাউন’ ‘শাটডাউন’র মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এই উদ্যোগ। বাংলাদেশে সচেতনতার অংশ হিসেবে এবং ব্যাপক আকারে যেন না ছড়ায় সেজন্য ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে টানা ১০ দিন সাধারণ ছুটি দিয়েছে সরকার। গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই সাধারণ ছুটি। প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর খোদ রাজধানী ঢাকা এখন জনশূন্য ভুতুড়ে শহর। জনমানবশূন্য রাতদিন একই রকম। রাজধানীর ব্যস্ত শহর থেকে জেলা উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের বাজারগুলোতেও লোকের সমাগম নেই। জরুরী সেবা, নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকানপাট ছাড়া সব বন্ধ রয়েছে। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা জনসমাগম যেন না হয় সে জন্য টহল দিচ্ছেন। এছাড়াও অনেকটা সচেতনভাবেই মানুষ নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক নিয়ে সবাই ঘরে অবস্থান করছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে একেবারেই বের হচ্ছেন না। ঘরবন্দী মানুষগুলোর কাজ না থাকায় সময়ও কাটছে না। সময় কাটাতে নানা কিছু করছেন। গ্রামের মানুষের নিজেদের বাড়ির উঠানে কিংবা বাড়ির চারপাশে হাঁটাহাঁটির সুযোগ থাকলেও শহরের মানুষের সে সুযোগও নেই। চার দেয়ালের ইটপাথরের শহরের জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে থাকা, ঘরের মধ্যেই হাঁটাহাঁটি কিংবা সবকিছু। গ্রামের মানুষগুলো বাড়ির আশপাশ ছাড়া পাশের বাড়িতেও যাচ্ছেন না ভয়ে। আর শহরে একই ভবনে থেকে কেউ নিজ ঘরের বাইরে যেতে চান না। এমনকি ভবনের ছাদেও নয়। ২৪ ঘণ্টাই ঘরবন্দী জীবনে নানাভাবে সময় কাটানোর চেষ্টা করছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে। রাস্তায় দোকানপাট খোলা নেই, জিমনেসিয়াম, পার্ক থিয়েটার খোলা নেই। আড্ডা দেয়ার স্থান বন্ধ, শপিংমল, সিনেমাহল সবই বন্ধ থাকায় মানুষের সবই এখন ঘরকেন্দ্রিক। জরুরী প্রয়োজনে এখনও যেসব অফিস খোলা রয়েছে তাদের অনেকেই বাসায় থেকে অফিসের কাজ করছেন। মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম বেশি কার্যকর এখন ভার্চুয়ালভাবে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টুইটার, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্নভাবে তথ্য আদান প্রদান করা এবং নিজেদের ঘরে থাকার অনুভূতি প্রকাশ করছেন এসব মাধ্যমে। জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে অনলাইনের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদেরও সময় কাটছে ফোনে যোগাযোগ রেখে আর বই পত্রিকা পড়ে। কিভাবে সময় কাটছে এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের অনলাইনে অফিস চলছে। আমরা দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সবাই বাসা থেকে যুক্ত থাকছি। আমাদের ছুটি নেই। আমাদের বিভিন্ন পোর্টে জাহাজ আসছে প্রতিদিনই। সড়ক পরিবহনে কন্টেনার সার্ভিস না থাকায় একটি সমস্যা হচ্ছে। আমাদের চট্টগ্রাম পোর্টে ৩৯ হাজার কন্টেনার জমা হয়ে গেছে যেখানে ক্যাপাসিটি ৫০ হাজার। এসব ডেলিভারি না হওয়াতে মনে হচ্ছে একটা বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। অনলাইনের ফাঁকে ফাঁকে আমার পত্রিকা ও বই পড়ার মাধ্যমে সময় কেটে যাচ্ছে। এলাকার মানুষদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছি। এমন অবস্থায় কেমন কাটছে সময় জানতে চাইলে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম জনকণ্ঠকে বলেন, শনিবারও ঢাকায় ছিলাম। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রেখেছি মানুষের সঙ্গে। এছাড়াও দিনের অন্যান্য সময় বই পড়ি, পত্রিকা পড়ে খোঁজ নিচ্ছি। রবিবার আমার এলাকায় এসেছি। এখানে আমার নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। কেউ অসুস্থ হলে সেজন্য এ্যাম্বুলেন্স রেখেছি। এভাবেই কেটে যাচ্ছে সময়। যেহেতু সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হচ্ছে আমরাও রাখছি। তবে দেশের এমন দিনে আমরা জনপ্রতিনিধিরা জনবিচ্ছিন্ন থাকতে পারি না। তাই ফোনে হোক কিংবা অনলাইনে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের কোন কাজ তারা অনলাইনে অনুসরণ করছেন। যেসব মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত না থাকলেই নয় তাদের বাইরে সবাই ফোনের পাশাপাশি অনলাইনে সম্পৃক্ত থাকছেন। ঘরবন্দী হওয়ার পর থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্নজন তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। সৈয়দ সাইফুল আলম শুভন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আমার বন্দী জীবনে কবি কি যে শক্তি দিয়েছেন কবিতা আর আমি জানি। সাংবাদিক তুষার আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘ভাবছেন এই দুর্যোগে ঘরে বসে আছেন মানুষের জন্য কিছুই করা হলো না? আপনি যে ঘরে বসে আছেন, বাইরে বের হচ্ছেন না, এটাই এই সঙ্কটকালে বড় অংশগ্রহণ।’ আবিদ আবদুল্লাহ ফেসবুকে লুডু খেলা ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছেন নিজেদের জন্যই বন্দী থাকা সময় কাটানোর চেষ্টায় আছি। ব্যাংকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে চললেও যাদের প্রয়োজন নেই তারা ছুটিতে। কর্মহীন এ সময়টা ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। টিভি দেখা গান শোনার পাশাপাশি বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি। অফিসের দিনগুলোতে বই পড়া হয় না একদমই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সবাই ছুটে চলা মানুষ। নানা কাজের মধ্যে থাকি। হঠাৎ করে কাজছাড়া ঘরে থাকাও মুশকিল সেটা আমরা এই দুর্যোগে উপলব্ধি করছি। তবে সময় কাটানোর জন্য কেউ বিনোদন বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি দেখছে। যাদের বইপড়ার অভ্যাস আছে তারা বইয়ে ঝুঁকেছেন। আমাদের শিশুরাও বেশ একেটা আবদ্ধ পরিবেশে আছে জানান তিনি। সামাজিক মাধ্যম গেটে এবং বিভিন্ন যোগাযোগে জানা গেছে, নিজেদের সুরক্ষার জন্যই গৃহবন্দীর এই সময়টা নানাভাবে সবাই উপভোগ্য করার চেষ্টায় আছে। কেউ গল্প উপন্যাস বা প্রবন্ধ পড়ছেন, কেউ ছবি বা নাটক দেখে গান শুনে সময় পাড় করছেন। কেউ আবার দাবা লুডুর মতো ঘরোয়া খেলার সরঞ্জামাদি কিনেছেন। সময় কাটানো জন্য শুধু নিজেরাই খেলার সরঞ্জামাদি কিনেছেন তা নয় কোথাও সরকারী কর্মকর্তারাও এসব বিতরণ করেছেন। নিজ গৃহে সময় কাটানোর জন্য বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে জনগণের মধ্যে লুডু খেলার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি একইসময় করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকের সচেতনতামূলক বিভিন্ন নির্দেশনা এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচার করেন তিনি। এ সময় ইউএনওর সঙ্গে ছিলেন উপজেলার অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তারাও ছিলেন। সময় কাটানোর জন্য এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান এলাকাবাসী। করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ কেউ সচেতনতামূলক ভিডিও বা লেখা দিচ্ছেন এসব ভার্চুয়াল মাধ্যমে। দেশের কিছু গণমাধ্যমের কর্মীরা বাসায় থেকে কাজ করছেন। করোনা কারণে দেশের অনেক জেলা শহরের পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। মানবজমিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ রেখে কর্মীদের বাসা থেকে অনলাইনের জন্য কাজ করতে বলেছেন। ঘরই শিশুদের খেলার মাঠ ॥ শাহনাজ আফরোজ নামের এক শিক্ষিকা তার বাচ্চাদের ঘরে ক্রিকেট খেলার ভিডিও দিয়ে লিখেছেন ‘প্রতিদিন ঘরই ওদের খেলার মাঠ, তবুও ভাল থাকুক আমার সোনামণিরা।’ জানা গেছে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে বড়দের মতো ছোটরাও ঘরবন্দী। এত লম্বা ছুটি পেয়েও কোথাও ঘুরতে যেতে পারছে না। খেলার জায়গাও নেই ইটপাথরের শহরে। বাচ্চারা নিজেদের ঘরেই খেলায় মেতে থাকছে। ভিডিও গেমস, টিভিতে বিভিন্ন কার্টুন অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি রাবারে বল বা প্লাস্টিক বল দিয়ে খেলছেন কেউ। কোন শিশু আবার ঘরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারিচালিত গাড়ি, ছোট ক্রিকেট ব্যাট বল নিয়ে খেলছে। ঘরের মেঝে ব্যবহার করলেও কোন সময় অন্যান্য বস্তুর ক্ষতি হলেও সেটা নিয়ে আফসোস নেই অভিভাবকদের। শহরের যে ঘরে বাচ্চা আছে অধিকাংশ ঘরগুলোই এখন শিশুদের খেলার মাঠ। বাবা মা সন্তানের খেলায় সঙ্গ দিচ্ছেন। একদিকে যেমন সন্তান খুশিতে খেলছে তেমনি অভিভাবকের সময়ও কেটে যাচ্ছে। ইয়াসিন আসিফ তার ফেসবুকে লিখেছেন ‘পরিবারকে সময় দেন, বাচ্চার সঙ্গে শৈশবে ফিরে যান।’ এছাড়াও শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সময় বাচ্চাদের কিছু আচরণ শেখানো যেতে পারে। অধিকাংশ কর্মজীবী মা-বাবা শিশুকে বেশি সময় দিতে পারে না। অফিসে কাজ, সংসারের কাজ, সামাজিকতা। অন্যদিকে, সন্তান ব্যস্ত থাকে স্কুল, হোমওয়ার্ক, এক্সট্রা কারিকুলাম কোচিং ইত্যাদি নিয়ে। ফলে দিন শেষে একে অপরের জন্য খুব একটা সময় থাকে না। এই সময় সন্তানের সঙ্গে গল্প করার পাশাপাশি শিশুর কথাকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন মনোবিদরাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিন। পারিবারিক আলোচনায় শামিল করুন, তার মতামত নিন। তার কথা যৌক্তিক হলে গ্রাহ্য করুন, আর না হলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। সন্তানের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনুন। সন্তানের সঙ্গে যত বেশি সময় কাটালে, সন্তানের মনোভাব বেশি বুঝা যাবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নিজেদের সুরক্ষায় ঘরবন্দীর এই সময়ে কেউ কেউ প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছেন। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের নিত্যনতুন বাহারি খাবারের রান্না ও পরিবেশনের মাধ্যমে। বিশেষ খাবার আইটেম বানিয়ে তা আবার দেখানো হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। কেউ কেউ ইউটিউব দেখে দেখে নতুন নতুন খাবার বানানো শিখে নিচ্ছেন এই সময়ে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালীর ঘরবন্দীর জীবনের তথ্য শেয়ার করছেন। অল ইউরোপিয়ান আ’লীগের সভাপতি ভিয়েনায় থাকা মোঃ নজরুল ইসলাম ভড় একটি পোস্টের কয়েক জায়গায় লিখেছেন, হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু। ডুপ্লেক্স বাসায় এক বাড়িতে থেকেও করো মুখ দেখিনা। এক বাড়িতে থেকেই স্ত্রী এবং দুই পুত্রে সামনাসামনি হতে পারছি না। বইপড়ে, টিভি দেখে, ফোন ও ফেসবুকে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় কাটাচ্ছি। এই ঘরবন্দী জীবন সত্যিই কষ্টের! তবে আমার নিজের, পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের সুরক্ষা জন্য কোয়ারেন্টাইনের কোন বিকল্প নেই। ঘরে থাকার সময়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ॥ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে গৃহবন্দী হয়ে অফিসের কাজ করার পরও কাটে না দুশ্চিন্তা। অস্থিরতা বিরাজ করে মনের মধ্যে। এসব কাটিয়ে উঠতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক ডাঃ দেওয়ান আব্দুর রহিম বলেন, এসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখা ভাল। বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখা যায়। পড়াশোনা, ঘরের কাজ করা ইত্যাদি করা ভাল। সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের সাবেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমি একটা কথা বলব যখন কোন মানুষ আতঙ্কে থাকে তার মধ্যে হতাশা কাজ করে। হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না, সাহস রাখতে হবে, ঘরের যাবতীয় কাজের মধ্যেই থাকতে হবে। মনোবিদরা বলেছেন, বাড়িতেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেরে ফেলুন অফিসের যাবতীয় কাজ। বাসায়ও চলুন রুটিন মেনে। একটানা কাজ করতে ভাল না লাগলে মাঝেমধ্যে একটু বিশ্রাম নিন। যেটা অফিসে চা পান করতে করতে হতো। মনোবিদরা বলছেন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইন্টারনেট, ফোন কল, ভিডিও কল এবং সোশ্যাল সাইটে কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপমুক্ত থাকার কথাও বলছেন। কারণ মানসিক উদ্বেগ বা চিন্তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন পরামর্শের মধ্যে আরও রয়েছে, এসময় অযাচিত চিন্তা না করা, খবরের কাগজ, গল্পের বই পড়া। তাছাড়া ভাল-মন্দ রান্নার কথাও বলা হচ্ছে। এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। ব্যস্ত রাখতে ঘরই হচ্ছে ক্লাসরুম ॥ করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের (সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন) মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। রবিবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ২ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাসের সময়সূচীও ঘোষণা করেছে। প্রথম সপ্তাহের সময়সূচী অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর ক্লাস হবে। পরবর্তী সপ্তাহের সময়সূচী ১ এপ্রিল মাউশির ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হবে। সকাল নয়টা ৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট আটটি ক্লাস হবে। এরপর বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুনঃপ্রচার করা হবে। প্রতিটি ক্লাস হবে ২০ মিনিটের। মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই ক্লাসের নাম দেয়া হয়েছে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাঠদানকারী শিক্ষকরা ক্লাস শেষে পাঠদানকৃত বিষয়ের ওপর বাড়ির কাজ দেবেন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করবে। স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শ্রেণী শিক্ষকদের কাছে জমা দেবে। এই বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মোঃ শাহেদুল খবির জানান, ধারাবাহিক মূল্যায়ন বার্ষিক পরীক্ষার ফলের সঙ্গে যোগ হবে। আর এখন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর সময়সূচী ঘোষণা করা হলেও দশম শ্রেণীর ক্লাস নেয়ারও প্রস্তুতি চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা হলেও পরে সেটি বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। একই সঙ্গে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর তারিখও স্থগিত করা হয়। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো। আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে।
×