ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোম কোয়ারেন্টাইনে চারদিন কাটল খালেদার

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩০ মার্চ ২০২০

 হোম কোয়ারেন্টাইনে চারদিন কাটল খালেদার

শরীফুল ইসলাম ॥ গুলশানের নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ৪ দিন পার করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ২৬ মার্চ থেকে ১৪ দিনের শুরু করা তার হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে ৮ এপ্রিল। এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেই দিনভর ফোনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডাঃ জোবায়দা রহমান, শর্মিলা রহমান, নাতনি, জায়মা রহমান, জাহিয়া রহমান ও জাসিয়া রহমান, ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলামসহ স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময় করতে পেরে খালেদা জিয়া খুশি মনেই গুলমানের বাসা ফিরোজায় সময় কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ ২ বছর দেড় মাসের কারাবাসের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে ২৫ মার্চ ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রথম দিন গুলশানের বাসায় আত্মীয়স্বজন ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তাঁর জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে পরদিন থেকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। অবশ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় আসার আগেই সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে হোম কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দেন। আর লন্ডন থেকে ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমানও বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়াকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এবিএম জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া এখন গুলশানের বাসা ফিরোজার দ্বিতীয় তলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তার ব্যক্তিগত সহকর্মীরাও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। ডাক্তার ও নার্সরা তাকে নিয়মিত সেবা প্রদান করছেন। আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার শরীরিক অবস্থা আগের মতো থাকলেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে নিয়মিত আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারার কারণে তিনি মানসিকভাবে ভাল আছেন। বাসায় আসার পর তার ওষুধের কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এখন অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে তাকে করোনা থেকে মুক্ত রাখার বিষয়টিকে। কারণ সারা বিশ্বই এখন করোনা মোকাবেলায় তোলপাড়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করছেন তার লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান। জানা যায়, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়মকানুন মেনেই খালেদা জিয়া তার খাওয়া-দাওয়া ও ওষুধসেবনসহ প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন কর্মসম্পাদন করছেন। এর পাশাপাশি টেলিফোন ও স্কাইপিতে দিনভর লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান, তারেক রহমানের মেয়ে জয়মা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, তার মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাসিয়া রহমান এবং দেশে অবস্থান করা ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলামসহ স্বজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে তিন নাতনির সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে পেরে তিনি ভালভাবেই সময় পার করছেন বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার খাবারের বিষয়ে তার কাছ থেকে প্রতিদিনই আগে জেনে নেন কাজের মেয়ে ফাতেমা। তিনি তা জেনে বাসার পাচককে বলেন। সে অনুপাতে খাবার প্রস্তুত করা হয়। এ ছাড়া লন্ডন থেকে পুত্রবধূ ডাঃ জোবায়দা রহমানও তার খাবার বিষয়টি তদারকি করেন। এ ছাড়া বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দারও মাঝে মাঝে নিজ নিজ বাসা থেকে খালেদা জিয়ার পছন্দের ফলমূলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে আসেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সরাও তিনি কখন কি খাচ্ছেন সে বিষয়টি খেয়াল রাখেন। তিনি কখন কি খাচ্ছেন তা একটি চার্টেও লিখে রাখা হয় বলে জানা গেছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার গেট সবসময় বন্ধ থাকে। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা বাসার গেটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। তারা চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া কাউকে বাসায় প্রবেশ করতে দেন না। মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার অনুমতি সাপেক্ষে নিকটাত্মীয়দের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় আসার পর থেকে তিনি খুশিতে আছেন, স্বস্তিতে আছেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও প্রতিদিনই তিনি দেশ-বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। লন্ডন থেকে ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান সার্বক্ষণিক তাঁর খোঁজখবর রাখছেন। ঘরোয়া পরিবেশে নিয়মিত তাকে ওষুধ সেবন করছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও নার্সরা। স্বজনদের পক্ষ থেকে আমরাও সবসময় তার খোঁজখবর রাখছি। খালেদা জিয়ার শয়নকক্ষের পাশের বড় কক্ষটিতে প্রয়োজনীয় আরও কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। আরও কিছু যন্ত্রপাতি কয়েকদিনের মধ্যেই এসে যাবে বলে জানা গেছে। চিকিৎসাসহ যে কোন প্রয়োজনে কেউ খালেদা জিয়ার কক্ষে যেতে হলে নিরাপত্তা পোশাকসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয় বলে জানা গেছে। আর পুরো বাড়িটিকে করোনামুক্ত রাখতে প্রতিদিনই জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। এদিকে মুক্তির শর্তের কথা মাথায় রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কারো সঙ্গে কোন কথা বলেন না বলে জানা গেছে। এমনকি নিজের ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা হলেও দলের রাজনীতি নিয়ে তিনি কথা বলেন না। এ ছাড়া দলের অন্য নেতাদের সঙ্গেও আপাতত যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন তিনি। জানা যায়, মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় অবস্থান করার পর দেশ-বিদেশ থেকে বেশ ক’জন নেতা টেলিফোনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি। এ কথা শুনে এখন আর কেউ তার বাসায় ফোন করে না বলে জানা গেছে।
×