ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফিরছেন ৩৬ ইতালী ফেরত

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ২৯ মার্চ ২০২০

গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন থেকে  বাড়ি ফিরছেন ৩৬ ইতালী ফেরত

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ করোনা ভাইরাস দেহে না থাকায় ইতালী ফেরত ৩৬জন প্রবাসী সোমবার গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে সুস্থ্য হয়ে ১৬দিন পর তারা বাড়ি ফিরছেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ইতালী ফেরত ৪৪জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তঃর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে ৮জনের দেহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তাদেরকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দু’দফায় (১৫ মার্চ ৪জন ও ১৬ মার্চ ৪জন) রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অধিকতর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই ৮জনের মধ্যে একজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আইসোলেশনে এবং অপর ৭জনকে ঢাকা থেকে পুনঃরায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরে কাপাসিয়ার পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। এ কেন্দ্রে আরো ২জনসহ মোট ৯জন বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব ব্যক্তিদের নিয়মিত খাবার, ফল ও স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যেহেতু গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আনা অন্যদের সংস্পর্শে ছিলেন। তাই এ হাসপাতালে অবস্থানরত বাকী ৩৬জনকে দু’সপ্তাহের বেশী সময় ধরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এসময় এখানে তাদেরকে করোনা ভাইরাস বিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শ ও সেবা দেয়া হয়। মেঘডুবির ওই কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে ১৬দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে ইতালী ফেরত ওই ৩৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তাই সোমবার সকালে গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ইতালী ফেরত ওই ৩৬ জনকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিদায় দেওয়ার পর এ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রটিকে আরো প্রস্তুত রাখা হবে। তবে কাপাসিয়ার পাবুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে থাকা অপর ৯জন আরো কিছুদিন সেখানে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কিছু করার নেই। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় নি। তবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে রবিবার পর্যন্ত জেলায় মোট ১৪৯৬জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৪৭জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (আইসোলেশনে ১জন) রাখা হয়। এদের মধ্যে ৫৫৮জন ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ছাড় পেয়েছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের মেঘডুবি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে ইতালী ফেরত ওই ৩৬জনকে ছাড় দিয়ে তাদের সোমবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা। তিনি আরো জানান, বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাস যখন আতংক সৃষ্টি করেছে ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গাজীপুরে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরে মেঘডুবি ও পাবুরের ওই দু’স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও পূবাইল এলাকার ম্যাটসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় ১০/১৫টি করে বেড সম্মিলিত ইনস্টিটিউশন ফিক্সড করা হয়েছে। যদি আরো লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়, তাহলে সেসব গুলোতে আমরা কোয়ারেন্টাইন করবো। প্রতিটি উপজেলায় যেসব ক্লিনিকগুলো রয়েছে সেখানে ৩/৪টি বেড সমৃদ্ধ একেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালেও আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে আইসোলেশন কর্ণারও খোলা হয়েছে। যেখানে সন্দেহভাজন রোগীরা যাবেন। যাদের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর আছে তারা সেখানে আলাদাভাবে যাবে। এভাবে আমাদের কোয়ারেন্টাইনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
×