ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের প্রতি আইজি

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিনয়ী ও পেশাদার আচরণ করুন

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৯ মার্চ ২০২০

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিনয়ী ও পেশাদার আচরণ করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিনয়ী ও পেশাদার আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী। এদিকে নাগরিকদের সমস্যা বিবেচনায় হোটেল-বেকারি খুলে দেয়াসহ মাঠপর্যায়ের দশটি নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ করার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী। বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় সোয়া দুই লাখ পুলিশের কাছে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয় সরকার। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যরা সাধারণ পথচারী, রিক্সাচালক, দিনমজুরসহ নানা পেশার মানুষকে লাঠিপেটা, কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ আসার পর এই বার্তা পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ এসব তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানান হয়। এআইজি সোহেল রানা জানান, মাঠে কাজ করা কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আইজির এই বার্তা। কনস্টেবল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিটি পুলিশ সদস্য যেন এই বার্তা ব্যক্তিগতভাবে পান, সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া আইজি প্রতিটি ইউনিট প্রধানের সঙ্গে ফোনে এবং গ্রুপভিত্তিক ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। আইজির এই বার্তা ফ্যাক্স, মোবাইল, মেলসহ সবধরনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি প্রতিটি সদস্যকে পেশাদরিত্ব, সহনশীল, বিনয়ী আচরণ করতে বলেছেন। একই সঙ্গে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক- জরুরী সেবার বিষয়ে জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়ে সে বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি জানান, জনসাধারণর সঙ্গে যে সব পুলিশ সদস্য অসদাচরণ করেছেন তাদের বিষয়টি আমলে নেয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত বেদনাদায়ক, যেটা আশা করা উচিত নয়। এ ধরনের করতে থাকলে জরুরী সেবায় নিয়েজিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তিনি জানান, বার্তা দেয়ার পর পরিস্থিতি অনেক উন্নতি হচ্ছে। নতুন করে কোন ঘটনার খবর আসেনি। তবে কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান। এআইজি সোহেল রানা জানান, রাজবাড়ীর এক ঘটনায় পুলিশের এক কর্মকর্তা দায়িত্বপালন করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি এক প্রভাবশালীর স্বজন বলে পরিচয় দেন, যা ঠিক ছিল না। কিশোরগঞ্জের এক প্রবাসী অভিযোগ করেছিলেন, কোয়ারেন্টাইনে না থাকার শর্তে পুলিশ তার কাছে ঘুষ নিয়েছে, যার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ ওই প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেয়। সিলেটের এক বাজারের জনসমাগমে বাধা দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ বেশ বিপাকে পড়েছিল। জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিল। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিদিন হতে হচ্ছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি বিষয় পুলিশ মনিটর করছে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিককে এআইজি সোহেল রানা অনুরোধ জানিয়েছেন। আইজিপির নির্দেশে বলা হয়েছে, জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুত, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সব জরুরী সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন। ডিএমপির ১০ নির্দেশনা ॥ চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে সারাদেশ। করোনা আক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ মাঠপর্যায়ে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জনসাধারণের অবাধে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োগ করা কিছু পদক্ষেপের কারণে সমালোচিত হয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় নাগরিকদের সমস্যা বিবেচনায় হোটেল-বেকারি খুলে দেয়াসহ মাঠপর্যায়ের ১০টি নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। শনিবার সকালে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি), সহকারী কমিশনার (এসি) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে পাঠানো এক বার্তায় এসব নির্দেশনা দেন তিনি। ডিএসপির ডিসি এবং এসি পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিশনারের পাঠানো বার্তায় ১০টি নির্দেশনা হচ্ছে, অনেক মানুষের রান্না-বান্নার ব্যবস্থা নেই, তাই তাদের জন্য খাবার হোটেল, বেকারি খোলা থাকবে। এসব হোটেল এবং বেকারিতে কর্মরতদের সড়কে চলাচল করতে দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য পণ্যের দোকান খোলা থাকবে এবং এসব দোকানে কর্মকর্তরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। খাবার হোটেল থেকে গ্রাহকদের খাবার পার্সেল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। তবে কিছুক্ষেত্রে কেউ হোটেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে খেতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় যেকোন নাগরিক একা যেকোন মাধ্যম ব্যবহার করে চলাফেরা করতে পারবেন। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী, মেডিক্যাল স্টাফদের মতো জরুরী সেবাদানকারীদের সহযোগিতা করতে হবে। যেকোন ক্ষেত্রে নাগরিকদের সঙ্গে পেশাদার আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদেরও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া পুলিশ সদস্যরা এমন কোন কাজ করবেন না, যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ও ভাল কাজ ধূলিসাত হয়ে যায়।
×