ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুয়াংজুতে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট ইউএস বাংলার

লন্ডন থেকে বিমানের শেষ ফ্লাইট আসছে কাল

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৯ মার্চ ২০২০

লন্ডন থেকে বিমানের শেষ ফ্লাইট আসছে কাল

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানের দুটো ফ্লাইট লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে আজ (রবিবার)। শেষ ফ্লাইটটি ফিরে আসবে আগামীকাল। তারপর বন্ধ থাকবে এক সপ্তাহ। তবে এ মেয়াদ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে গুয়াংজুর ফ্লাইট বন্ধ না করা হলেও ফ্লাইট কমিয়েছে বেসরকারী ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট চলাচল করবে ঢাকা ও গুয়াংজু রুটে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেশ কিছু চার্টার্ড ফ্লাইট অপারেট করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে জাপান ঢাকা থেকে তাদের কূটনীতিক ও অন্য নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য একটি চার্টার্ড ফ্লাইট চেয়েছে বিমানের কাছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, দু’একদিনের মধ্যে জাপানীদেরকে নিয়ে ঢাকা ছাড়তে পারে বিমানের এই চার্টার্ড ফ্লাইটটি। সিভিল এভিয়েশানের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সোহেল স্বাক্ষরিত এক বার্তায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে সব ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে। চালু থাকবে শুধু স্পেশাল, চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট। বিমান সূত্র জানিয়েছে, শনিবার লন্ডন থেকে বিমানের একটি ফ্লাইট মাত্র ২২ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে। ফিরতি ফ্লাইটে ২৯৮ যাত্রী নিয়ে গেছে ঢাকা থেকে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। সেই ফ্লাইট আগামীকাল সোমবার ঢাকায় আসবে। তার আগে আজ (রবিবার) আরও দুটো ফ্লাইট লন্ডন ও ম্যানচেস্টার যাবে। তারপর বিরতি থাকবে এক সপ্তাহ। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন জানান, বিমানের আন্তর্জাতিক সব রুটের ফ্লাইট আপাতত বন্ধ থাকলেও অন্যান্য অপারেশনাল কাজ ঠিক চলবে। যেমন নন সিডিউল কার্গো ফ্লাইট তো প্রতিদিনই রয়েছে, সেগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকায় আটকেপড়া কয়েকটি দেশের নাগরিকদেরকে বহন করার জন্য আলোচনা করছে। এরমধ্যে জাপানের সঙ্গে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেটা হবে চার্টার্ড ফ্লাইট। একইভাবে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ওদের সঙ্গে সমঝোতা হলে এ ধরনের চার্টার্ড ফ্লাইট বিমানকে অপারেট করতে হতে পারে। কাজেই বিমান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ ছুটিতে যেতে পারছে না। যেই করোনা আতঙ্কে ফ্লাইট বন্ধ করা হলো সেটা দূর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের চার্টার্ড ফ্লাইট অপারেট করাটা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা প্রশ্ন করা হলে মোকাব্বির হোসেন বলেন, দুনিয়াব্যাপী বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর গাইড লাইন মেনে যেভাবে ফ্লাইট অপারেট করা হচ্ছে- সেভাবে সেফটি সিকিউরিটি নিয়েই এ ধরনের ফ্লাইট অপারেট করা হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই প্রতিটি যাত্রী ও ক্রুকে প্রটেকশান দেয়া হবে। গত দেড় মাসে এ ধরনের পরিস্থিতিতেই বিমানের সবাই কাজ করছে। এখানে সবাই ভাল আছে। বিমানের কোন স্টাফ অসুস্থ হননি। জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনা আতঙ্কে গত দেড় মাসে বিমানের লোকসান হয়েছে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতির এ পরিমাণ কোথায় গিয়ে ঠেকে সে বিষয়ে কোন ধারণা দিতে পারছে না বিমান। লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য বিমান কি ধরনের কৌশল ও কর্মসূচী নিবে জানতে চাইলে মোকাব্বির হোসেন বলেন, আগে দেখতে হবে এ সঙ্কট কোথায় গিয়ে থামে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর লোকসান মোকাবেলা করার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। এখন বিমানের সবাইকে সুস্থ থাকতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে ২৬ মার্চ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইট আরও বেশি দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ বিমান। সেই সিদ্ধান্তে জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ, দাম্মাম, কুয়েত, দোহা, মাস্কাট এবং ব্যাঙ্কক রুটের ফ্লাইট ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। দুবাই ১ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল, আবুধাবি ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল, কাঠমান্ডু ১ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল, কলকাতা দিল্লী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল, মালয়েশিয়া ১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল এবং সিঙ্গাপুরে সকল ফ্লাইট ১ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখা ছিল ফ্লাইটগুলো। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সব রুটে ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বিমান । এদিকে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট অপারেশান নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা। নতুন সিদ্ধান্তে এয়ারলাইন্সটি তাদের ফ্লাইট অপারেশন আরও বেশ কিছুদিন স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, আজ (রবিবার) থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধুমাত্র প্রতি রবিবার ঢাকা-গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। যা বর্তমানে সপ্তাহে ৩ দিন করে ফ্লাইট গুয়াংজু যাচ্ছে। অপরদিকে দোহা রুটে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ফ্লাইট স্থগিত থাকলেও সেটা বেড়ে ১৫ এপ্রিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে কলকাতা ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হলেও সেটা বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর রুটেও ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হলেও সেটা আরও বাড়িয়ে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। মাস্কাট রুটে ২৯ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হলেও সেটা বাড়িয়ে ৪ এপ্রিল করা হয়েছে। আর ব্যাঙ্কক রুটে ১৮ মে পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত থাকবে। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ রুটে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত থাকবে।
×