ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা প্রতিরোধের কৌশল আবিষ্কার দাবি ডুয়েটের তিন গবেষকের

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৯ মার্চ ২০২০

করোনা প্রতিরোধের কৌশল আবিষ্কার দাবি ডুয়েটের তিন গবেষকের

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে বিশে^ যখন টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই দেশীয় উদ্ভিদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি কৌশল আবিষ্কার করেছেন গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (ডুয়েট) তিন গবেষক। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ কৌশলটি আবিষ্কার করার দাবি করেন ডুয়েট’র ওই তিন গবেষক। ডুয়েট’র এ তিন গবেষক হলেন- যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুস সাহিদ ও কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম। গবেষক দলের প্রধান ডুয়েট’র যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ডুয়েট’র গবেষকগণ নোভেল করোনাভাইরাসের বিভিন্ন প্রোটিনসমূহ পর্যবেক্ষণ করে তাদের প্রকৃতি ও নেতিবাচক দিকসমূহ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। গবেষণাকালে করোনাভাইরাসের প্রোটিনগুলো পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখতে পান যে প্রোটিনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা শ^াসনালিসহ মানবদেহের ক্ষতি করতে সক্ষম। এমনকি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এসব রাসায়নিক উপাদানসমূহ নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান করেন গবেষকরা। তারা ভাইরাসের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক গ্রুপ যেমন কার্বোক্সিল ও এমাইনো গ্রুপ থাকার প্রমাণ পান। গবেষণাকালে তারা এসব রাসায়নিক গ্রুপের উপাদানগুলোকে অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় করতে অন্যান্য রাসায়নিক গ্রুপের প্রভাব রয়েছে বলে প্রমাণ পান। এ অবস্থায় গবেষকগণ দেশীয় ও সহজলভ্য রাসায়নিক গ্রুপের বিভিন্ন উৎস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন। এটি করতে গিয়ে তারা দেখেন যে আমাদের দেশের বিভিন্ন উদ্ভিদের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে হাইড্রক্সিল গ্রুপের এই উপাদানগুলো বিদ্যমান রয়েছে। যা একটি মেকানিজম অনুসরণ করে করোনা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। এখানে কার্বো অক্সাইল গ্রুপ এবং এমাইনো অক্সাইল গ্রুপকে কার্বোক্সিল গ্রুপ নিষ্ক্রিয় করতে পারে। পরবর্তীতে এসব উদ্ভিদকে প্রথমে এক্সট্র্যাক্ট করা হয় ও স্ট্রাকচারাল প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে পজেটিভ ফল পান গবেষকগণ। গবেষকদল তাদের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে সেটিকে ওষুধ বা প্রতিষেধকে রূপান্তর করতে মাইক্রোবায়োলোজি ও ফার্মাসিস্ট বিশেষজ্ঞদের কাজ করতে হবে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর সুফল তাদের আনতে হবে। ডুয়েট’র গবেষকগণ প্রাথমিকভাবে উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে কেমিক্যাল গ্রুপকে ব্যবহার করেছেন, যা করোনাভাইরাসের খারাপ প্রোটিনগুলোর ওপর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে মতামত পোষণ করেন। তাদের দাবি, এসবের সঙ্গে আরো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করেই করোনা নিরোধক ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে। এই গবেষণার খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক ও পরীক্ষাগারের বিভিন্ন পরীক্ষাসমূহ এখন চলছে। তাঁরা মনে করেন এখান থেকে ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরির আগে পুষ্টিবিদদের মাধ্যমে এসব উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক গ্রুপের একটি তালিকা সরকার প্রকাশ করতে পারেন। এতে সাধারণ মানুষ এই খাদ্যগুলো তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রেখে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী। শুধু করোনা নিরোধই নয়, ভাইরাস থেকে মানবদেহকে রক্ষা করতে ইলেক্ট্রো-ইস্পান পদ্ধতি ব্যবহার করে এন্টি-ভাইরাল ন্যানো-মেমব্রেনে তৈরি করার দাবি করেছেন গবেষকরা। গবেষকদের এ ধারণা চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের এন্টি-ভাইরাল পোশাক, গ্লাভস ও মাক্সসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরিতে সহায়তা করবে। গবেষণায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক ওষুধ তৈরির প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
×