ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরামপুরের এসি ল্যান্ড প্রত্যাহার

নাগরিকদের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনকে সম্মানজনক আচরণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৯ মার্চ ২০২০

নাগরিকদের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনকে সম্মানজনক আচরণের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তিন বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য যশোরের মণিরামপুরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। একইসঙ্গে মাঠ প্রশাসনকে নাগরিকদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে যশোরে এসিল্যান্ডের দুর্ব্যবহারের শিকার সেই তিন সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে হওয়া আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। শনিবার সকালে তিনি বলেন, এই ঘটনার জন্য আমার দুঃখ প্রকাশ করছি। মাঠ প্রশাসনকে নাগরিকদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যশোরের মণিরামপুরে মাস্ক না পরায় এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) সাইয়েমা হাসান বৃদ্ধদের কানধরে উঠবস করানোর ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মধ্যে মাঠ প্রশাসনকে এমন নির্দেশনা দিল সরকার। শনিবার সকালে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ডিসিদের এমন নির্দেশনা দেয়ার কথা জানান। সচিব বলেন, আমরা সকল জেলা প্রশাসকদের বলেছি, এই ধরনের ঘটনার (যেমন, বৃদ্ধদের কান ধরে ওঠবস) যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। সিনিয়র সিটিজেন তো অবশ্যই, যেকোন নাগরিকের সঙ্গে যাতে সম্মানজনক আচরণ করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেইজেও জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনাটি আমরা আপলোড করে দিয়েছি। করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে যশোরের মণিরামপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যানচালককে অনুরূপভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুক্রবার রাতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একজন সরকারী কর্মকর্তার এমন অমানবিক কর্মকা-ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক উর্ধতন কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে সাইয়েমাকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে বলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমরা ওই কর্মকর্তাকে (সাইয়েমা হাসান) প্রত্যাহার করে বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে সংযুক্ত করার জন্য বলেছি। সেটা করা হয়েছে। যে তিনজন সিনিয়র সিটিজেন সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে মণিরামপুরের ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মিডিয়াকে নিয়ে তাদের বাড়ি যাচ্ছেন, এবং তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন। সচিব বলেন, তাদের যদি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হয় সেটা দেবেন। এসিল্যান্ডকে সেখানে নেয়া হবে না, যেহেতু আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তার উর্ধতন কর্মকর্তারা গিয়ে স্যরি বলবেন। শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, আমরা খুবই দুঃখিত। যা ঘটেছে তাতে (সাইয়েমা হাসান) উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে তার পক্ষে আমাদের স্যরি বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাদের আচরণের জন্য আমাদের বিব্রত হতে হয়। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের অপমান, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও ॥ যশোর অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মনিরামপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অভিযানকালে বয়োজ্যেষ্ঠ চার ব্যক্তিকে অবমাননার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবমাননার শিকার ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া প্রত্যাহার হয়েছেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েমা হাসান। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযানকালে মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের চিনেটোলা বাজারে চার ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করান সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েমা হাসান। ওই ব্যক্তিদের মুখে মাস্ক না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেন তিনি। এ ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শনিবার সকালে সায়েমা হাসানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী। এদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী ঘটনাস্থল চিনেটোলা বাজারে যান। সেখান থেকে তিনি ঘটনার শিকার চার ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া তিনি খাদ্য সহায়তা করেন তাদের। এ সময় তিনি জানান, ঘটনার শিকার তিনজন ভূমিহীন হওয়ায় তাদের প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মনিরামপুর উপজেলায়। সায়েমা হাসানের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের আরও অভিযোগ আছে বলে জানায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এ ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। মুরব্বিদের এভাবে অপমান করা অন্যায়।
×