ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র প্রতিক্রিয়া

করোনায় ডাক্তারদের পক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষকদের বরখাস্তে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৯ মার্চ ২০২০

করোনায় ডাক্তারদের পক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষকদের বরখাস্তে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ডাক্তারদের ‘পিপিই’ ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের দুই কলেজ শিক্ষকের বরখাস্ত করে এবার সমালোচনার মুখে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারী কিছু কর্মকর্তা ডাক্তারদের ব্যবহার্য পিপিই ব্যবহার করে অফিস করার মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম নষ্ট করছেন এমন মন্তব্যকে ভিন্ন খাতে নিয়ে শিক্ষকের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের দুই শিক্ষকের বরখাস্তের আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে ফেসবুকে প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার উস্কানিমূলক তৎপরতায় কর্তৃপক্ষের নীরবতায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা। এর আগে ২৭ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষায় ‘অনভিপ্রেত ও উস্কানিমূলক’ বক্তব্য ও ছবি পোস্ট করায় সরকারী দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। দুই শিক্ষক হলেন- ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী এবং বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ কায়সার। বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা ঘটনাকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে বলেছেন, ডাক্তারদের ব্যবহার্য পিপিই যেসব কর্মকর্তা ব্যবহার করে সরকারের সুনাম নষ্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে বলেছি। শিক্ষক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী ইতোমধ্যেই বলেছেন, আমি হতভম্ব! কী বলব ? ডাক্তাররা কীভাবে আহাজারি করছেন, কর্মবিরতি করছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমাদের কিছু সরকারী কর্মকর্তা পিপিই পরে ফেসবুকে পোস্ট আপলোড করছেন। যদিও ডাক্তারের প্রায়োরিটি বেশি হওয়া উচিত। আমি এই বিষয়টির রূপক করে লিখেছিলাম। আমি বলতে চেয়েছি, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আমাদের দায়িত্বহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে। আমরা যেন এ সময় নিজেদের স্বার্থ চিন্তা না করে প্রায়োরিটি বেসিসে কাজ করি। ডাক্তাররা যেহেতু রোগীদের সরাসরি কনটাক্টে যান, তাই তাদের যেন সবার আগে পিপিই দেয়া হয়। তাদের যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। এই সময় যদি আমরা যাদের পিপিই প্রয়োজন নেই, তারা যদি পিপিই পরে ছবি আপলোড করি তাহলে জাতির কাছে, ডাক্তারদের কাছে ভুল মেসেজ যেতে পারে এই কথা চিন্তা করে আমি পোস্ট দিয়েছিলাম। আমার পোস্টে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তারা গালাগালি শুরু করলে, পোস্টটি আমি দুই ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলি। সরকারকে বিব্রত করার জন্য কিছু বলিনি। শিক্ষকদের এমন অবস্থানের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষকদের মাঝে। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ প্রমাণ করে যেসব কর্মকর্তা ডাক্তারদের পিপিই নিয়ে অফিস করছেন, ফেসবুকে ছবি দিয়ে অপরাধ করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় আসলে সেই অপরাধীদের পক্ষে। অবিলম্বে আদেশ প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র সদস্যরা। তবে একইসঙ্গে দুই বরখাস্ত কর্মকর্তার ফেসবুকে করা মন্তব্য যথাযথ না হওয়া ও দৃষ্টিকটু হওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়ররা। ফেসবুকে দুই পক্ষ লিখলেও একপক্ষকে শাস্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু অন্য পক্ষকে শোকজও না করার বিষয়টি পক্ষপাতিত্বের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অলিউল্লাহ মোঃ আজমতগীর, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক মোঃ মাসুমে রব্বানী খান ও স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য-সচিব সৈয়দ জাফর আলী। তারা আরও বলেছেন, ইতোমধ্যেই পিপিই ব্যবহার নিয়ে ডাক্তারদের বঞ্চনা ও ক্ষোভ, তাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়া, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি ও বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নিউজ প্রকাশ হয়েছে। সরকারের গোচরে আসায় সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এর বিরুপ প্রভাব পড়ে। এমন বিষয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ক্যাডারের দু’জন জুনিয়র সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে শিক্ষা ক্যাডারে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে অপর পক্ষের মন্তব্যগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ, সেগুলোও তীব্র আপত্তিকর ছিল। সেসব মন্তব্যকারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে একপেশে ব্যবস্থা গ্রহণ শিক্ষা ক্যাডারসহ ২৬ ক্যাডার সদস্যদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এটি অভিপ্রেত নয়।
×