ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর

প্রকাশিত: ১০:২১, ২৯ মার্চ ২০২০

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার ২৮ মার্চ ছিল রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনার এক বছর। আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু হয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা আজও প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় কাঁদছেন। ওইদিন দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ২৩তলা ভবনটির নয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনার সময় কর্মজীবী নারী-পুরুষরা প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ভবনের কাঁচের দেয়াল বেয়ে নামার চেষ্টা করে অনেকেই আহত হন। হাত ফসকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় অনেকের। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনী উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। সঙ্গে ছিল ফায়ার সার্ভিস। হেলিকপ্টার দিয়ে ছাদের ওপরে পানি ছিটানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু কপ্টারের বাতাসে আগুন বাড়ায় সে চেষ্টাও বন্ধ করতে হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের আবার হোস পাইপ দিয়ে পানি ছোড়া আর আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে থাকে। ওই ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ভবনের অনুমোদন, নক্সার ত্রুটি ও অগ্নিনিরাপত্তাকে দায়ী করা হয়। এরপর নগরীর সব ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নড়েচড়ে বসে সবাই। নগরীর বিভিন্ন ভবনে ‘অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা বিভিন্ন ব্যানার লাগিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। রাজউক, পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচী ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের তালিকা তৈরি করে রাজউক। কথা ছিল সেই তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। ভেঙ্গে ফেলা হবে সব নক্সা বহির্ভূত অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার থেমে যায় সব উদ্যোগ। ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ লেখা ভবনগুলোর সামনের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রকাশ হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকাও। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে বনানী থানায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া এফ আর টাওয়ার নির্মাণে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। মামলায় এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক ও ভবনের কয়েকটি ফ্লোরের মালিক বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি তাসভীর উল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুদকের মামলায় ভবন মালিক ফারুক, বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের কর্ণধার লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়। অগ্নিকা-ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত বছরের ২ এপ্রিল তদন্ত রিপোর্ট রাজউকের কাছে হস্তান্তর করে। তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট ইমারত বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, সার্বিক পর্যালোচনায় ভবনটির ১৮ তলার ওপর থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত মোট ৫টি তলা তৈরির কোন বৈধ কাগজপত্র মেলেনি। ভবনটির একটি নক্সা পাওয়া গেছে। নক্সায় মাটি থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। তবে ভবনটি অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এটি ভাঙ্গার প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন মোতাবেক সংস্কার করলে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী হবে। সংস্কার করতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগবে বলেও তিনি মতামত দেন।
×