ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ১০ কিমি খালের ৪ কিমি খননে ব্যয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা

মঙ্গলখাল পুনর্খনন হাজারো মানুষের মঙ্গল

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৯ মার্চ ২০২০

মঙ্গলখাল পুনর্খনন হাজারো মানুষের মঙ্গল

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ ধামইরহাট উপজেলার মঙ্গলখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের টেইসই প্রকল্পের আওতায় এলজিইডির মাধ্যমে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। খাল খনন হওয়ায় এলাকার হাজারো কৃষকসহ সাধারণ মানুষের ভাগ্যে মঙ্গল বয়ে এনেছে। পৌনে ১০ কিমির মধ্যে ৪ কিমির খালটি খনন করা হলেও বাকি খালও খনন করার দাবি জানিয়েছেন সমিতির সদস্যরা। তবে মঙ্গলখাল পুনঃখনন করায় হাজারো কৃষক সুফল পেতে শুরু করেছে ইতোমধ্যেই। জানা গেছে, ধামইরহাট পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই মঙ্গলখাল। সর্বশেষ ২০০৪-০৫ সালে খালটি খনন করা হয়। এরপর দীর্ঘ কয়েক বছরে খালটি খনন না করায় পলিজমে ভরাট হয়ে যায়। এতে করে সামান্য পানিতেই খাল উপচে ফসলিজমি ও পাশর্^বর্তী বাড়িঘর তলিয়ে যেত। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) থেকে ‘টেকসই ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খনন কাজটি করে ‘ধামইরহাট মঙ্গলখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। মঙ্গলখাল পৌনে ১০ কিমির মধ্যে ১ কেটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার ঘুকসি বিলের মঙ্গলকোঠা গ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে মালাহার গ্রামের পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত ৪ কিমি পুনঃখনন করা হয়। খাল খনন হওয়ায় উপজেলার ধামইরহাট পৌরসভার উত্তর চকযদু, মঙ্গলকোঠা, উমার ইউনিয়নের অন্তর্গত তালঝাড়ি, বেয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক সুবিধা ভোগ করছেন। মঙ্গলখালের তীরবর্তী দৌলতপুর গ্রামের অধিবাসী বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং মঙ্গলকোঠা গ্রামের সুবিধাভোগী আমজাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনে খালে পলি জমায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে খাল থেকে পানি উপচে ফসল ডুবে যায়। এছাড়া বন্যায় বাড়িঘরও তলিয়ে যেতো। খাল খনন করায় এ সমস্যা আর নেই। খালের পানি এখন ব্যবহার করছে কৃষকরা। এবার অনাবৃষ্টিতে আউশের ধান চাষ করেছে উত্তর চকযদু গ্রামের কৃষক রমজান আলী। তিনি বলেন, খালের পানি ব্যবহার করে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। তাছাড়া এ পানি ব্যবহার করে রবি মৌসুমে আলো, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপন্ন হচ্ছে। স্লুইস গেট বন্ধ করে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এ পানিতে কৃষকরা ব্যবসায়ী ভিত্তিতে হাঁস প্রাতপালন করছেন। জেলার সাপাহার উপজেলার জবইবিল এলাকার খামারি মোঃ তরিকুল ইসলাম ২৩০টি হাঁস নিয়ে এ খালের পানি ব্যবহার করছেন। কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, খরা মৌসুম শুরু হওয়ায় অন্যান্য অঞ্চল শুকিয়ে যাওয়ার তিনি হাঁসগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে এই খালের খবর পেয়ে তিনি হাঁসগুলো বর্তমানে এই পানিতে ছেড়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আলী হোসেন বলেন, মঙ্গলখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ৫২২ জন সদস্য রয়েছে। ২২টি শ্রমিকবদ্ধ দল নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খালটি পুনঃখননে এক্সেভেটর দিয়ে ৭০ শতাংশ এবং দরিদ্র শ্রমিকদলদের দিয়ে ৩০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষির প্রসার ঘটিয়ে, মৎস্যচাষ ও হাঁস পালনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সমিতির সদস্যের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটছে। এতে খাল পাড়ের মানুষের ভাগ্যে মঙ্গল বয়ে এনেছে। এছাড়া খালের বাকি অংশ পুনঃখননের জন্য নতুন করে বরাদ্দ আসলে সে অংশও খনন করা হবে।
×