ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই চিকিৎসকসহ আরও ৪ জন করোনায় আক্রান্ত

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৮ মার্চ ২০২০

  দুই চিকিৎসকসহ  আরও ৪ জন  করোনায় আক্রান্ত

নিখিল মানখিন ॥ দেশে দুজন চিকিৎসকসহ আরও চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগী দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন কোন করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটেনি। দেশে করোনায় মৃত্যুহার ১১ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ২৩ শতাংশ। করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে রয়েছে ৪৭ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে মোট ৫০ হাজার ৭৩৫ জনকে। সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে সংক্রমিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়ন্ত্রিত পরিসরে হলেও দেশে প্রায় প্রতিদিনই নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হট লাইনগুলোতে সারাদেশ থেকে আসা ‘করোনা সংক্রান্ত কল ’এর সংখ্যার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনা আতঙ্কে রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে কলের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হট লাইনগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে ৮২ হাজারের বেশি। করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৩২৩টি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৯২৩ জনকে তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদান করার জন্য ১১২৩ চিকিৎসক, ১৫৭৫ নার্স এবং অন্যান্য ১২৮৪ জনসহ মোট ৩৯৮২ সেবাদানকারী প্রস্তুত রয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৩ হাজার পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ করা হয়েছে। দুজন চিকিৎসকসহ আরও চারজন করোনায় আক্রান্ত ॥ আইইডিসিআর শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত অন লাইন প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, নতুন আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজন অন্যদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। তবে একজনের সংক্রমিত হওয়ার উৎস সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তথ্য অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া এই চারজনের মধ্যে একজনের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অরেকজনের ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন। আবার ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আরেকজন। ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই চারজনের মধ্যে দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। যারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছিলেন। এছাড়া চারজনের মধ্যে দুইজন ঢাকার বাইরে। আর দুইজন ঢাকার মধ্যে অবস্থান করছেন। আবার চারজনের মধ্যে দুইজনের দীর্ঘমেয়াদী রোগ আছে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে চারজনই এখন শারীরিকভাবে স্বাভাবিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে কোন রকমের জটিলতা নেই। এছাড়া আমাদের আগের যারা করোনা আক্রান্ত, তাদের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। তাদের মধ্যেও কোন ধরনের জটিলতা নেই। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০৬ জনের। এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেড়েছে করোনার নমুনা পরীক্ষা ॥ নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ২৬ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা কয়েকগুণ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমদিকে শুধু বিদেশ থেকে এসেছেন বা বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে এসেছেন তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু এখন যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুখে ভুগছেন, তাদের কারো মধ্যে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া যাদের নিউমোনিয়া ছিল, কি কারণে নিউমোনিয়া হচ্ছে তা দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার লোকজন যারা বিভিন্ন লোকের সংস্পর্শে আসে এমন লোকজনের মধ্যে লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিলে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ পরীক্ষার ভিত্তিতে আমরা দেখতে চাই বাংলাদেশের কোথাও কোন সংক্রমণ ঘটেছে কি-না। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন সেখানেও যাতে লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে তারা যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য জেলা পর্যায়ের হটলাইন চালু রয়েছে। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে ৪৭ জন- স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ শুক্রবার পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নে ৭৭ হাজার ২৩৭টি, ৩৩৩ নম্বরে ১৮১৭টি ও আইইডিসিআরের নম্বরে ৩৪৯০টি অর্থাৎ মোট ৮২ হাজার ৫৪৪টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ৬২ জন, সমুদ্রবন্দরসমূহে ১৮২ জন, স্থলবন্দরসমূহে ২০২ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩৩৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে এবং কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন ৪২৯১ জন। বর্তমানে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২৯ হাজার ৬৭৭ জন এবং এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে মোট ৫০ হাজার ৫৩২ জনকে। হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য কোয়ারেন্টাইনে বর্তমানে রয়েছে মোট ২৯ হাজার ৮৩৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে আনা হয়েছে ১০ জনকে। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আসা মোট ৩৩১ জনের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৮৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে মোট ৪৭ জন। সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে-আইইডিসিআর ॥ শুক্রবার অন লাইন ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন বলেন, রোগের বিস্তার যত হচ্ছে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রয়েছে বলে আমরা মনে করি, তবে এটা ব্যাপকভাবে হয়নি। তিনি বলেন, দুটি জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমণের উৎস এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা দুটি ক্ষেত্রেই তদন্ত করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটার সংক্রমণের উৎস জানা সম্ভব হয়নি। সেদিক থেকে সীমিত পরিসরে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি। তিনি বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পেশ করতে হবে। এখন পর্যন্ত দেশব্যাপী কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানান ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা। এদিকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চারটি স্তর রয়েছে। চারটি স্তরের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়টি হলো কমিউনিটি সংক্রমণ। এই স্তরে রোগ কোন সম্প্রদায়গতভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ সংক্রমিত হয়। সম্প্রদায়ের সংক্রমণ তখনই হয় যখন কোন রোগী কোন সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও বা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে কোন একটি দেশে সফর না করা সত্ত্বেও তার শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এ পর্যায়ে সংক্রমিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। যেমন ইতালি এবং স্পেন রয়েছে তৃতীয় স্তরে।
×