ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার মুক্তির সময় জমায়েত চরম দায়িত্বহীনতা ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৮ মার্চ ২০২০

  খালেদার মুক্তির সময় জমায়েত চরম দায়িত্বহীনতা ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে ঘরে রাখার চেষ্টার মধ্যে জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে হয়রানি না করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, জনগণকে রাস্তায় অহেতুক ঘোরাফেরা না করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে রাস্তায় যে কেউ প্রয়োজনে যেতেই পারেন। রাস্তায় গেলেই কাউকে হয়রানি করাটা দুঃখজনক। শুক্রবার রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারী বাসভবনে ফেসবুক লাইভ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রয়োজনে অবশ্যই যে কেউ রাস্তায় বের হতে পারে, তবে বিনা প্রয়োজনেও কেউ যদি বের হয়, তাকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতরকে থেকে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই কেউ ঘর থেকে বের হলেই তাকে হয়রানি করতে হবে তা সঠিক নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের কোন পদক্ষেপে আছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে বলা হয়েছে দশ টাকায় চাল বিতরণের জন্য। সেটি শীঘ্র শুরু হচ্ছে। এটি শহর অঞ্চলেও করা হবে যাতে এই করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক এ সঙ্কট চলাকালে নিম্নআয়ের মানুষের সুবিধা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দিনে হাসপাতাল, রাস্তা এবং তার গুলশানের বাড়িতে লোকজন জড়ো করে বিএনপি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, সব দেশের মানুষ যখন ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে, বৈশ্বিক এই রোগ মোকাবেলা করার জন্য যে যার অবস্থানে রয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তখন আমরা দেখতে পেলাম খালেদা জিয়ার মুক্তিলাভের সময় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষের জমায়েত, গুলশানে তার বাড়ির সামনেও মানুষের জমায়েত। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য যখন স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে, সেখানে শত শত লোকের জমায়েত চরম দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজকে পৃথিবী বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করছে। আমরা এ সময় কোন ধরনের রাজনৈতিক বাদানুবাদ চাই না। আমরা আশা করি, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করবে। আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সমর্থ হব। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কার্যত তারা ঘরেই অবস্থান করছেন। সরকার ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যা যা করার প্রয়োজন তারা তাই করছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যেমন তিনি তার ভাষণে বলেছেন, তেমনি তিনি এই দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, এই দুর্যোগের কারণে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটি নিয়েও সরকারের প্রস্তুতির কথা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন এবং পোশাক শিল্প খাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই ভাষণ সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ সারা পৃথিবীর মানুষ লক্ষ্য করছে একটি জীবাণুর কাছে মানুষ কত অসহায়। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ লকডাউন অবস্থায় আছে। পৃথিবী থমকে গেছে। তিনি বলেন, আমরা একটি জীবাণু মোকাবেলা করতে পারিনি, পরাস্ত করতে পারিনি। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীতে মেডিক্যাল রিসার্চের জন্য সরকারী ব্যয় হচ্ছে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা মাত্র কয়েকটি অত্যাধুনিক সামরিক বিমান তৈরির ব্যয়ের সমান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ৫ দেশ মোট সামরিক ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে, সেটা আরও বাড়ছে। আমরা আশা করব মানবজাতির ভাবার সময় এসেছে, আমরা এক অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ব্যয় বাড়াব, নাকি মানুষকে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দেয়ার জন্য ব্যয় বাড়াব। আমরা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ক্রমাগত সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেছি। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। আমি মনে করি, যেভাবে একটি জীবাণুর কাছে মানুষ অসহায় হয়ে গেছে, তা যারা অস্ত্রের প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তাদের বোধদয় ঘটাবে। এ সময় তথ্যমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সমাজের বিত্তবান মানুষদের প্রতিও আহ্বান জানান।
×