ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ মাসেও কোন কাজ চোখে পড়ছে না

ডিএনসিসির স্মার্ট কার পার্কিং এখনও আলোর মুখ দেখেনি

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২৮ মার্চ ২০২০

ডিএনসিসির স্মার্ট কার পার্কিং এখনও আলোর মুখ দেখেনি

মশিউর রহমান খান ॥ থমকে আছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) স্মার্ট কার পার্কিং ব্যবস্থা। রাজধানীর রাস্তায় যত্রতত্র কারপার্কিং বন্ধে রাস্তায় মাটির নিচে সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানোর মাধ্যমে পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করা ও নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে পার্কিংয়ের চলমান ধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হলেও গত ৫ মাসেও এটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। রাজধানীর রাস্তায় কারপার্কিংয়ে উন্নত বিশ্বের মতো যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য গুলশান ও উত্তরার মোট ১০০টি স্থানে স্মার্ট কারপার্কিং ব্যবস্থা চালু করার ডিএনসিসির এ ব্যবস্থা এখনও পরিকল্পনা ও ঘোষণাতেই আটকে আছে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, নবনির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর অবৈধভাবে দখল করা পার্কিংয়ের স্থানগুলো উদ্ধার হলেই দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম উত্তর সিটিতে রাস্তায় কার পার্কিংয়ে পরিবর্তন আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এ পরিবর্তনের কাজ যে কোন মূল্যেই শুরু করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উন্নত বিশ্বের মতো রাস্তায় ইচ্ছামতো কারপার্কিং বন্ধ করে এ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত বছরের নবেম্বরের শুরুর দিকে এ উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ডিএনসিসির ঘোষণা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে গুলশান ও উত্তরার মোট ১০০টি স্থানে স্মার্ট কারপার্কিং ব্যবস্থা চালু করার কথা ছিল। এ দুই এলাকায় থাকা সরকারী খোলা স্থানে বা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জমিতে এই পদ্ধতি চালু করার কথা। একই সঙ্গে রাস্তার পাশের সকল সরকারী সংস্থার বেদখল গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তিও দখল করে নাগরিকদের নির্বিঘেœ রাস্তায় চলাচলের স্বার্থে এসব জমি কাজে লাগিয়ে পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেয় ডিএনসিসি। তখনকার ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে এ পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান। কিন্তু গত ৫ মাসেও ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যায়নি। এমনকি সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করতেও দেখা যায়নি। ফলে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এসব উদ্যোগ কি শুধু ঘোষণাতেই আটকে যাবে না কি তা বাস্তবায়নও করা হবে এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, ডিএনসিসির পরিসংখ্যান মতে রাজধানীর গুলশান ও উত্তরার রাস্তাগুলো অন্য যে কোন এলাকার রাস্তার তুলনায় পরিকল্পিত। এছাড়া বেশ কিছু এলাকায় বিশাল রাস্তা ও এর আশপাশে কারপার্কিং করার মতো স্থানও রয়েছে। এছাড়া পাইলট প্রকল্পে হিসেবে এ দুই স্থানে স্মার্ট কারপার্কিং ব্যবস্থা চালু করা গেলে পরবর্তীতে অন্য সকল স্থানে এ পদ্ধতি চালু করা হবে বলে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে তৎকালীন মেয়র সাংবাদিকদের জানান। সে সময় পুরনো এলাকার বাইরেও নতুন যুক্ত হওয়া সকল ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি কিভাবে চালু করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নতুন তৈরি করা সকল রাস্তার পাশেই এ ব্যবস্থা চালু করা গেলে পরবর্তীতে কারপার্কিংয়ের বিষয়ে ভাবতে হবে না। তাই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান আতিকুল ইসলাম। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ শতাধিক স্থানে কারপার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলেও চালকদের সেসব স্থানে কারপার্কিং করতে তেমন আগ্রহী হতে দেখা যায় না। ফলে কারপার্কিংয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। এর বাইরে আইন অমান্য করে কার পার্কিংয়ের কারণে পুলিশকে গাড়ির চালক তথা মালিকদের জরিমানা ও গাড়ি ক্রোক করতেও দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তায় ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়ি ড্যাম্পিং স্টেশনেও পাঠানো হয়। তবুও কমাতে পারছে না যত্রতত্র কারপার্কিং। বর্তমানে রাজধানীর রাস্তায় গাড়ি পার্কিং নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। গাড়ি চালকদের ইচ্ছামতো যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এ থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণের জন্য এ রাস্তায় নির্দিষ্ট স্থানে ও ভবনের কার পার্কিংয়ের স্থানের বাইরে কোন গাড়ি পার্কিং করলেও তা অটোমেটিক জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। জানা গেছে, স্মার্ট পার্কিং পদ্ধতি চালু করা হলে কোন ব্যক্তি নিয়মের বাইরে কার পার্কিং করলে সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িটি অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, ইঞ্জিন নাম্বার, গাড়ির রংসহ সকল তথ্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে চলে আসবে। একইসঙ্গে প্রতিটি গাড়ির মালিককে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ দিয়ে অপরাধের কথা ও জরিমানা বা পার্কিং ফি জানিয়ে দেয়া হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ রাস্তায় মাটির নিচে আধুনিক সেন্সর বসাবে। জানা গেছে, এসব নির্দিষ্ট কার পার্কিং ব্যবস্থা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে না। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ও এলাকাভিত্তিক কারপার্কিং ব্যবস্থাপনায় নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে ডিএনসিসি স্থানীয় নাগরিকদের বা ইজারার মাধ্যমে এসব কারপার্কিং করবে। এতে বেশ কিছু নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাই জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ও কার পার্কিংয়ে শৃঙ্খলা আনতেই এমন পরিকল্পনা নেয় ডিএনসিসি। সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন গাড়ির পার্কিং ফি কত টাকা ও একটি গাড়ি কতক্ষণ পার্কিং প্লেসে অবস্থান করতে পারবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি ডিএনসিসি। সূত্র জানায়, উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য এর আগে গুলশান ও উত্তরার যেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং হবে এমন সব রাস্তায় যাতে কোন পানি না জমে ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে সেন্সরের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দেন তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু গত ৫ মাসেও এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। মেয়রের নির্দেশের পর ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাঈদ জনকণ্ঠকে সেই সময় বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্যামেরাযুক্ত সেন্সর দিয়েই নির্ধারিত পার্কিং স্থানের বাইরের যে কোন গাড়ির ছবি তুলে তা মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে এছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং করলে প্রতিটি গাড়ির চেসিস নাম্বার ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার আমাদের কাছে চলে আসবে। এতে করে কোন গাড়িটি কতক্ষণ পার্কিং প্লেসে অবস্থান করেছে তার ফি কত তার তথ্যও জানতে পারবো। মোট কথা নির্ধারিত স্থানে বা যত্রতত্র তার ইচ্ছামতো কার পার্কিং করতে না পারেন ও পার্কিং ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মেয়র তার পরিকল্পনার কথা আমাদের জানিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি এর মাধ্যমে রাজধানীর যত্রতত্র কার পার্কিং অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না পুরো উত্তরা ও গুলশান এলাকায়। প্রাথমিকভাবে গুলশান ও উত্তরার ১০০টি স্থানের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলা হলেও তা আজো করা হয়নি। তালিকা শেষে অবৈধ স্থান দখল করা, খোলা স্থান উপযোগী করে তোলা ও এসব স্থানে মার্জিন করাসহ পার্কিং করার ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা থমকে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমি নতুন করে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর অবশ্যই আজ না হয় কাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রাজধানীতে স্মার্ট কার পার্কিং ব্যবস্থা চালু করবোই। আমি দায়িত্বকালীন পুলিশ, ডিটিসিএ, বিআরটি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক সার্কেল বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করেছি। রাজধানীর রাস্তায় ইচ্ছামতো কারপার্কিং বন্ধ করে এ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা স্মার্ট কারপার্কিং সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে রাস্তায় মাটির নিচে সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানো ও তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে কার পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করতে প্রাথমিকভাবে গুলশান ও উত্তরার মোট ১০০টি স্থানকে নির্ধারণ করতে দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। পাইলট এ প্রকল্পটি চালু করা আমাদের জন্য আজ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। এতে সফল হলে পুরো ডিএনসিসি এলাকায় এ ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এছাড়া একই সঙ্গে নতুন সকল এলাকায়ই এ ব্যবস্থা শুরু থেকেই কিভাবে চালু করা যায় তাও এখন থেকেই ভাবা হচ্ছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, জনগণের টাকায় আমরা রাস্তা করছি, আর সেই রাস্তায় যে কেউ যখন তখন গাড়ি পার্কিং করে রাখবেন তা হতে পারে না। মূলত পার্কিংয়ে নৈরাজ্য চলতে দেয়া হবে না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটির কাজ কেন এখনও শুরুই করা হয়নি তা আমি সিটি কর্পোরেশনে বিশেষভাবে খোঁজ নেব। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে যত্রতত্র কারপার্কিং ঢাকার জন্য ভয়ানক অবস্থায় রূপ নিয়েছে। তা দূর করতে সবাইকে একযোগে ও সময়মতো সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×