ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমতে শুরু করেছে চাল পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৭ মার্চ ২০২০

কমতে শুরু করেছে চাল পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের জ্বরে কাবু নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে চাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মতো নিত্যপণ্যের দাম। এছাড়া নিত্যপণের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। দেশী ও বিদেশী কোম্পানিগুলো বিশেষ করে যারা ভোগ্য ও নিত্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণন করছে করছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। পণ্য আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলাসহ চালু রাখা হয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। এদিকে, করোনাভাইরাসের টানা দশদিনের ছুটির দ্বিতীয় দিন শুক্রবার রাজধারীর কাঁচাবাজার ছিল অনেকটাই ফাঁকা। শাক-সবজি ও নিত্যপণ্যের চালু থাকলেও কেনাকাটা তেমন হয়নি। এ কারণে বাজারের তেজিভাব আর নেই। শাক-সবজির দামও কমতে শুরু করেছে। বাজারে কোন পণ্যের সঙ্কট নেই। চাহিদামতো বাজারে সব জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইসারে প্রভাবে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ৯টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে-নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে পণ্যের বাজার দর স্থিতিশীল রাখা। এজন্য বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারকরণ করা হয়েছে। ছুটিকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বাস্থ্যগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধান করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল ও বিক্রয় প্রতিনিধির চলাচল নির্বিঘœকরণে সহায়তা প্রদান করা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার জন্য বন্দরসমূহকে কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য নির্দেশনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের নিমিত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম চালু রাখা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে কোন পণ্যের সঙ্কট নেই। নগরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পণ্যসামগ্রী কিনেছেন। এ কারণে চালসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে এখন দাম কমতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে নিত্যপণের দাম আর বাড়বে না। তিনি বলেন, এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে বাজারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। বিশেষ করে বাজার মনিটরিং টিম ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করছে প্রতিটি বাজারে। ফলে কারসাজির কোন সুযোগ থাকছে না। এছাড়া টিসিবির পণ্য বিক্রি ও খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম চলছে। সবমিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি ভাল। এছাড়া বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও দেশীয় কোম্পানির উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। দাম কমাতে পেঁয়াজের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখা, তৈরি পোশাকসহ সকল শিল্পকারখানায় আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজারসমূহে ব্যবসায়ীগণ এবং ক্রেতাসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিতকরণ করা হয়েছে। এদিকে, গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সকল বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এলসি লেনদেন, চেক ক্লিয়ারিং, রিয়েল টাইম গ্রোস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন), অনলাইন ডিপোজিটসহ সকল কালেকশন এ্যান্ড পেমেন্ট সার্ভিস চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখাসমূহকে অতিরিক্ত ১ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে নির্দেশনা প্রদানের জন্য গবর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে নেসলে বাংলাদেশ ও ইউনিলিভার লিমিটেডসহ বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও দেশীয় কোম্পানীর দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখার অনুমতি প্রদানের বিষয়ে দিকনিদের্শনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ উৎপাদনশীল জেলাসমূহ পাবনা, ফরিদপুর, যশোর, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, হতে দেশব্যাপী বিস্তৃত সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে সারাদেশ থেকে পেঁয়াজ ও অন্যান্য সামগ্রী ঢাকা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সহায়তার পাশাপাশি বিক্রয় প্রতিনিধির চলাচলে সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট দফতরকে নিদের্শনা প্রদানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। ভোক্তাদের কেনাকাটা কমে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এ কারণে বাজারে চাহিদামতো পণ্যের সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার অভাবে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। কেজিপ্রতি মোটা চালে ২ টাকা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৮ টাকা। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪৮-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যা একদিন আগেও ৫০-৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে সরু মিনিকেটে ও নাজিরশাইল চাল আগের মতো বাড়তি দাম অর্থাৎ ৫৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করোনা আতঙ্কে সপ্তাহখানেক আগে হুমড়ি খেয়ে সবাই চালের কিনে নিয়েছে। এখন বাজারে চালের কোন ক্রেতা নেই। এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারে চাল বিক্রেতা ফজলুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এখন চালের ক্রেতা নেই। যা কেনার সবাই এক সপ্তাহ আগে কিনে নিয়েছে। ওই সময় কিছু মুনাফা হলেও এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। চালের মতো দাম কমে আদা ১২০-১৫০, রসুন ৮০-১১০, পেঁয়াজ ৩৫-৫০, ব্রয়লার মুরগি ১১০-১২০, ডিম ফার্ম ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে চিনি ও আটার দাম। চিনি ৬৫-৭০. আটা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে মশুর ডাল ৭০-১৩০, আলু ২০-২৫ এবং ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা বেড়েছে মাছের দাম। এছাড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×