ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনাভাইরাস

দেশবাসীকে সচেতন করছেন সাকিব-মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৮ মার্চ ২০২০

  দেশবাসীকে সচেতন করছেন  সাকিব-মুশফিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘নামাজ পড়ুন, আল্লাহকে ডাকুন’। সবাই তাই করার চেষ্টা করছেন। ক্রিকেটাররা এখন ব্যস্তহীন জীবন কাটাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কোন খেলা নেই। ক্রিকেটাররা এখন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাদমান ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীরা ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। সেখান থেকেই দেশবাসীকে সচেতন করছেন ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়া থেকে অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফিরে টেস্ট ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক ও অনুর্ধ-১৯ দলের পেস অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী আগেই ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকেন। তাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীও ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতার কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। অনেক সচেতন নাগরিক ঝুঁকি মোকাবেলায় নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বেচ্ছায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ গেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেও গেছেন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’। গত শনিবার রাতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান সাকিব। সেখানে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে একটি হোটেলে ‘আইসোলেশনে’ যান এই তারকা। এ জন্য নিজের মেয়ের সঙ্গেও দেখা করেননি তিনি। এক ভিডিও বার্তায় মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে সাকিব নিজেই ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকার কথা প্রকাশ করেন। ভিডিওতে সাকিব বলেন, ‘আমি মাত্রই যুক্তরাষ্ট্র এসে পৌঁছলাম। যদিও প্লেনে সব সময় ভয় কাজ করেছে একটু হলেও। তারপরও চেষ্টা করেছি, নিজেকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। তারপর যখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলাম, আমি সোজা একটি হোটেলের রুমে উঠেছি। আমি ওদের (পরিবারকে) অবগত করেছি, এখানে থাকব কিছুদিন এবং আমি যেহেতু ফ্লাই করে এসেছি আমার একটু হলেও ঝুঁকি আছে। তাই আমি নিজেকে আইসোলেটেড করে রেখেছি।’ সঙ্গে সাকিব যোগ করেন, ‘আমি আমার বাচ্চার সঙ্গে দেখা করিনি। এটা অবশ্যই আমার জন্য কষ্টের। তারপরও আমার কাছে মনে হয়, আমার এই সামান্য স্যাক্রিফাইসটুকু করতে পারলে অনেক দূর এগুতে পারব।’ সচেতনতা থেকেই জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম বাসায় থাকছেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বাইরে বেরই হচ্ছেন না। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজের এবং পরিবারের সচেতনতার জন্য এখন বাসায় অবস্থান করছি। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছি না। যতটুকু সম্ভব সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। নিজে সুস্থ থাকুন এবং অন্যকে সুস্থ রাখার সহযোগিতা করুন। মনে রাখবেন আমার হাতেই আমার সুরক্ষা।’ বাসায় আছেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার, ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালও। তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সচেতনতামূলক বার্তা দেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সঙ্গে জিততে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাই দায়িত্ব পালন করলে আমরা এ লড়াইয়ে জিতব ইনশাআল্লাহ।’ বাংলাদেশ টি২০ দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করোনাভাইরাস রোধে সতর্ক থাকতে বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয়; কমবেশি সবাই এটা সম্পর্কে জানি। এ মুহূর্তে এর প্রতিষেধক নেই। আমরা নিজেদের যতটা সাবধান রাখতে পারি, তত ভাল। হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ক্রিকেটারদের সবাই চেনে। তাই বার্তাটি আমাদেরই মানুষকে বেশি করে দিতে হবে। একজন আরেকজনের ব্যাপারে সতর্ক হতে বলতে হবে। করোনা প্রতিরোধের ব্যাপারগুলো নিয়ে সচেতন হলে সবার মঙ্গল।’ বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও আছেন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থাকতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব পুরো বিশ্বে। সবকিছুর আগে বেঁচে থাকা। সবার আগে জীবন।’ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক যেমন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সবাইকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। বাড়িতে থাকুন দয়া করে। এর (করোনা) সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।’ করোনা আতঙ্কে ভুগছেন নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলমও। নারী টি২০ বিশ্বকাপ শেষে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেই ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। তবে নিজেকে ফিট রাখতে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন পেস অলরাউন্ডার। করোনা নিয়ে নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন নারী পেসার জাহানারা। তার মতে, করোনা নিয়ে অনেকেই যথেষ্ট সচেতন নন। সবাইকে তাই নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিলেন জাতীয় দলের এ পেসার। জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের জাহানারা আলম ও লতা মন্ডল ছাড়া বাকিরা সবাই ঢাকার বাইরে নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। পুরুষ দলের ক্রিকেটাররা দেশেই ছিলেন। শুধু সাদমান ও মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা দেশে ফিরে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। নারী দলের ক্রিকেটাররা টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। মাসের শুরুতেই তারা দেশে ফিরেন। তারা ফেরার পর ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকার যে দুই সপ্তাহ তা কেটে গেছে। কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নেই। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরা নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কবে তারা ফিরেছেন, কী অবস্থায় আছেন, সেই খবর নেয়া হয়েছে। দেশে তারা ২০ দিন কাটিয়ে দিলেও কারও মধ্যে নেই করোনাভাইরাসের উপসর্গ। তাতে স্বস্তিই কাজ করছে। তবে সবাই এখন আছেন নিজ বাসায়। প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন ক্রিকেটাররা। সতর্ক থাকার পরামর্শ দেশবাসীকেও দিচ্ছেন তারা।
×