ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফে বিদেশফেরত শতাধিক রোহিঙ্গা আত্মগোপনে

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ২৮ মার্চ ২০২০

  টেকনাফে বিদেশফেরত শতাধিক রোহিঙ্গা  আত্মগোপনে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে নিতে প্রশাসন প্রস্তুত থাকলেও তাদের সন্ধান দিচ্ছে না কেউ। টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশ গমন করেছিল এই রোহিঙ্গারা। সৌদি আরবে ধরপাকড়সহ কড়াকড়ি আরোপ হওয়ায় তারা ফিরে আসে বাংলাদেশে। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে ফিরে এলেও অনেকে সফর তালিকায় পরে চলে আসে বাংলাদেশে। এখানে এসে আত্মগোপন করে। এতে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। আতঙ্কের মধ্যেই অবশেষে কক্সবাজারে প্রথম একজন করোনাভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত মহিলা রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা রোগী মোসলিমা খাতুন চকরিয়া খুটাখালীর রশিদ আহমদের স্ত্রী। তিনি কক্সবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমানের মাতা। তার বয়স প্রায় ৭০ বছর। তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরা পালন শেষে ১৩ মার্চ দেশে ফেরেন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ওই মহিলাকে বিশেষ এ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার করোনাভাইরাসের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে। তবে এখনও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই মহিলা। এদিকে গত ৩ দিনে বিদেশফেরত ৩৭ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত মহিলা রোগী শনাক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। বিদেশফেরত শতাধিক ব্যক্তির হিসাব প্রশাসনের কাছে থাকলেও তার মধ্যে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা। তারা ইতোপূর্বে বাংলাদেশের ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট বানিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছিল। এ কারণে বাংলাদেশে ফেরার পর ইমিগ্রেশনে দেয়া পাসপোর্টের ওই ঠিকানা মতে, প্রশাসনের লোকজন তাদের খুঁজতে গেলেও সন্ধান মিলছে না। তাদের স্বজনরা ক্যাম্পে অবস্থান করায় বিদেশফেরত ওইসব ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে ক্যাম্প অভ্যন্তরে। গোপনে তাদের স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে সন্ধান দিচ্ছে না। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারী অস্ত্রসহ বহু আগ্নেয়াস্ত্রের জমাদারখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিম তার দলবল নিয়ে ক্যাম্পে লুকিয়ে থাকলেও রোহিঙ্গারা সেই খবর পর্যন্ত গোপন রেখেছে। অস্ত্রধারী একাধিক ডাকাত সর্দারকে পুলিশ-র‌্যাব হন্যে হয়ে খুঁজলেও রোহিঙ্গারা (আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা) তাদের সন্ধান দিচ্ছে না প্রশাসনকে। বিদেশফেরতদের খবর গোপন রাখা কতটুকু আশঙ্কাজনক বিষয়টি বুঝেও অকৃতজ্ঞ রোহিঙ্গারা খবর বলছে না প্রশাসনকে। অপরদিকে প্রশাসনের কাছে ইমিগ্রেশনের তালিকা মতে সংবাদ থাকলেও ভারত থেকে এসে গোপনে শিবিরে আশ্রয় নেয়া বহু রোহিঙ্গার খবর নেই। সোমবার ভোরে গোপনে ঢুকে পড়া ৪ সদস্যের এক রোহিঙ্গা পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে ক্যাম্প প্রশাসন। শিশুপুত্র পারভেজ ও দশ মাস বয়সের কন্যা সাজেদাকে নিয়ে রোহিঙ্গা মোঃ ছাদেক তার স্ত্রী হোসনে আরাসহ কুলনা সীমান্ত পথে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। সোমবার ভোরে সড়কপথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪-এর ই ব্লকে মোস্তাক আহম্মেদের বাসায় আসে গোপনে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর তাদের ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসে ডেকে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তারা জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) টেকনাফের লেদা হাসপাতালে আছে।
×