নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন থাকা ৩ জনের ২জনকে শুক্রবার সকালে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৫০৫জন। এ পর্যন্ত মাদারীপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল ১ হাজার ৩৫০ জন এবং হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিল ৩ জন। সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ছিল ৩ জন। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩ জন রিলিজ নিয়েছে এবং আইসোলেশনে থাকা ৩ জনের ২ জন রিলিজ হয়েছে। এখন আইসোলেশনে আছে ১জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে রিলিজ পেয়েছেন ৮৪৮ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে ৫০৫ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
সারা দেশের মধ্যে করোনা ভাইরাসের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মাদারীপুর জেলা। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে এমন শঙ্কায় জেলার চার উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি অর্ধশতাধিক হাসপাতালে কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী আসলেও সেখানে বসেন না কোন ডাক্তার। চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। একশ‘ শয্যার সদর হাসপাতালের প্রায় সব শয্যা এখন ফাঁকা। রোগীও নেই, নেই দশনার্থীর ভিড়।
শুক্রবার মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগী না থাকায় জরুরী বিভাগে নেই চিকিৎসক। নার্স ও চিকিৎসকের সহকারী তিনজন বসে আছেন জরুরী বিভাগে। রোগীদের কোন আনাগোনাও নেই। দর্শনার্থীদের দেখাও মেলেনি। নিচতলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা মেলেনি কোন রোগী। তবে এখন শিশু ওয়ার্ড ফাঁকা থাকলেও একটি বেডে বিড়াল রয়েছে শান্তির ঘুমে। মহিলা ওয়ার্ডে মাত্র ৫ জন রোগী। দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ড ফাঁকা। তবে তৃতীয় তলার লেবার ওয়ার্ডে রয়েছেন কয়েকজন রোগী। চিকিৎসকের কোন দেখা না পেলেও নার্সরা রোগীদের দেখাশোনা ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কায় মাদারীপুর জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালসহ শিবচর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গড়ে প্রতিদিন তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী ভর্তি হতো। সেখানে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ছিল মাত্র নামে কয়েজ জন। এছাড়া এসব রোগীর দর্শনার্থীও আসছেন না। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় কমে গেছে লোকজনের সমাগম। প্রতিটি হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। সরকারি
মহিলা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স বলেন, “গত তিনদিন ধরে করোনার আতঙ্কে রোগী ক্রমশই কমে যাচ্ছে। তাই চিকিৎসকও তেমন নেই। চিকিৎসকরা সকালে এসে ঘুরে গেছে। মহিলা ওয়ার্ডের শয্যা ২২টি। গত ১০দিন আগেও রোগীদের জায়গা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হত। এখন ৩ জন রোগী মাত্র। এছাড়াও সার্জারী ওয়ার্ড এখন পুরোটাই ফাঁকা।”
হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া একজন রোগীর মা বলেন, “আমি আমার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি ছিলাম। পুরো শিশু ওয়ার্ডে আমি একাই ছিলাম। হাসপাতালে নীরবতা কোন হইচই নেই। লোকের সমাগম নেই। এ কারণে অনেকটা ভয় হয়। তাই হাসপাতাল ছেড়ে চলে এসেছি। তবে নার্সরা আমাদের দেখাশুনা করছেন।”
মাদারীপুর সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে খুবই করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে মাদারীপুর। তাই সদর হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পূর্বের মত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছে না। খুবই অল্প সংখ্যক রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রোগী না আসলেও আমাদের ডাক্তাররা তাদের ডিউটি ঠিকই পালন করছেন। এছাড়াও আমাদের সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা নিয়মিত বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বহির্বিভাগেও অনেক কম। করোনা ভাইরাসের জন্য এ অবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা দিনরাত কাজ করছি।”
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: