ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা নিয়ে পোস্ট, ২ শিক্ষক বরখাস্ত

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৭ মার্চ ২০২০

করোনা নিয়ে পোস্ট, ২ শিক্ষক বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষায় ‘অনভিপ্রেত ও উস্কানিমূলক’ বক্তব্য ও ছবি পোস্ট করায় সরকারী দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা ঘটনাকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে বলেছেন, ডাক্তারদের ব্যবহার্য পিপিই যেসব কর্মকর্তা ব্যবহার করে সরকারের সুনাম নষ্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে বলেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ছবি পোস্ট করার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সরকারী কর্মচারী (আইন ও শৃঙ্খলা) বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু হবে না তার জবাব দিতে শোকজ করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত ওই দুই শিক্ষক হলেন- ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী এবং বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ কায়সার। এই দুজনকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে শোকজ নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে আলাদা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু দেশব্যাপী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/দফতর/সংস্থা বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সে অবস্থায় আপনার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অনভিপ্রেত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং ছবি পোস্ট করেছেন। যা সরকারের চলমান সমন্বিত কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদেশে আরাও বলা হয়, আপনার এমন কার্যকলাপ সরকারী ব্যবস্থাপনা বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জনস্বার্থ বিরোধী আচরণ হিসেবে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালা) ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে গণ্য। যেহেতু বর্ণিত অসদাচরণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আপনাকে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি-১২ অনুযায়ী সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। তবে সাময়িক বরখাস্তের এই সময়ে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী তারা দুজনই খোরপোষ ভাতা পাবেন। তবে ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের ব্যবহার্য সামগ্রী পিপিই সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা ব্যবহার করে অফিস করছেন। এসব কর্মকর্তারা ডাক্তারদের ব্যবহার করা পোশাক পরিধান করে অফিস করে আবার নিজেদের ফেসবুকে ছবি শেয়ার করছেন। অথচ পিপিইর অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে কাজ করতে হচ্ছে ডাক্তারদের। এমন ঘটনায় ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের সঙ্গে ডাক্তারদের বিরোধী তুঙ্গে উঠেছে। যেখানে ডাক্তাররা পিপিই পাচ্ছেন না সেখানে কর্মকর্তারা এসব সামগ্রী কোথায় পাচ্ছেন এমন প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপার চলছে। প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ গত ২১ মার্চ ফেসবুকে লেখেন, ‘করোনার ভয়ে চাকরি ছাড়ার সংবাদটা বুলগেরিয়ার। বাংলাদেশের ডাক্তার ভাইয়েরা আপনার নিজের জীবন আগে, তারপর আপনার পরিবার, ছেলে মেয়ে, স্ত্রী তারপর অন্যসব। যে দেশ আপনার পেশার মূল্যায়ন করে না সে দেশের জন্য কাজ করে কী হবে। সেখানে তিনদিনের ইউএনও ৫৫ বছরের একজন প্রফেসর ডাক্তারের নিয়ন্ত্রক থাকে, যে কি না ডাক্তারির ‘ডি’ ও জানেন।’ শিক্ষক কাজী জাকিয়া তার ফেসবুকে লেখেন, ‘খা সব খেয়ে ফল (ফেল)। শিক্ষা খয়েছিস, ছাব্বিশটা ক্যাডার খেয়েছিস, সরকারকে খেয়েছিস, সরকারের সুনাম, অর্জন, স্বপ্ন সব খেয়েছিস। এবার পিপিই খা। সব তোরাই খা। আমাদের লাগবে না। মুখে মাস্ক দিয়ে বসে থাক সব নির্লজ্জ, রাক্ষসের দল। বিপদে পড়লে কোন অরক্ষিত ডাক্তারের কাছে যাবি না, যদি সামান্য লজ্জা থাকে। আর দেশের সবাই মরে গেলে নিজেরা ঝাড়ুদার ক্যাডারে এবজর্বড হয়ে যাস, আর সেলফি দিস।’ স্ট্যাটাসের সঙ্গে কয়েকটি ছবিও আপলোড করে দিয়েছিলেন শিক্ষক কাজী জাকিয়া। আদেশের বিষয়ে শিক্ষক কাজী জাকিয়া বলেছেন, আমি হতভম্ব! কী বলব? ডাক্তাররা কীভাবে আহাজারি করছেন, কর্মবিরতি করছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমাদের কিছু সরকারী কর্মকর্তা পিপিই পরে ফেসবুকে পোস্ট আপলোড করছেন। যদিও ডাক্তারের প্রায়োরিটি বেশি হওয়া উচিত। আমি এই বিষয়টির রূপক করে লিখেছিলাম। আমি বলতে চেয়েছি, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আমাদের দায়িত্বহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে। আমরা যেন এ সময় নিজেদের স্বার্থ চিন্তা না করে প্রায়োরিটি বেসিসে কাজ করি। ডাক্তাররা যেহেতু রোগীদের সরাসরি কনটাক্টে যান, তাই তাদের যেন সবার আগে পিপিই দেয়া হয়। তাদের যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। এই সময় যদি আমরা যাদের পিপিই প্রয়োজন নেই, তারা যদি পিপিই পরে ছবি আপলোড করি তাহলে জাতির কাছে, ডাক্তারদের কাছে ভুল মেসেজ যেতে পারে এই কথা চিন্তা করে আমি পোস্ট দিয়েছিলাম। আমার পোস্টে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তারা গালাগালি শুরু করলে, পোস্টটি আমি দুই ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলি। সরকারকে বিব্রত করার জন্য কিছু বলিনি। প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ কায়সার বলেন, চাকরি বিধি অনুযায়ী আমাকে শোকজ করা হয়েছে। কোন মন্তব্য করতে পারি না। সারা বাংলাদেশ এখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছে। এই সময় ডাক্তারদের সবার আগে প্রটেকশন দরকার, সেই সতর্কতার কথা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। শোকজের উত্তর দেব।
×