ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৭ মার্চ ২০২০

অবশেষে চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনা সতর্কতায় শুরু হয়েছে ১০ দিনের ছুটি এবং অঘোষিত লকডাউন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার সড়কগুলো জনমানবহীন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিলক্ষিত হয় ফাঁকা সড়কে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের টহল। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে চলে এসেছে ভাইরাস শনাক্তের কিট। ফৌজদারহাটে অবস্থিত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে শুরু হয়েছে নমুনা পরীক্ষা। পাশাপাশি চলছে নগরীর সড়কগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার কার্যক্রম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চিকিৎসা ও আইসোলেশনের জন্য কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হলেও কিটের অভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছিল ঢাকার আইইডিসিআর-এ। কিন্তু প্রত্যাশিত সেই কিট এসে গেছে। ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডিতে এর মধ্যে সাতজনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনা নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে। এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নগরজুড়ে চলছে পরিচ্ছন্নতা এবং সড়কগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার কার্যক্রম। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ছিটানো হয় ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি। বেলা বারোটার দিকে মহানগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকা থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পাঁচটি গাড়ি নিয়োজিত হয় এ কাজে। ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন স্টেশনের সিনিয়র অফিসার আবদুল মান্নান জানান, এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রথম দিন পানি ছিটানো হয় আন্দরকিল্লা ও আশপাশের এলাকায়। পর্যায়ক্রমে পুরো শহরে ব্লিচিং পাউডারের পানি ছিটানো হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগেও চলছে এ কার্যক্রম। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো এ কাজ চলে। এদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পূর্বগেট থেকে শুরু করে নার্সেস ক্যান্টিন, মেডিক্যাল কলেজ সড়ক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি ছিটানো হয়। মেয়র নিজেই এ কাজে অংশ নেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণকে সচেতন করতে মাইকিংসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠন করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তিনি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে ঘোরাফেরা না করার অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার চসিকের ব্লিচিং পাউডারযুক্ত পানি ছিটানোর সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির, চমেক অধ্যক্ষ ডাঃ শামীম হাসান, বিএমএ সভাপতি ডাঃ মুজিবুল হক খান এবং হাসপাতাল ও কলেজের কর্মকর্তারা। ফাঁকা বন্দরনগরী ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ১০ দিনের ছুটি। তবে এ ছুটি বেড়াবার জন্য নয়। ঘর থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হওয়ার উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আর সরকারের এ নির্দেশনা যেন প্রতিপালিত হয় সে জন্য সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে সেনা টহল। একের অধিক মানুষ জড়ো হলে তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাধ্য করা হচ্ছে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে। মহানগরীতে কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। চলছে না কোন যন্ত্রচালিত যান। সড়কে কিছু রিক্সা চলাচল করছে, জীবিকার জন্য যাদের রাস্তায় বের না হয়ে উপায় নেই। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ অনিক বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রশাসনের এ তৎপরতা কোন অভিযান নয়। এখানে কাউকে দ- দেয়ার বিষয়ও নয়। আমরা চাইছি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে। বিনা কারণে কাউকে রাস্তায় দেখা গেলে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাও প্রশাসনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, ওষুধের দোকান, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও খাদ্য সামগ্রীর দোকান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান খুলতে দেয়া হচ্ছে না। তবে পোশাক শিল্পসহ প্রাইভেট যে সেক্টরগুলো খোলা রয়েছে তাদের যাতায়াতে আমরা কোন বাধা দিচ্ছি না। নিজের ও দেশের স্বার্থে এ সময়টুকু অত্যন্ত সতর্কভাবে কাটানোর আহ্বান জানান জেলা প্রশাসনের এই ম্যাজিস্ট্রেট। উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে নৌবাহিনী ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনী। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে উপকূলীয় এলাকায় তৎপর হয়েছে নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্টসমূহ। স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করা, বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় ভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিদেশ ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে লে. কমান্ডার এম মাহবুব শিকদারের নেতৃত্বে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বাঁশখালী থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতা জানান, যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাঁশখালীতেও সড়ক ও বাজারগুলো জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে টহল দিচ্ছেন। বিশেষ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের ওপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। বাঁশখালীতে বিদেশ ফেরত ১৬৯ প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার।
×