ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়া ও ভুটান তাদের কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে

ঢাকায় আটকেপড়াদের ফিরিয়ে নিতে রাজি নয় কোন এয়ারলাইন্স

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৭ মার্চ ২০২০

ঢাকায় আটকেপড়াদের ফিরিয়ে নিতে রাজি নয় কোন এয়ারলাইন্স

আজাদ সুলায়মান ॥ ঢাকায় আটকেপড়া বিদেশীদের স্পেশাল ফ্লাইটে ফিরিয়ে নিতে রাজি হচ্ছে না কোন এয়ারলাইন্স। করোনা ভীতিতেই এয়ালাইন্সগুলোর এ ধরনের অনীহা। এখানে আটকে পড়াদের মধ্যে দেশের নাগরিকরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কানাডা, জাপান, ইতালি, নরওয়ে ও সিঙ্গাপুরসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকরা রয়েছেন। এসব দেশের বেশকিছু নাগরিক এখন নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব। ইতোমধ্যে ঢাকায় তাদের আবাসিক প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ করে- রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ওই সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের সহযোগিতা চাওয়ার পর সিভিল এভিয়েশনকে প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বুধবার রাতে মালয়েশিয়া ও ভুটান বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে তাদের কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশন স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়ার বিষয়ে রাজি হলেও এখন চার্টার্ড ফ্লাইট পাচ্ছে না আগ্রহী দেশগুলো। ঢাকায় ফ্লাইট অপারেটকারী এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে এমিরেটস সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে এমিরেটস। উপায় না দেখে কাতার এয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে উচ্চ ভাড়া দাবি করে। থাই এয়ার সরাসরি করোনা কা-ে ফ্লাইট অপারেট করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অপর একটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে দর কষাকষি করেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি উভয়পক্ষ। তবে এ অবস্থায় অনানুষ্ঠিকভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে জানানোর পর ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে দুটো দেশ। জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোকাব্বির হোসেন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। পেলে বিবেচনা করব। কারণ বিমান সব সময় দেশ বিদেশে জাতীয় দুর্যোগে ও আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসে। এই সেদিনও তো সৌদি আরবে আটকে পড়া ওমরাহ যাত্রীদের স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকায় এনেছে। এদিকে কেন বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো কেন রাজি হচ্ছে না জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, দুনিয়াব্যাপী করোনা তা-বে যে ভীতি সঞ্চার হয়েছে, তাতে এভিয়েশন সেক্টর কি বাদ থাকতে পারে? ফ্লাইট তো মানুষেই অপারেট করে। তারাও আরও বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি জানি না এমিরেটস কেন অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যদি ভয়ের কারণে হয়ে থাকে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। আবার যদি বেশি ভাড়া আদায়ের কৌশল হয়ে থাকে সেটা তো আরও গর্হিত কাজ। তাদের উচিত এমন দুর্যোগের সময় মানবতার সেবায় অবদান রাখা। বিমান যদি রাজি হয়ে থাকে তবে সেটা হবে আরেক উদারতার ও মহান সেবার নজির। উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার করোনা বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোকাল পয়েন্ট অতিরিক্ত সচিব ডাঃ খলিলুর রহমানের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ ৬ দূত। বৈঠকে স্পেশাল ফ্লাইটের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক জানান, ইউরোপের ৯ জন নাগরিক তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু থাই এয়ার জানিয়েছে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে তারা তাদের সব ফ্লাইট বন্ধ করতে যাচ্ছে। ফলে ওই ইউরোপীয়ানদের গন্তব্যে ফেরাতে দূতাবাসগুলোকে বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দূতদ্বয় ছাড়াও ব্রিটেন, জাপান, ইতালি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত অংশ নেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালসহ ৩টি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তারা বিশেষ ফ্লাইটে নিজ নিজ দেশে ফিরতে চাইলেও সর্বাত্মক সহায়তা দেয়া হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। কোন দেশ যদি ঢাকা থেকে তাদের নাগরিকদের নিয়ে যেতে চায় তাহলে তাদের বিমান নিয়ে আসতে হবে।
×