ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় লণ্ডভণ্ড হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ২৭ মার্চ ২০২০

করোনায় লণ্ডভণ্ড হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তিনি কোথায় কোথায় গেলেন, কার কার সংস্পর্শে আসলেন, সেটি নির্ণয় করা গেলে রোগের বিস্তার ঠেকানো সহজ হয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এ জন্যই সংগ্রহ করছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ, স্মার্টফোনের লোকেশন সংক্রান্ত ডাটা, ক্রেডিট কার্ডে ক্রয়ের রেকর্ড। ইউএসও টুডে। ইতালিতে নাগরিকদের মোবাইল ফোন থেকে উৎসরিত লোকেশন সংক্রান্ত ডাটা বিশ্লেষণ করছে কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য হলো, মানুষ সরকারের লকডাউন নির্দেশ মেনে চলছে কিনা, তা পরখ করে দেখা। প্রতিদিন চলাচলের ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখছে কিনা, তাও দেখা হচ্ছে এভাবে। সরকার সম্প্রতি এই ডাটা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষই দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটাচলা করছে না। এমন বেশ কয়েকটি দেশের নজরদারি প্রচেষ্টার চিত্র উঠে এসেছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে। ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বহু পুরোনো লোকেশন ডাটা ব্যবহার করা শুরু করবে। উদ্দেশ্য কোন কোন নাগরিক নিজের অজান্তেই ভাইরাসের সংস্পর্শে চলে এসেছেন, তা নির্ণয় করা। লোকেশন ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছিল সন্ত্রাস প্রতিরোধে ব্যবহারের উদ্দেশে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কাজে একেবারে গোয়েন্দা সংস্থার ব্যবহার করা প্রযুক্তিও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর। স্বাস্থ্য ও আইন-প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই ভাইরাস ঠেকাতে যা কিছু আছে তা নিয়েই লড়াইয়ে নামতে আগ্রহী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। জননিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মধ্যে যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় তা এক্ষেত্রে নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। এখন মহামারী ঠেকাতে নজরদারি ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হলেও, পরবর্তীতে এই আড়িপাতা ও নজরদারি আরও ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হতে পারে। নাগরিক স্বাধীনতা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে তাই হয়। প্রথমে সন্ত্রাস দমনের কাজে নজরদারির কথা বলা হলেও, ধীরে ধীরে অন্য অনেক ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে আমেরিকানরা পরে টেরও পেয়েছে। ২০০১ সালের পর এখন প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে এখন আরও আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি আছে। একেবারে নিখুঁতভাবে অবস্থান শনাক্ত করা থেকে শুরু করে চেহারা শনাক্তকরণ পদ্ধতি- অনেক কিছুই নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তগত হয়। এসব প্রযুক্তি পরে অন্য কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, অভিবাসী-বিরোধী নীতিমালা তৈরিতে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্র যখন এমন ভয়াবহ ক্ষমতা ডিজিটাল উপায়ে প্রয়োগ করে, তখন সেই ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা বা প্রতিকার চাওয়ার পথ জনগণের খুব থাকে না। ম্যানহাটানভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সার্ভেইল্যান্স টেকনোলজি ওভারসাইট প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট ফক্স কান বলেন, ‘মহামারী ঠেকানোর জন্য আমরা খুব সহজেই স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এমন সব ক্ষমতা দিয়ে বসতে পারি, যেটা হয়তো আমেরিকার সামগ্রিক নাগরিক অধিকারকেই মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি এক্ষেত্রে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাম্প্রতিক একটি আইনের কথা উল্লেখ করেছেন। এই মাসে পাস হওয়া এই আইনের মাধ্যমে এই ধরনের মহামারী ও হ্যারিক্যানের মতো রাজ্যব্যাপী দুর্যোগ বা সঙ্কটের সময় গবর্নর এ্যান্ড্রু এম কুমোকে সম্পূর্ণ নির্বাহী আদেশে নিউইয়র্ক শাসন করার অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
×