ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৬ মার্চ ২০২০

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ক্রেতা না থাকায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ছে। ছুটির আমেজ বিরাজ করছে নিত্যপণ্যের বাজারে। যারা দোকানপাট চালু রেখেছেন তাদের বেচাকেনা কমে গেছে। চাহিদামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ করতে করোনাভাইরাসের ছুটির মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশের কাঁচা বাজার চালু রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজানো পণ্যসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষা করলেও বাজার প্রায় ক্রেতাশূণ্য। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাজারে যাচ্ছে না। এ কারণে নতুন করে কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যসামগ্রী এদিকে, করোনা আতঙ্কে সপ্তাহখানেক আগে থেকে ভোক্তারা বেশি করে পণ্য কিনে বাসাবাড়িতে মজুদ করে রেখেছেন। এ কারণে ছুটির সময় পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। তবে হঠাৎ করে বাজারে লেবুর চাহিদা বেড়ে গেছে। চিকিৎসকরা ভিটামিন সি ও লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভোক্তাদের। আর এ কারণে লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মানভেদে প্রতিহালী ৪০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ছুটির প্রথমদিন কাঁচা বাজারের পাশাপাশি সুপারশপ, মুদিপণ্যের দোকান, মাছ-মাংসের বাজার, ফার্মেসী, প্রয়োজনীয় এলপিজি গ্যাস ও সীমিত আকারে হোটেল- রেস্তোঁরা চালু রয়েছে। এদিন সকালের দিকে কাঁচা বাজারে কিছু ক্রেতা দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার ক্রেতাশূণ্য হয়ে পড়ে। ভিড় এড়াতে বাজারে পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। এতে কোন কোন বাজারে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ভোক্তাদের বচসা ও কথাকাটাকাটি করতেও দেখা গেছে। তবে এসব সতর্ক ব্যবস্থা ভোক্তাদের স্বার্থে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের মতে, করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের জন্য এখন এক আতঙ্কের নাম। এ অবস্থায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কাঁচা বাজারের পাশাপাশি সুপারশপ আগোরা, মীনাবাজার ও বিগবাজারসহ অন্যান্য চেইনসপ চালু রয়ে রয়েছে ঢাকায়। উচ্চ ও মধ্যবিত্তের ক্রেতারা এসব জায়গা থেকে কেনাকাটা করছেন। তবে ছুটির প্রথমদিনে সুপারসপগুলোতেও ভিড় দেখা যায়নি। সুপারসপগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যাক্সোসল দিয়ে ভাইরাসমুক্ত হয়ে ক্রেতারা সুপারসপে প্রবেশ করছেন। এছাড়া ক্রেতারাও সর্তক হওয়ায় মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। এদিকে, কাঁচাবাজার ও ফার্মেসীগুলো খোলা রাখা হলেও বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৫-২০ দিনের বাজার করে নিয়েছেন নগরবাসী। আর এ কারণে এখন বাজারে ক্রেতা নেই। কাপ্তান বাজারের চাল বিক্রেতা জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এককেজি চালও বিক্রি হয়নি। অথচ তিনদিন আগেও সবাই বেশি বেশি করে চাল কিনেছেন। যে ক্রেতা ১০ কেজি করে কিনতেন তিনিই এক বস্তা চাল নিয়ে বাসায় মজুদ করেছেন। আর এ কারণে বাজারে এখন চালের চাহিদা নেই। একই অবস্থা বিরাজ করছে মাছ-মাংস ও মুরগির বাজারে। বেশিরভাগ মুরগি ও মাংস বিক্রেতা বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ছুটি কাটাচ্ছেন। যারা দোকান পাট চালু রেখেছেন, তাদের বেচাবিক্রিও অনেক কম। ফকিরাপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা জয়নাল শেখ বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। তাই মুরগিও বিক্রি হচ্ছে না। ছুটির আগে সবাই প্রয়োজনমতো কেনাকাটা করেছেন। এখন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাজারে আসছে না। এছাড়া নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত, মৌলভী বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার ও কাওরান বাজার খোলা রয়েছে। সারাদেশে থেকে শাক-সবজি, চাল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য সামগ্রী ঢাকায় আনা হচ্ছে। তবে চাহিদা কম থাকায় আগের চেয়ে পণ্য আনা কমিয়ে দিয়েছেন। খুচরা বাজারে শাক-সবজিসহ অন্যান্য জিনিস পত্রের দাম আগের মত থাকলেও বেড়েছে লেবুর দাম। মুগদা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী বাবুল আহমেদ বলেন, লেবুর চাহিদা সব থেকে বেশি। আগে যিনি এক হালি লেবু নিতেন, এখন তিনি এক ডজন করে লেবু কিনছেন। পাইকারি বাজার থেকেও অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, শশা ৩০-৫০ টাকা কেজি, টমেটো ৪০ টাকা, করল্লা ৫০-৮০ টাকা ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুদিপণ্য সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬০-৫৮, মাঝারিমানের পাইজাম ও লতা ৪৫-৫৫ এবং মোটা স্বর্না ও চায়না ইরি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া ডিম হালী ৩৮-৩৮, চিনি ৬৫-৭০, এবং ডাল ৬৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×