ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমিই সর্বকালের সেরা ॥ পেলে

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২৬ মার্চ ২০২০

আমিই সর্বকালের সেরা ॥ পেলে

জাহিদুল আলম জয় ॥ সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এ নিয়ে মতভেদ আছে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার বিবেচনায় সেরা ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে। তবে দর্শকদের ভোটে সেরা আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। তবে কালো মানিক পেলে অনেকবার বলেছেন, তিনিই সর্বকালের সেরা। এবার আরও একবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। বর্তমান সময়ে ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কে? লিওনেল মেসি নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো? কিংবদন্তি পেলের মতে নামটি পর্তুগাল অধিনায়ক রোনাল্ডো। তবে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের আসনে নিজেকেই দেখেন পেলে। এক দশক ধরে ফুটবল বিশ্বে আধিপত্য ধরে রেখেছেন মেসি ও রোনাল্ডো। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন তারকা মেসি ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন রেকর্ড ছয়বার। আর জুভেন্টাস তারকা রোনাল্ডো বর্ষসেরা হয়েছেন পাঁচবার। দু’জনের অর্জনের তালিকায় আছে আরও অনেক ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্য। তবে মেসি নয় রোনাল্ডোকেই এগিয়ে রেখেছেন পেলে। ৭৯ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তারকা সাক্ষাতকারে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় রোনাল্ডো। আমার মনে হয় সেই সেরা। কারণ সে অনেক বেশি ধারাবাহিক। তবে অবশ্যই আপনি মেসিকে ভুলে যেতে পারেন না। কিন্তু সে স্ট্রাইকার নয়। তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী পেলের মতে, মেসি-রোনাল্ডোর আগেও কিংবদন্তি অনেক খেলোয়াড় ছিলেন। তবে সবার সঙ্গে তুলনায় নিজেকেই সর্বকালের সেরার তালিকায় শীর্ষে রাখছেন। পেলে বলেন, এই প্রশ্নের জবাব দেয়া মুশকিল। আমরা জিকো, রোনাল্ডিনহো ও রোনাল্ডোর (ব্রাজিলের রোনাল্ডো) কথা ভুলে যেতে পারি না। ইউরোপে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ও ইয়োহান ক্রুইফ ছিল। এখন এটি আমার দোষ নয়। কিন্তু আমি মনে করি, পেলে তাদের সবার চেয়ে ভালো ছিল। তবে সর্বকালের সেরা কে সেই প্রশ্ন এলেই তেতে উঠেন দুজনের সঙ্গে পুরা বিশ্ব। পেলে কিছু বললেই করা ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখান ম্যারাডোনা আবার ম্যারাডোনার জবাবে গা জ্বলানো কথা বলেন পেলে। বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে অভিষেক হয় পেলের। আর বাকিটা ইতিহাস। পেলে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের জয়ের নায়ক। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে করেন হ্যাটট্রিক। আর ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে দুই গোল। ১৯৬২ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচেই চোট পান পেলে। কিন্তু বিশ্বকাপ ধরে রাখে সেলেসাওরা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জঘন্য ফাউলের শিকার হয়ে বেশি কিছু করতে পারেননি কালো মানিক খ্যাত পেলে। আবার ১৯৭০ বিশ্বকাপে অসাধারণ পেলেকে পায় সেলেসাওরা। সেবার নিজে চার গোল করে অবদান রাখেন ব্রাজিলের বেশিরভাগ গোলেও। পেলের জন্মের ২০ বছর পর ১৯৬০ সালে পৃথিবীতে আসেন দিয়াগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনা ফ্রাঙ্কো। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ডাক পান ১৬ বছর বয়সে। কিন্তু ঘরের মাঠে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ১৭ বয়সী ম্যারাডোনাকে দলে না রেখে সমালোচিত হন ওই সময়ের কোচ। ১৯৮২ বিশ্বকাপ অভিষেকে নিজের নামের প্রতি তেমন সুবিচার করতে পারেননি ম্যারাডোনা। তবে মেক্সিকোতে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে অন্য এক ম্যারাডোনাকে পায় আর্জেন্টিনা। তার একক নৈপুণ্যে মাঝারি মানের দলকে চ্যাম্পিয়ন করান ম্যারাডোনা। রূপকথার মতো এক বিশ্বকাপ কাটান আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। সেবার আর্জেন্টিনা দলের করা ১৪টি গোলের ১০টি গোলই ছিল প্লেমেকার ম্যারাডোনার অবদান। নিজে করেছেন পাঁচ গোল আর সতীত্বের দিয়ে করিয়েছেন আরও পাঁচ গোল। সেই আসরে সেরা খেলোয়াড়ও হন ম্যারাডোনা। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার করা দুটি গোল হয়ে আছে চিরকালের আলোচনার উৎস। হ্যান্ড অব গড গোলের পর নিজের অর্ধ থেকে রাইট উইং ধরে চিতার গতিতে পাঁচ ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। যেটি পেয়েছে শতাব্দীর সেরা গোলেল স্বীকৃতি। পরের আসরেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। জাতীয় দলের অর্জনের দিকে তাকালে ম্যারাডোনার চেয়েও অবশ্য পেলের গোল সংখ্যা ঈর্ষণীয়। চারটি বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে ১২টি গোল করেছেন পেলে। তিনি হয়ে আছেন তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ফুটবলার। সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্বকাপ খেলা গোল ও হ্যাটট্রিক করা, ফাইনালে গোল করা এবং বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড পেলের দখলে। ১৩৬৩ পেশাদার ম্যাচে তিনি গোল করছেন ১২৮১টি। আর পেলের হ্যাটট্রিক ৯২টি। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে করছেন ৭৭ গোল। ম্যারাডোনা বেশিরভাগ সময় জাতীয় দলে খেলেছে প্লেমেকার এর ভূমিকায়। আর্জেন্টাইন জার্সিতে ৯১ ম্যাচ খেলে ৩৪ গোল করেছেন ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছেন ২১টি। গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৮টি করে। তিন বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন ১৬টি ম্যাচ। যে রেকর্ড আর কারও নেই।
×