ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, নতুন কোন রোগী নেই

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, নতুন কোন রোগী নেই

নিখিল মানখিন ॥ দেশে আরও এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫। দেশে মৃত্যুর হার ১৩ শতাংশ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭ জন। অর্থাৎ সুস্থ হওয়ার হার ১৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জনই রয়ে গেছেন। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রয়েছে ৪৭ জন। দেশে আরও সাতটি জায়গায় করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকটি হটলাইনে করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে ৪৯ হাজার। বর্তমানে সারাদেশে হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ৩০ হাজার ৪২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ১১৮ জন, সমুদ্রবন্দরসমূহে ২৩৬ জন, স্থলবন্দরসমূহ দিয়ে ৭৭৮ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। মোট সংগৃহীত ৩ লাখ ৫৭ হাজার পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) মধ্যে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৬৬ হাজার পিপিই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী অনুরোধ উপেক্ষা করে কোয়ারেন্টাইন মানছেন না বিদেশফেরতদের বড় অংশ। প্রথম দিকে কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি বিদেশফেরতদের ইচ্ছা ও আন্তরিকতার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিদেশফেরতদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ এবং উদাসীনতার কারণে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে সরকার। সরকারী নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শুরু করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ। অনুরোধ ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করার পরও বিদেশফেরতদের অনেকে এখনও আত্মগোপনে রয়ে গেছেন। তালিকা তৈরি করে কোয়ারেন্টাইনের বাইরে থাকা এসব বিদেশফেরতের খুঁজে বেড়াচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি ও ব্যক্তিবর্গ। দেশব্যাপী করোনা প্রতিরোধে নানা কর্মসূচী গ্রহণেও আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারছে না সাধারণ মানুষ। বিদেশফেরতরাই এখন পর্যন্ত দেশে করোনা রোগী সংক্রমণের একমাত্র বাহক এবং তাদের বড় অংশ কোয়ারেন্টাইনের বাইরে থাকায় দেশবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রধান কারণ। আইইডিসিআরের ব্রিফিং করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। দেশের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, দেশে আরও এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দেশে এই ভাইরাসে এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কোন রোগী শনাক্ত হননি। ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সকালে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর আত্মীয় ছিলেন। তিনি ওই করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তি গত ১৮ মার্চ আক্রান্ত হন। এরপর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই ব্যক্তির অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ মার্চ তাঁকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তির ডায়াবেটিস ছিল। হাইপারটেনশনও ছিল। আইইডিসিআর পরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে আরও দুজন বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মোট সাতজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হওয়া ৭ জনকে বাদ দিলে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মোট ২৭ জন করোনা রোগী। আরও সাতটি জায়গায় করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে ॥ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না বলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথ লক ডাউন করার আগেই পহেলা মার্চ থেকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত যত বাংলাদেশী বিদেশ থেকে ফিরেছেন-তার মধ্যে অতি নগণ্যসংখ্যককে পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হটলাইনে করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে ৪৯ হাজার -স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ বুধবার পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নে ৪৪ হাজার ২২টি, ৩৩৩ নম্বরে ২৬২৯টি ও আইইডিসিআর’র নম্বরে ২৭১২টি অর্থাৎ মোট ৪৯ হাজার ৩৬৩টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ১১৮ জন, সমুদ্রবন্দরসমূহে ২৩৬ জন, স্থলবন্দরসমূহে ৭৭৮ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬২১৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে এবং কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন ২৯৭৭ জন। বর্তমানে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩০ হাজার ২৮৫ জন এবং এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে মোট ৪৩ হাজার ১০২ জনকে। হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য কোয়ারেন্টাইনে বর্তমানে রয়েছে মোট ৩০ হাজার ৪২৩ জন। কমিউনিটি ট্রন্সমিশন বলা যাবে না -আইইডিসিআর ॥ বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রন্সমিশন সীমিত আকারে হতে পারে বলে ধারণা করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। বুধবার অন লাইন ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দুটি জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমণের উৎস এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা দুটি ক্ষেত্রেই তদন্ত করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটার সংক্রমণের উৎস জানা সম্ভব হয়নি। সেদিক থেকে সীমিত পরিসরে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যাবে না। আগামী দেড় সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ সময়’ ॥ আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেড় সপ্তাহ করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ সময়’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পহেলা মার্চ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে এসেও কোয়ারেন্টাইনের বাইরে থাকা এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে মাথায় রেখেই নিশ্চিদ্র করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম গড়ে তুলছে সরকার।
×