ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্লাভস উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে

প্রকাশিত: ১০:০৬, ২৬ মার্চ ২০২০

গ্লাভস উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে বিশ্বে এখন হ্যান্ড গ্লাভসসহ এই ধরনের জিনিসের হাহাকার পড়ে গেছে। ঠিক এই সময় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হ্যান্ডগ্লোভস প্রস্তুতকারী কোম্পানির অর্ধেক কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়াভিত্তিক এই কোম্পানিটির উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে এসেছে। মালয়েশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যান্ডগ্লোভস প্রস্তুত ও সরবরাহকারী দেশ। খবর এপির। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় কাজ করা ডাক্তাররা প্রথমেই এই হ্যান্ডগ্লোভস পরে রোগীর সেবা দেয়া শুরু করেন। কিন্তু কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে এই হ্যান্ডগ্লোভসের যোগানে টান পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ জাতীয় পণ্যের হাহাকার পড়েছে। মালয়েশিয়ার এই জাতীয় কোম্পানিতে বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রচ- গরম ও তাপপূর্ণ পরিবেশ উপেক্ষা করে তাদের কাজ করতে হয়। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে অসদাচারণের বহু অভিযোগ রয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়া সরকার সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এরপর একে একে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এসব হ্যান্ডগ্লোভসসহ অন্যান্য মেডিক্যাল দ্রব্য তৈরির প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা রাখতে বলা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে এ কোম্পানি তাদের অর্ধেক জনবল কমিয়ে দিয়েছে। মালয়েশীয় সরকার সাফ জানিয়েছে, উৎপাদিত দ্রব্য দেশের চাহিদা মেটানোর পর রফতানি করতে হবে। কিন্তু মালয়েশীয় রাবার গ্লোভ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করেই এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ডেনিস লো বলেন, এভাবে হ্যান্ডগ্লোভসসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হলে তা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা বিশ্বের অন্তত ১৯০ দেশ থেকে হ্যান্ডগ্লোভসসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্রয়াদেশ পেয়েছি। বিশ্বের এসব দেশ কোটি কোটি হ্যান্ডগ্লোভস চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনও এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ভাইরাসের কারণে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক এসব চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন কমিয়েছে। চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস মহামারী আরও খারাপ রূপ নেবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। শহরের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এর মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমরা যদি আরও ভেন্টিলেটর না পাই, লোকজন মরতে শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্য ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস প্রকোপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তার অর্ধেকই এই অঙ্গরাজ্যের। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে চার শ’য়ের মতো। সারাবিশ্বে আক্রান্তের তুলনায় নিউইয়র্কে আক্রান্তের হার পাঁচ শতাংশ। শনিবার অঙ্গরাজ্যটির গবর্নর এন্ড্রু কোমো জানিয়েছেন সেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র একদিনেই এই সংখ্যা বেড়েছে চার হাজার। ব্ল্যাসিও বলেছেন, ‘সকল আমেরিকানের সত্য জানার অধিকার আছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং আসল কথা হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন যার ফলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কয়েক শ’ কোটি ডলারের সহায়তা পাবে। তারপরেও ব্ল্যাসিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাসটি মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ‘আমাকে বলতেই হবে : প্রেসিডেন্ট যদি ব্যবস্থা না নেন, লোকজনকে মরতে হবে, তারা হয়ত বেঁচে থাকত।’ ১৯৩০’র দশকের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বড় এক সঙ্কট তৈরি হতে যাচ্ছে।’
×