ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্থিরতা নিয়ে মালয়েশিয়ার নয়া সরকারের যাত্রা

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৫ মার্চ ২০২০

অস্থিরতা নিয়ে মালয়েশিয়ার নয়া সরকারের যাত্রা

মালয়েশিয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মাহাথির মোহম্মদ সরকারের পতন ঘটেছে এবং মহিউদ্দীন ইয়াসিনের নেতৃত্বে নতুন কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সপ্তাহখানেক ধরে দেশে নজিরবিহীন টালমাটাল অবস্থা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করার পর এই পটপরিবর্তন ঘটল। প্রায় দু’বছর আগে এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল উমনো উৎখাত হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইয়াসির সেই উমনোর এক নেতা ছিলেন। ২০১৬ সালে উমনো থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি রাজনৈতিক হেভিওয়েট মাহাথির মোহম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এক হয়ে পাকাতান হারাপান (পিএইচ) নামে একটি বহুদলীয় ও বহুজাতিসত্তার দল গঠন করেন। এই দলটিই উমনোর নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বারিসান ন্যাশনাল (বিএন)-এর দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের রুদ্ররোষ গড়ে তুলে শাসক দলের পতন ঘটায়। কিন্তু সম্প্রতি কিছু নাটকীয় ঘটনায় দেশে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনে ধস নামে। একটি অঙ্গ দল দ্বিখ-িত হয়ে যায়। অপর অঙ্গ দল বারসাতু কোয়ালিশন থেকে একেবারেই বের হয়ে যায়। ফলে সপ্তাহকাল ধরে চলে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা। এর মধ্যে মহিউদ্দীন ইয়াসির ৩০ জন দলীয় এমপিকে ভাগিয়ে নিয়ে এবং উমনো ও অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ‘পেরিকাতান ন্যাশনাল’ বা জাতীয় ঐক্যজোট গঠন করেন। ১ মার্চ তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পেরিকাতান ন্যাশনালে অতি পরিচিত কিছু মুখ আছে। এর সবচেয়ে বড় শরিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা উমনো। এ ছাড়া আছে ইসলামী সংগঠন পিএএস এবং বারসাতুর প্রায় পুরোটা। সাবাওয়াক প্রদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন জোটের সুসম্পর্ক আছে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য এই দলগুলোর সমর্থন পারাকান ন্যাশনালের প্রয়োজন। কোয়ালিশনের শরিক দলগুলোর প্রত্যেকের নিজস্ব প্লাটফর্ম ও এজেন্ডা আছে। মালয়ীদের স্বার্থ রক্ষাই সবার অভিন্ন লক্ষ্য। তবে দেশে মালয়ী ছাড়াও রয়েছে চীনা, ভারতীয় শিখ, আইবান, কাদারজান, দুশান, মুরুত ও অন্যান্য জাতিসত্তার লোক। ইয়াসিন নিজেকে বিভিন্ন জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করেছেন। তাতে কতদূর সফল হবেন তা বলা মুশকিল। তা ছাড়া পেরিকাতান ন্যাশনালকে একত্রে ধরে রাখা ইয়াসিনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। মূল শরিক দল উমনোর বেশ কিছু ঝামেলা আছে। এর সভাপতি আহমদ জাহিদ হামিদি উপপ্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু দান হিসেবে প্রদত্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই নাজিব রাজাকের প্রতি সমর্থন উমনোর অভ্যন্তরে এখনও প্রবল। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও বেশ কিছু মামলা ঝুলছে। নিজে কোন অন্যায় করার কথা অস্বীকার করে নাজিব আশা প্রকাশ করেন যে নতুন সরকারের আমলে তিনি সুবিচার পাবেন। তবে মামলায় সরকার পক্ষ নাজিবের প্রতি নমনীয় হচ্ছে এমন কোন আলামত দেখা গেলেই ভোটাররা তা অত্যন্ত বিরূপ মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করবে। নতুন মন্ত্রীদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে এটা তার মাত্র একটি। তারপর আছে করোনা মহামারীর হুমকি যা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় গুটিগুটি পায়ে হাজির হয়েছে। এই মহামারী অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনবে। ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থরতম গতিতে হয়েছে। চলতি প্রান্তিকে অবস্থা আরও খারাপ হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা দরিদ্রতম ৪০ শতাংশ নাগরিককে সাহায্য করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনাও সরকারের জন্য একই প্রয়োজন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রিঙ্গিতের দাম পড়ে গেছে। এর ফলে মাসে, ডেইরি ও অন্যান্য আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তরুণ সমাজের বেকারত্ব সরকারের জন্য আরেক মস্ত মাথাব্যথার ব্যাপার। সার্বিক বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশ হলেও ১৫ থেকে ২৪ বয়সীদের মধ্যে এই হার ১০ শতাংশের বেশি। পেরিকাতান ন্যাশনালের আবির্ভাব ঘটেছে মাত্র অল্প ক’দিন আগে। এর কোন মেনিফেস্টো নেই। শরিক দলগুলো দেশের সমস্যা মোকাবেলার যে কোন নীতির প্রশ্নে একমত হয়েছে। তবে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেনি। এক পর্যায়ে এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেবেই। রুগ্ন অর্থনীতি অথচ রাজস্ব হ্রাস পাওয়ার মধ্যে এই সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই যাত্রাপথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয় সে কথা বিশেষজ্ঞ মহল এক বাক্যেই স্বীকার করেছেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×