ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি দিচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২৫ মার্চ ২০২০

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি দিচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা

এম শাহজাহান ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ঋণদানকারী আন্তর্জাতিক তিন সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার তহবিল পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি ডলার, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ ৭৫ কোটি ডলার এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি থেকে ১০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত করেছে সরকার। অর্থাৎ তিন সংস্থার কাছ থেকে সব মিলিয়ে ৯৫ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তবে করোনার প্রভাবে আর্থিকখাতে যে পরিমাণ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় সরকারের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি। আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধানের সঙ্গে দ্রুত টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। পুরো বৈঠকটি টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে করা হবে। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন দেশের প্রতিটি নাগরিক। অপ্রতুল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, ক্ষুদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়া, আমদানি-রফতানিতে বিপর্যয়, রেমিটেন্সে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির সবগুলো সূচক এখন নি¤œমুখী। বৈশ্বিক এ সমস্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় কঠিন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। করোনা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, ওষুধ, কিট কেনা ও হাসপাতাল নির্মাণের মতো কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিতখাত থেকে দুদফায় ২৫০ কোটি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়েল অনুকূলে আরও ৫০ কোটি অর্থাৎ ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু যেভাবে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এই অর্থদিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করোনা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, করোনা মোকাবেলায় যত টাকার প্রয়োজন হোক তা দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে টাকার কোন সঙ্কট নেই। প্রয়োজনে চীনের মতো দ্রুত সময়ে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণেরও ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনবহুল বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রী দাতা সংস্থাগুলো বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির কাছে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা চাবে। ঋণ হিসেবে না দিয়ে অনুদান হিসেবে দিলে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে বলে সংস্থাগুলোকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন অর্থমন্ত্রী। আজ সকাল ৯ টায় বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কার্যালয় থেকে সরাসরি তার সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে যুক্ত হচ্ছেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এবং কেন অর্থের প্রয়োজন সেই বিষয়টি তুলে ধরবেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তাদের সেবা কার্যক্রম বাড়াতে বরাদ্দ চাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। সামনে নতুন বাজেট আসছে। অন্যদিকে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা যে প্যাকেজ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ সহজশর্তের ঋণ পাবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে হিসেবে করে দেখা গেছে সেই অর্থ চাহিদার তুলনায় বেশি নয়। এ কারণে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে দাতাসংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দাতা সংস্থার সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রীর আজকের বৈঠকে এসব বিষয়ের অনেক অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি। জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ঘোষিত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বৈশ্বিক সহযোগিতা প্যাকেজ থেকে ১০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোঃ শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠানো বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের এক চিঠিতে বাংলাদেশের জন্য ১০ কোটি ডলারের প্যাকেজের কথা জানানো হয়েছে। এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে আইএমএফ। এই অর্থের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার পাবে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। এছাড়া করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এডিবি। শনিবার সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান ও কান্ট্রি ডাইরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ইতোমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, করোনাসহ যেকোন উদ্বেগজনক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দিবে এডিবি। সংস্থাটি তার সদস্য দেশগুলোর করোনা মোকাবেলায় ৬৫০ কোটি ডলার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে দেয়া হবে।
×